Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এরাই আমাদের জনপ্রিতিনিধি!

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ‘নৈতিকতার ফাঁসি’ লেখাটি ইনকিলাবে প্রকাশের ক’দিন পর অনুষ্ঠিত হয় জেলা পরিষদ নির্বাচন। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক ফিল মার্শাল আইয়ুর খানের মৌলিক গণতন্ত্রের আদলেই হলো এই নির্বাচন। আইন করে দেশে প্রথমবারের মতো এই ভোট করা হলেও দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে সংবিধান লঙ্ঘন করে। ক্ষমতাসীনরা সংবিধান বিশেষজ্ঞদের এ অভিযোগ কানে না তুললেও প্রশ্ন এসে যায় নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জেলা পরিষদের যে চেয়ারম্যান পেলাম তারা জনপ্রতিনিধি না টাকা প্রতিনিধি?
সংবিধানে রয়েছে ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। জনগণ সরাসরি ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ জেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের ভূমিকা ছিল গৌন। জনগণের সরাসরি ভোটে ‘জনপ্রতিনিধি’ নির্বাচন করার যে কথা সংবিধানে লিপিবদ্ধ রয়েছে তার প্রতিফলন কী জেলা পরিষদ নির্বাচনে হয়েছে? নাকি টাকার খেলা হয়েছে? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২২ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। যে দেশে নির্বাচনকে মানুষ ‘উৎসব’ মনে করে সে দেশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা কী বাস্তবচিত্র? ২২ জেলায় এই ২২ চেয়ারম্যানের ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ নির্বাচিত হওয়ার পেছনে পর্দার আড়ালে কত কোটি টাকা খরচ করেছেন তা দেশবাসী জানতে পারেনি। তবে যেসব জেলায় ভোট হয়েছে সেসব জেলায় ভোট নিতে টাকার খেলার খবর মানুষ পেয়েছে।
নির্বাচনের আগে টাকা আকাশে উড়েছে। নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা কে কত কোটি টাকা ব্যয় করেছেন তা দেশবাসী জানতে পারেনি। ভোটের আগে বাতাসে খবর উড়েছে একজন ভোটারকে ৩ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হয়তো সে টাকা সুদেমূলে তুলে নেবেন। এ জন্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত (!) চেয়ারম্যানেরা নীরব। কিন্তু যারা পরাচিত হন তারা নির্বাচনের পর ভোটের সংখ্যা দেখে বুঝতে পারেন যাদের টাকা দিয়েছেন তারা ভোট দেননি। এ জন্য পরাজিত ওই প্রার্থীরা ভোটের পর লগ্নিকরা টাকা ফেরত নিচ্ছেন। পরাজিত প্রার্থীদের এই টাকা ফেরত নেয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় লঙ্কাকা-।
বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর বের হয়েছে জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর খুলনার পাইকগাছায় পরাজিত সদস্য প্রার্থী যুবলীগ নেতা ভোটারদের কাছ থেকে তার দেয়া নগদ টাকা ও ডিনার সেট ফেরত নিচ্ছেন। বগুড়ায় যুগলীগ নেতা টাকা ফেরত নিয়েছেন। টাকা নিয়ে ভোট না দেয়ায় চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করেছেন সংরক্ষিত আসনের এক পরাজিত প্রার্থী। বরিশালেও ভোটের জন্য দেয়া টাকা আদায়ে মাঠে নেমেছেন পরাজিত প্রার্থীরা। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে প্রার্থীরা টাকা ফেরত নিয়েছেন। নাগেশ্বরী উপজেলায় ভিতরবন্দ, হাসনাবাদ, নেওয়াশী, রামখানা ও সস্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন ভোটারকে প্রার্থী আমিনুল ইসলাম প্রত্যেক ভোটারকে ২০ হাজার করে টাকা দেন। পরাজিত হওয়ার পর তিনি টাকা ফেরত নেন। ভিতরবন্দ ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম খন্দকার, ইউপি সদস্য নুর ইসলাম, ইউনুছ আলী, মাইনউদ্দিন, মুকুল মিয়া, রুহুল আমিন, হাবিবুল ইসলাম, ফেরদৌস আলম ও জিয়াউর রহমান মিডিয়াকে জানান তারা টাকা ফেরত দিয়েছেন। তাদের দাবি ভোটের আগে প্রার্থী জোর করে দাওয়াত খাইয়ে টাকা দিয়েছে। কিন্তু পরাজিত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ভোট দিতে চেয়ে টাকা নিয়েছে; ভোট না দেয়ায় টাকা ফেরত নিচ্ছি। মেহেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে ভোট কেনা হয়। টাকা দেয়ার পরও পরাজিত হয়েছেন এমন চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা টাকা ফেরত নিতে মাঠে নেমেছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া একজন চেয়ারম্যান স্বীকার করে বলেন, নির্বাচনের আগে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করে দু’জন ইউপি চেয়ারম্যান ও অর্ধশতাধিক মেম্বার কয়েক লাখ টাকা নেন। কিন্তু তারা ভোট না দিয়ে বেইমানি করেছেন। এখন আমার সমর্থকরা ক্ষোভ থেকেই টাকা ফেরত চাচ্ছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি জেলায় প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন হলো যারা টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার হয়েছেন তারা কী জনগণের সেবা করবেন? নাকি ভোট কিনতে খরচ করা টাকা আগে উঠাবেন? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভোট হওয়ায় সবাই প্রত্যাশা করছেন দেশে রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ কেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু বছরের শেষ দিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেনাবেচা এবং ভোটের পর পরাজিত প্রার্থীদের টাকা ফেরত নেয়ার দৃশ্য কী জনগণের ভোটের অধিকারকে উপহাস করা নয়? যারা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ভোট ক্রয় করে জনপ্রতিনিধি হন তারা কী সত্যিই জনদরদী নেতা হতে পারেন? বাস্তবতা হলো এরাই আমাদের নেতা।



 

Show all comments
  • সৌরভ ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:১০ পিএম says : 0
    এই লেখায় অনেক তিক্ত বাস্তবতা ফুটে উঠেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • জামিল ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:১১ পিএম says : 0
    জনগণ এখন খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Asma ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৫৭ পিএম says : 0
    asa kori tara ai question gulo answer diben
    Total Reply(0) Reply
  • Biplob ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৫৮ পিএম says : 0
    arokom sotto bolar lok akhon khub kom ase. thanks to the writer
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনপ্রিতিনিধি

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ