Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কিলিং মিশনের মূল ভূমিকায় ছিল ৫ জন

প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৩ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

মোঃ ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ থেকে : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ৪ শিশুহত্যার দায় স্বীকার করে গতকাল সন্ধ্যায় গ্রেফতারকৃত একজন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ খন্দকার এর আদালতে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া ঘাতক হচ্ছেÑ একই গ্রামের গ্রেফতারকৃত আব্দুল আলী বাগালের পুত্র রুবেল মিয়া। বুধবার তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র এক প্রেসব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বর্ণনা দেন।
সূত্রমতে এ হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নেয় ৬ ঘাতক । এর মধ্যে ৫ জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। রুবেল ছাড়া গ্রেফতারকৃত অপর ৪ জন হচ্ছে- আব্দুল আলী বাগাল, তার পুত্র জুয়েল মিয়া, একই গ্রামের আরজু মিয়া ও বশির মিয়া। ঘটনার সাথে জড়িত সিএনজি চালক বাচ্চু মিয়া লাশ উদ্ধারের দিন বিকেল পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান করলেও বিকেল থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন তাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। তবে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
যে কারণে হত্যার করা হয়
সুন্দ্রাটিকি গ্রামে ৮টি পঞ্চায়েত রয়েছে। পঞ্চায়েতের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলে প্রকাশ্য ও মৌন দ্বন্দ্ব। বাগান চকিদার আব্দুল আলী বাগাল চায় এককভাবে গ্রামের কর্তৃত্ব করায়ত্ব করতে। ইতিপূর্বে বাগান শ্রমিকদের সাথে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষে ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে খরচ মেটাতে গ্রামের প্রায় ২০ লাখ টাকার জায়গা বিক্রি করা হয়। বাগানের সাথে সংঘর্ষের ঘটনার সময় ওই টাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে গ্রামের মানুষকে খাওয়ানো হয়। বাকী টাকার প্রতি লোভ করে বাগান কর্মচারী পঞ্চায়েত সর্দার আব্দুল আলী বাগাল। ইতিমধ্যে আব্দুল আলী বাগাল লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বাকী টাকাগুলোও তার চাই। গ্রামের বড়ই গাছের ডাল কাটা নিয়ে প্রায় ১ মাস পূর্বে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকেই তারা এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনা নেয়। এ কারণে শিশুদের হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পনা করে আব্দুল আলী বাগাল ও তার সহযোগিরা।
যেভাবে হত্যা করা হয় ঃ
গত ১২ ফেব্রুয়ারী বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর গ্রামে ফুটবল খেলা দেখে বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিল। এ সময় একই গ্রামের সিএনজি চালক বাচ্চু তার সিএনজিতে তুলে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মোঃ ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার দুই চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০)কে নিয়ে যায় তার গাড়ির গ্যারেজে। তাদের সিএনজিতে তুলে নিয়ে যাবার সময় একই গ্রামের আহাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি দেখেছে বলে নিহত এক শিশুর পিতা আব্দাল মিয়া জানান। অবশ্য আহাদ মিয়া পরে আর স্বীকার করছে না। পরে ঘাতকরা চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে তাদেরকে অজ্ঞান করে গ্যারেজে ফেলে রাখে। শুক্রবার রাতেই শ্বাসরোধে তাদের হত্যা করে। শুক্রবার মাঝ রাতে বস্তাবন্দি করে নিহত ৪ শিশুকে ওই স্থানে মাটি চাপা দেয়।
সূত্র জানায়, যে স্থানটিতে মাটি চাপা দেয়া হয় সেই স্থানে বালু উত্তোলনের তদারকি করতো সেলিম নামে এক ব্যক্তি। সেলিম হচ্ছে ঘাতক আব্দুল আলী বাগালের প্রতিপক্ষ পঞ্চায়েতের লোক। তাই সেলিমসহ প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসানোর জন্যই লাশগুলো পুতে রাখার জন্য ওই স্থানটি নির্বাচন করে।
এদিকে খেলা শেষে বাড়ি ফিরে না আসায় আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে বাহুবল থানায় একটি জিডি এবং গত মঙ্গলবার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। নিখোঁজের ঘটনার ৫ দিন পর গত বুধবার সকালে গ্রামের পার্শ্ববর্তী ইছাবিল বালু মহালে মাটি নীচে পুতে রাখা একশিশুর হাত দেখতে পায় মাটি কাটা শ্রমিকরা। পরে নিখোঁজ শিশুদের বাড়িতে খবর দিলে লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এসময় খবর পেয়ে বাহুবল তানা পুলিশ, র‌্যাব-৯, ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি খুঁড়ে পৃথক গর্তে রাখা ৪ শিশুর লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে গতকাল এদিকে অপহরণের সময় ৪ শিশুকে বহণকারী সিএনজি অটোরিক্সা (হবিগঞ্জ-থ ১১-৩৬০৮)টি একই গ্রামের সিএনজি চালক বাচ্চু মিয়ার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাহুবল থানার ওসি মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে সিএনজিটি উদ্ধার করা হয়।
সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পরিদর্শন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি বলেন, ৪ শিশুহত্যায় জড়িতদের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি নিহত প্রত্যেক শিশুর পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন।
সুন্দ্রাটিকিতে মেহের আফরোজ চুমকি
নিহত ৪ শিশুর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও সমবেদনা জানাতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি গতকাল বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে আসেন। নিহত ৪ শিশুর পিতা-মাতার সাথে সাক্ষাৎকালে শিমুর মা মন্ত্রীকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তাদের কান্না আর থাানো যাচ্ছিল না। এ সময় মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, তার সাথে থাকা নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমসহ অন্যান্যরাও চোখেল জল আটকে রাখতে পারেননি। এ সময় মন্ত্রী নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না দেন। পরে উপস্থিত শত শত উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ৪ শিশুকে নির্মমভাবে হত্যার সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। অপরাধীদের বিচার করা হবে বিশেষ ট্রাব্যুনালে। তিনি বলেন, এদেশে এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। দেশে লোভলালসা বেড়ে গেছে। ক্রিমিনালদের নিকট মানবতা বলতে কিছু নেই। তারা বিভিন্ন পন্থায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ মানুষের শান্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু একা পুলিশের পক্ষে শান্তিশৃংখলা বজায় রাখা সম্ভব নয়। কারণ দেশে গড়ে ১২শ লোকের জন্য ১ জন পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি না হলে সমাজ থেকে অপরাধ দূর করা কঠিন হয়ে পড়বে। যারা অন্যায় করে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকা-সহ এর পেছনের তথ্য বের করা হবে। তবে কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানী করা হবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিশুহত্যার বেদনায় ভুক্তভোগী। প্রধানমন্ত্রীর ভাই শিশু রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো এ হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার না করে গলায় ফুলের মালামালা পড়িয়ে দেয়। যে কারণে এদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। তিনি বলেন, ৪ শিশু নিখোজের পর উদ্ধারে প্রশাসনের কোন গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় বক্তব্য রাখেন নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোতচ্ছিল মিয়া।
এদিকে ৪ শিশু হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার গ্রেফতারকৃত আব্দুল আলী বাগালের পুত্র রুবেল মিয়া, একই গ্রামের আরজু মিয়া ও বশির মিয়াকে গতকাল শুক্রবার কোর্টে হাজির করা হয়।
প্রকাশ, গত ১০ ফেব্রুয়ারী বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মোঃ ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার দুই চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০)। এর পর আর ফিরে আসেনি। আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে বাহুবল থানায় একটি জিডি এবং গত মঙ্গলবার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দাযের করা হয়। নিখোঁজের ঘটনার ৫ দিন পর গত বুধবার সকালে গ্রামের পার্শ্ববর্তী স্থানে মাটি নীচে পুতে রাখা অবস্থায় নিখোঁজ ৪ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়।



 

Show all comments
  • HOBIGONJ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:২১ এএম says : 0
    HOBIGONJ
    Total Reply(0) Reply
  • Manju ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪২ পিএম says : 0
    যে কোন আসামীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের হ্যালমেট ও জ্যাকেট পরাতে হবে কেন? ওদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করা দরকার এতে কি মনের অজান্তে ভুল হয়ে যায় না যে, ওই অপরাধটি কি পুলিশ?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Bahar Uddin ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম says : 0
    তাড়াতাড়ি ফাঁসী দেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Matir Manus ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম says : 0
    Fasi chai
    Total Reply(0) Reply
  • Md Hanif Ali ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৪ পিএম says : 0
    Hay Allah a ki?
    Total Reply(0) Reply
  • md ali hayder chowdhury ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০৯ এএম says : 0
    এ দের ফাসিঁ দিয়ে উপযুক্ত শাস্থি দিন ।...........................,...,...,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কিলিং মিশনের মূল ভূমিকায় ছিল ৫ জন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ