Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সমালোচকদের শিক্ষার মানোন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে এগিয়ে আসার অহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কোনো কিছুই রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই- কোনো কিছুই রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। আগে তারা (সামালোচকবৃন্দ) ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিন, সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য কিছু করুন, শিক্ষা দিন। তারপর কথা বলুন। তিনি সমালোচকদের কাছে এ প্রশ্ন রাখেন, শিক্ষার মানের মাত্রাটা আসলে কী?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। বিনামূল্যে প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিশেষ উত্তরীয়’ পরিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম এবং অন্যান্য সচিবগণ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি একদিনে সব হয়ে যায় না। সেজন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা চাই সব ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দেবে, এ জন্যই পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণিতে পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষার ব্যবস্থা। অথচ এই দুই পরীক্ষা নিয়েও অনেকে কথা বলেন। পিইসি-জেএসসির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতি কমছে মত দিয়ে তিনি বলেন, এতে করে তাদের মধ্যে সাহস জন্মাচ্ছে। দিন দিন রেজাল্টও ভালো হচ্ছে, পাসের হারও বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল যখন ক্লাস থেকে কিছু ছেলে-মেয়ে বেছে, তাদের প্রস্তুত করা হতো বৃত্তির জন্য। তাদের ভালো টিফিন দেয়া হতো, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সেটি পেতো না। বৃত্তির জন্য শিক্ষকরা যাদের বাছলেন না, তাদের মধ্যেও তো মেধাবী থাকতে পারে। কেউ বৃত্তি পাবে, বাকিরা বঞ্চিত থাকবেÑ এই পদ্ধতি ঠিক করতেই পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা
বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার এ লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি জেন্ডার সমতা অর্জনেও কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সত্যই একটি আনন্দের দিন। আজ আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছি। আপনারা জানেন আমরা সরকার গঠনের পর থেকেই মানুষের মৌলিক অধিকার সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কারণ আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেই দারিদ্র মুক্তি ঘটবে যদি আমরা সকলকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারি। শিক্ষাই হচ্ছে দারিদ্র্য মুক্তির মূল ভিত্তি, যেটা আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা ২শ’ ৪৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছি। এ বছরও ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫ খানা বই প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতগুলো একসঙ্গে ছাপানো এবং বিতরণ করা একটি বিশাল ব্যাপার। এমনকি ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের মাঝেও আমরা জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনটিতেই সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে সমর্থ হয়েছিলাম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই উদ্যোগ ব্যর্থ করার জন্য ছাপাখানা পুড়িয়ে দেয়াসহ নানাবিধা ষড়যন্ত্রেও কথা উল্লেখ করেন।
উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে অবাধ তথ্যপ্রবাহ অনস্বীকার্য
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে তার সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে বলেন, একটি উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবাধ তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবাধ তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য। এই কারণেই আমরা তথ্যপ্রবাহের সকল মাধ্যমের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্প্রসারণ করে যাচ্ছি।
গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি) ৬ ঘণ্টা সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলায় তার সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৭৫ সালের সেই কালো অধ্যায় যদি রচনা না হতো, তাহলে ২০ বছর আগেই দেশের উন্নয়ন হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে এরপর থেকে দেশের উন্নয়ন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেড় ঘণ্টা সম্প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যাত্রা শুরু করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ২০ বছর পর এসে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ৬ ঘণ্টা সম্প্রচারের উদ্বোধন করলো।
ভবিষ্যতে এটি সম্পূর্ণ চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে সব বিভাগীয় শহরগুলোতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র চালু করা যাবে বলে আশা করছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনকালে গণভবনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়।
এখন থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সম্প্রচারিত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষায় প্রথম টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন ডিআইটি ভবনের নিচতলায় এনইসি (নিপ্পন ইলেকট্রনিক কোম্পানি) জাপানের সহযোগিতায় আত্মপ্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে একটি সরকারি গণমাধ্যমে রূপ দেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ডিআইটি’র ক্ষুদ্র পরিসর থেকে রামপুরার বৃহত্তর পরিমন্ডলে বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্র স্থানান্তর হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আমিই প্রথম বেসরকারি পর্যায়ে টেলিভিশন স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি প্রদান করি। এ পর্যন্ত ৩২টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে ২৩টি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বেসরকারি এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০ প্রণয়ন করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও বিনোদন সরবরাহ এবং দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, পিআইডি, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, ফিল্ম সেন্সর বোর্ড, পিআইবি, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এবং বিএফডিসি কাজ করে যাচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার ব্যবস্থা এনালগ থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটালে রূপান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্রবিষয়ক প্রথম কোর্স এবং টেলিভিশনবিষয়ক প্রথম কোর্স সমাপ্ত হয়েছে। গত ৮ বছরে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১২ হাজারেরও বেশি সাংবাদিককে বিনাখরচে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমি নিজ উদ্যোগেই সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্প্রচার সময় বাড়ানোর ফলে চট্টগ্রামের স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশ আরো সহজ হবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে মেরিন ক্যাডেটদের আহ্বান
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেরিন ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেছেন, কর্মস্থলের অভিজ্ঞতাকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগিয়ে মক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশপ্রেম হবে আপনাদের মূলমন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের উপর আমার আস্থা রয়েছে। দেশে-বিদেশে যেখানেই কাজ কর-‘দেশপ্রেম’ হবে আপনাদের মূলমন্ত্র।’
তিনি বলেন, আর শিক্ষা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না, যখন কাজে নামবেন এবং বাস্তবধর্মী শিক্ষা লাভ করবেন সে শিক্ষাটাই দেশের কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন এবং দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারে সেজন্য আমরা শিক্ষার বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছি।
কাজেই আজকে আপনারা যে সব ক্যাডেটরা সনদ নিয়ে যাচ্ছেন তারাও দেশের মান-মর্যাদা রক্ষা করে স্ব-স্ব কর্মস্থানে এগিয়ে যাবেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সেটাই আমি কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী (চট্টগ্রাম) এর ৫১ তম ব্যাচের গ্রাজুয়েশন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান এবং মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হোসেন মেরিন একাডেমি প্রান্ত থেকে বক্তৃতা করেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ইকবাল সোবহান চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে মেরিন একাডেমির বিদায়ী ক্যাডেটরা বর্নাঢ্য কুচকাওয়াজের মাধ্যমে সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মেরিন একাডেমির কর্মকা- নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক বেশি মেধাবী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটু সুযোগ পেলে সেই যোগ্যতার স্বাক্ষর তারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাখতে পারেন। কাজেই তাদের সেই সুযোগটা করে দিতে হবে। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি আন্তর্জাতিক সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনার জন্য সুদক্ষ মেরিন ক্যাডেট ও অফিসার তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা এটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেন। তিনি ‘ডেভলপমেন্ট অব মেরিন একাডেমি’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই খাতে সম্ভাবনার কথা ভেবে ২০১১ সালে ৪৫ ব্যাচের গ্রাজুয়টদের প্যারেডে উপস্থিত হয়ে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। ২০১৩ সনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ নামে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে। খুব শীঘ্রই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস চট্টগ্রামের বাকলিয়াতে স্থাপিত হবে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য আরো ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’-এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির থাকা ১৪টি শাখার মধ্যে অন্যতম। ২০১১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ২০১৫ সনে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির প্রশিক্ষণ শাখা থেকে প্রশিক্ষণ-মান স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
এই একাডেমির কমান্ড্যান্ট ‘চার্টার্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার’ সাজিদ হোসেন ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির’ বোর্ড অব গভর্নসে একজন গভর্নর নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজয়ের এই মাসেই বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী আন্তর্জাতিক মান সূচক আইএসও ৯০০১ : ২০১৫ সনদ অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে তিনটি ব্যাচে ৪৮ জন মেয়ে একাডেমিতে এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের সমুদ্রগামী জাহাজে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময় বিভিন্ন সমৃদ্ধ চুক্তি অনুস্বাক্ষরেরর প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমার সরকারের সময় ২০০০ সালে বাংলাদেশ ‘ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন’ এর হোয়াইট লিস্টভুক্ত হয়। ২০০১ সালে আমরা সরকারে থাকার সময় জাতিসংঘের ‘ল অব দি সী কনভেশন’-এ অনুস্বাক্ষর করেছি। সেই পথ ধরে ২০০৯ আন্তর্জাতির আদালতে আইনি লড়াই শুরু করি। তারপর ২০১৪ সালে আমরা ‘সমুদ্র বিজয়’ করি।
  ডট বাংলার উদ্বোধন
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডট বাংলা উদ্বোধন করলেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ডট বাংলা আইডিএনের যাত্রা শুরু হলো । এর ফলে এখন বাংলা ভাষায় নাম ঠিক করে ওয়েব ঠিকানার নিবন্ধন নেয়া যাবে।
আগ্রহীরা রোববার থেকেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ সংস্থা বিটিসিএল-এর পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) মীর মো. মোরশেদ।  
ইন্টারনেট কর্পোরেশন অব অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বার (আইসিএএনএন) বাংলাদেশের জন্য ডট বাংলা (.বাংলা) ডোমেইন চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ দেয়ার দুই মাস পর গতকাল শনিবার দুপুরে গণভবনে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডট বাংলা ডোমেইন চালু হলে আইসিটি খাতে ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে। যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার সমালোচনা করেছিলেন, তারাও ডট বাংলা ডোমেইন ব্যবহার করতে পারবেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বিটিআরসির প্রধান শাহজাহান মাহমুদ, টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী এবং বিটিসিএল এর এমডি মাহফুজ উদ্দিন আহমদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের জন্য এতোদিন আইসিএএনএনের স্বীকৃত ডোমেইন কোড ছিল ডট বিডি (. বিডি)। গত ৫ অক্টোবর তার সঙ্গে যুক্ত হয় ডট বাংলা।
কোনো একটি রাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে এই ডোমেইন। যেমন ডট ইউকে ডোমেইল নামের কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই বুঝা যাবে সেটি যুক্তরাজ্যের ওয়েবসাইট। তেমনি ইউনিকোড দিয়ে স্বীকৃতি বাংলাদেশী ডোমেইন হলো ডট বাংলা। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত সরকারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ এবং সিয়েরা লিওন একই ডোমেনের আবেদন করেছিল।
ডট বাংলা ডোমেইন-এর টেকনিক্যাল কনটাক্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। বাংলায় নতুন ডোমেইন নাম চালু হওয়ার পর িি.িনঃপষ.পড়স.নফ এর বদলে ইন্টারনেট ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে বিটিসিএল.বাংলা লিখেও বিটিসিএল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে।



 

Show all comments
  • সফিক ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১০:৪৯ এএম says : 0
    দেশের উন্নয়নে শিক্ষা খাতের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই
    Total Reply(0) Reply
  • হিমেল ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:২৭ এএম says : 0
    শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলের এগিয়ে আসা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রীর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ