Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শহীদ দিবসের কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ : আহত ৬৪

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৮:৪৯ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে ও পরে বিএনপি, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৬৪ জন। বগুড়ার ধুনটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দুই নেত্রীর মধ্যে হাতাহাতিতে নাক ফেটেছে একজনের। এছাড়া ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত :
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে সংঘর্ষে জড়ায় এই দুই গ্রুপ।
জানা গেছে, শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ বিজয়ের অনুসারীরা ‘ব্রাদার্স’ ও ‘মকু’ নামক দুটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে ‘ব্রাদার্স’ পক্ষটি আলাওল হল ও এ এফ রহমান হলে এবং অপরপক্ষ ‘মকু’ সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থানরত। ওইদিন রাত ১২টার পর একুশের প্রথম প্রহরে ব্রাদার্সের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে মকুর নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে প্রায় ২০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

চবি মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত কর্মকর্তা দেলোয়ার জানান, ১১ জন খাতায় নাম লিখেছেন। কিন্তু প্রায় ২০ জনের মতো এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তারা এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে এবং আক্রমণ করেছে। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমরা সেখানে ভোর ৪টা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলাম।
এছাড়া, শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সময় যুবলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ঘটনা ঘটেছে। ছাত্র ইউনিয়ন হামলার জন্য দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে। তবে কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীও এসময় তাদের ওপর চড়াও হয় বলে জানান। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে শহিদ মিনারে প্রবেশের প্রতিবাদ করায় এবং স্বৈরাচার ও সন্ত্রাসবিরোধী সেøাগান দেওয়ায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে বলে দাবি ছাত্র ইউনিয়নের।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগ হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের দাবি, ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা একজন জ্যেষ্ঠ্য আওয়ামী লীগ নেতাকে অপমান করায় তারা প্রতিবাদ করেছে এবং এসময় সামান্য ‘হাতাহাতি’ হয়েছে।
বগুড়া : বগুড়ার ধুনটে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে মহিলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দুই নেত্রীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা দুইটার দিকে উপজেলা পরিষদ সড়কে একটি খাবারের হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। হাতাহাতিতে একজনের নাক ফেটে গেছে। অন্যজন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক লিপি আকতার ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী কাউসার জাহান ওরফে কেয়া। তাঁদের মধ্যে লিপিকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কাউসার জাহানকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রামগতি (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মহান শহিদ দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার রামগতি বাজারে বিএনপির সাবেক এমপি আশ্রাফ উদ্দিন নিজান গ্রুপ এবং সাবেক বিএনপি নেতা শামীম-বাচ্চু গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় হওয়া এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে চরগাজী ইউনিয়ন বিএনপিসাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এবং যুবদল নেতা মো. জুয়েল ও শ্রমিক দল নেতা মো. ছালাউদ্দিনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সাবেক বিএনপি নেতা মীর আক্তার হোসেন বাচ্চু জানান, কোনো প্রকার উস্কানী ছাড়াই নিজান গ্রুপের লোকেরা হামলা চালিয়ে জুয়েল, ছালাউদ্দিন, আলাউদ্দিন, সেলিম ও রাকিবসহ ১১ নেতাকর্মীকে আহত করেছেন। পরে তাঁদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অপরদিকে নিজান গ্রুপের নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন জানান, উপজেলার রামগতি বাজারে চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়ন বিএনপি কর্মসূচি পালন করতে গেলে শামীম-বাচ্চু গ্রুপের লোকেরা অতর্কিত হামলা করে। এতে চরগাজী ইউনিয়ন বিএনপিসাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, চরগাজী ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি নুরুল আমিন নোমান, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ছাত্রদল নেতা আরিফ, হৃদয়, নোমান, ফরহাদ ও ইসমাইলসহ নয়জন নেতাকর্মী আহত হন। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সরকারী মাহাতাব উদ্দিন কলেজের শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ছাত্রলীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেসময় আহত হয়েছে পথচারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৬ জন। এদের মধ্যে ২ জনকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ছাত্রলীগ কর্মী ইরফান রাজা রুকুকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। ঘটনার সময় সেখানে একটি ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটানো হয়।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, আমাদের ছেলেরা শহীদ মিনারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সেসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের এই হামলা পরিকল্পিত। এজন্যই তারা জাতীয় দিবসে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। যার প্রতিফলন আজকে ছাত্রলীগ কর্মী ইরফান রাজা রুকুকে কুপিয়ে আহত করে এবং একটি ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটালো।

তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কলেজের বাইরে বের হলে কলেজের ভিতর থেকে আমাদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেসময় আমাদের নেতাকর্মীরা ঘুরে গিয়ে সেটাকে প্রতিহত করে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়। তারা আমাদের ভয় দেখাতে সেখানে ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটায়।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আসা রুগীদের মধ্যে রুকুর শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে শহীদ বেদীতে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও শ্রমিকলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তিন গ্রুপের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৬ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের হস্তক্ষেপে আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে নেতাকর্মীদের আধাঘণ্টা ব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় শহীদ বেদীতে ফুল দিতে আসা সামাজিক-সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পড়ে ফুল না দিয়ে অনেকে শহীদ বেদী থেকে চলে যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা শহীদ বেদীতে ফুল দিতে আসেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুল দেওয়ার পর শ্রমিক লীগের এক পক্ষের নাম ঘোষণা করলে অপর পক্ষ বাধা দেয়। পরে উভয় পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে সেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের ৬ জন নেতাকর্মী আহত হয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের হস্তক্ষেপে আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এই ঘটনায় সদর থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সানজিদ কাজল, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জসিম উদ্দিনসহ শ্রমিকলীগ ও যুবলীগের ৬ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক খান তুষার বলেন, শ্রমিক লীগের ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে এটা দুঃখজনক ঘটনা। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল বলেন, মারামারির ঘটনা নয়, উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ