Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সহিহ হাদীসের আলোকে মিরাজুন্নবীর ঘটনা-১

মুহাম্মাদ ত্বহা হুসাইন | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:১২ এএম

হিজরতে মদিনার আগের কথা। বাধা আর সফলতার মাঝে এগিয়ে চলছিল ইসলামের অগ্রযাত্রা। কাফির-মুশরিকদের ঠাট্টা-বিদ্রƒপ আর অকথ্য নির্যাতনে শানিত হচ্ছিল মুমিনের ঈমান, জ্বলে উঠেছিল মুসলমানের দ্বীনি জযবা। এমনি সময়ে কোনো এক রাতে নবীজি (সা.) সাহাবীদের নিয়ে ইশার নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর খানায়ে কাবা সংলগ্ন ‘হাতীমে’ শুয়ে বিশ্রাম নিতে লাগলেন। এই সেই ‘হাতীম’, যা এক সময়ে খানায়ে কাবারই অংশ ছিল। মক্কার কাফেররা গুরুত্বপূর্ণ কাজে এখানে সমবেত হতো, পরস্পর শপথ ও মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হতো। সংকটাপন্ন মুহূর্তে দুয়ার জন্য প্রসারিত করত দু’হাত। মক্কার সর্দারেরা এখানে প্রায় বিশ্রাম নিত। নবীজিও মাঝে মাঝে আরাম করতেন।

ওই রাতেও নবীজি সেখানে তন্দ্রাবিষ্ট ছিলেন; নিদ্রা তখনও আসেনি। আর নবী-রাসূলগণের নিদ্রা তো এমনই হয়; চোখ দু’টো তাঁদের মুদে আসলেও ক্বলব থাকে সতত জাগ্রত। জিবরীল আমীন (আ.) নেমে এলেন। নবীজিকে জাগ্রত করলেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে গেলেন আবে জমজমের নিকটে। তাঁর বক্ষের অগ্রভাগ হতে চুল পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হলো। বের করা হল তাঁর হৃৎপি। তা আবে জমজম দ্বারা শোধন করা হলো। ঈমান ও প্রজ্ঞায় ভরপুর স্বর্ণের একটি পেয়ালা এনে তা দিয়ে ভরে দেওয়া হলো নবীজির বক্ষ মুবারক। অতঃপর হৃৎপিন্ড যথাস্থানে রেখে দিয়ে উপরিভাগ সেলাই করে দেয়া হলো। হযরত আনাস (রা.) বলেন, আমি এর চিহ্ন নবীজির বুকে প্রত্যক্ষ করেছি।

‘বুরাক’ নামক ক্ষিপ্রগতির একটি সওয়ারী আনা হলো, যা ছিল গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং দীর্ঘদেহী। রং ছিল শুভ্র। এমনই ক্ষিপ্র ছিল তার চলার গতি যে, দৃষ্টিসীমার শেষ প্রান্তে গিয়ে পড়ত তার পায়ের খুর। তার পিঠের উপর জিন আঁটা ছিল, মুখে ছিল লাগাম। নবীজি রেকাবে পা রাখবেন এমন সময় ‘বুরাক’ ঔদ্ধত্য দেখাল। জিবরীল তাকে থামিয়ে বললেন, হে বুরাক! তুমি মুহাম্মাদ (সা.)-এর সামনে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছ? তুমি কি জান, আল্লাহর কাছে তার চেয়ে মহান ও প্রিয়তম কোনো ব্যক্তি কখনও তোমার উপর সওয়ার হয়নি। একথা শুনতেই বুরাক ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। (তিরমিজি : ৩১৩১)।

অতঃপর নবীজি বুরাকে আরোহণ করলেন। মুহূর্তেই এসে উপস্থিত হলেন জেরুজালেম নগরীর বায়তুল মাকদিসে। জিবরীল একটি পাথর ছিদ্র করে বুরাককে বেঁধে রাখলেন। (তিরমিজি : ৩১৩২)। এটা সেই বৃত্ত, যেখানে নবীগণও নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। (মুসনাদে আহমাদ : ২/৫২৮)। বায়তুল মাকদিসে ঢুকে তিনি দেখেন, হযরত মূসা (আ.) নামাজরত আছেন। তিনি ছিলেন ছিপছিপে ও দীর্ঘ দেহের অধিকারী। তাঁর চুল ছিল কোঁকড়ানো, যা ছিল কান পর্যন্ত ঝুলন্ত। দেখে মনে হবে যেন ‘শানওয়া’ গোত্রেরই একজন লোক।

হযরত ঈসা (আ.)-কেও দÐায়মান হয়ে নামাজ পড়তে দেখা গেল। তিনি ছিলেন মাঝারি গড়নের, সাদা ও লাল রং বিশিষ্ট। তাঁর চুল ছিল সোজা ও চাকচিক্যময়। তাঁর আকার-আকৃতি সাহাবী উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী (রা.)-এর সাথে অধিক মেলে। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কেও নামাজরত অবস্থায় দৃষ্টিগোচর হলো। নবীজি বলেন, তাঁর দেহাবয়ব আমার সাথে অধিক সামঞ্জ্যশীল। (মুসলিম : ১৬৭)।

ইতোমধ্যে জামাত প্রস্তুত হলো। তিনি দু’রাকাত নামাজ আদায় করলেন। সকল নবী-রাসূলগণ নবীজীর পিছনে ইক্তেদা করলেন। ওখান থেকে বের হয়েই দেখলেন, জিবরীল (আ.)-এর হাতে দু’টি সুদৃশ্য পাত্র। একটি শরাবের, অপরটি দুধের । পাত্রদু’টি পেশ করা হলে নবীজি দুধেরটিকেই বেছে নিলেন। এতদ্দর্শনে জিবরীল (আ.) তাঁকে বললেন, আপনি ও আপনার উম্মত স্বভাবজাত ফিত্রাতকেই বেছে নিয়েছেন। আপনি যদি শরাব পছন্দ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। (মুসলিম : ১৬৮)।

 

 



 

Show all comments
  • Md Arif I ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৪ এএম says : 0
    প্রিয়নবিকে চরম বিপদের মুহূর্তে শান্ত্বনা দেয়ার নিমিত্তে এক অসাধ্য সাধন কাজের মাধ্যমে নবুয়তের সত্যতাকে সুনির্ধারিত করতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে ডেকে নেন। ইসলামের ইতিহাসে এ ঘটনা মেরাজ নামে প্রসিদ্ধ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Arif I ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৪ এএম says : 0
    প্রিয়নবিকে চরম বিপদের মুহূর্তে শান্ত্বনা দেয়ার নিমিত্তে এক অসাধ্য সাধন কাজের মাধ্যমে নবুয়তের সত্যতাকে সুনির্ধারিত করতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে ডেকে নেন। ইসলামের ইতিহাসে এ ঘটনা মেরাজ নামে প্রসিদ্ধ।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির হোসেন ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৫ এএম says : 0
    মেরাজের রাতে পবিত্র নগরী মক্কা থেকে আরেক পবিত্র নগরি জেরুজালে মুহূর্তের মধ্যে গমন। সেখানকার মসজিদে আকসার চার পাশের বরকতময় নির্দশনগুলোর পরিদর্শন। অথচ এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সাধারণত সময় লাগে এক মাস। আল্লাহ তাআলা তা খুব তড়িৎ গতিতে সম্পন্ন করিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৫ এএম says : 0
    বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌছার পর প্রিয়নবি সব নবি-রাসুলদের ইমাম হয়ে মসজিদে আকসায় নামাজ আদায় করেন। আর এ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে প্রিয়নবি হয়ে ওঠেন ইমামুল মুরসালিনা ওয়ান নাবিয়্যিন
    Total Reply(0) Reply
  • মনির হাওলাদার ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৬ এএম says : 0
    দুনিয়ার আকাশে দুইটি ভাণ্ডভর্তি গোশ্‌ত। যার একটি তাজা গোশ্‌ত। আর অন্যটিতে পঁচা-দুর্গন্ধ গোশ্‌ত। মানুষ তাজা গোশ্‌ত না খেয়ে পঁচা গোশ্‌ত খাচ্ছে। প্রিয়নবি জানতে পারলেন এরা হলো দুনিয়ার হারাম ভক্ষণকারী ব্যক্তি।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল আহমেদ পাশা ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৬ এএম says : 0
    প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ মেরাজ ছিল জাগ্রত অবস্থায় রূহ ও শরীরের উপস্থিতিতে। আর তা বাস্তবেই প্রমাণিত। প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য মেরাজ সংঘটিত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বাস স্থাপন করাও ঈমানের একান্ত দাবি।
    Total Reply(0) Reply
  • জামাল কামাল ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৬ এএম says : 0
    মানুষের জন্য আল্লাহর মেরাজের দরজা নামাজের মাধ্যমে খোলা রাখা হয়েছে। মুমিনের মেরাজই হলো নামাজ। এ নামাজেই মানুষ আল্লাহর দিদার লাভ করতে সক্ষম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন