দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
কোন ক্রাইসিস মুভমেন্ট ক্রিয়েট হলেই সেটা থেকে পরিত্রাণের জন্য একজন পরিত্রাণকারী প্রেরণ করে জাতিকে সুপথ দেখান মহান আল্লাহ। বায়তুল মোকাদ্দাসের জন্য যেমন সালাউদ্দিন আইয়ুবি, হিন্দুস্থানে হেরার জ্যোতি যেমন খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি আজমিরি, সম্রাট আকবরের দ্বীনে ইলাহি থেকে মানুষকে হেফাজতের জন্য খোদা প্রদত্ত শক্তি যেমন মুজাদ্দিদে আলফে সানি, বাতিল অপশক্তির বিষদন্ত ভাঙতে যেমন ইমাম আ’লা হজরত, যখন প্রিয় নবীর সুন্নাত থেকে সরিয়ে ইয়াহুদী-নাসারাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরলপ্রাণ মুসলমানদের কাজে লাগাচ্ছে একদল ষড়যন্ত্রকারী, ইসলামকে ধ্বংস করতে মুসলমানদেরকেই যখন গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে, যখন নব্য তাওহিদের দোহাই দিয়ে শানে রিসালতকে ভূলুন্ঠিত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠছে, ঠিক সেই ক্রান্তিলগ্নে দ্বীনের হাহাকার থামাতে মহান আল্লাহ তাঁর হাবিবের উসিলায় সুন্নিয়ত ও বেলায়তের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক আউলাদে রাসুল (দ.), ইমামে আহলে সুন্নাত, আউলাদে রাসূল (দ.), শহীইদে মিল্লাত, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা আলকাদেরী (রহ.)-কে মহান সংস্কারকরূপে প্রেরণ করেন।গাউসুল আজম মাইজভান্ডারি (ক.) জীবদ্দশায় ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, আমার পরে একজন জামানার মোজাদ্দেদ ও আশেকে রাসূল (দ.) আগমন করবেন”। হুজুর গাউসে মাইজভান্ডারি ১৯০৬ সালে দুনিয়া থেকে পর্দা করেন আর সেই বছরই গাউসে মাইজভান্ডারি (ক.)র ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইমাম শেরে বাংলার জন্মগ্রহণ করেন। রতœগর্ভা হাটহাজারীর মেখল গ্রামের অলিয়ে কামেল মাওলানা সৈয়দ আবদুল হামিল আলকাদেরী (রহ.) ও বিদুষী পূণ্যময়ী রমণী সৈয়দা মায়মুনা খাতুনের ঘর আলোকিত করে আল্লামা সৈয়দ আজিজুল হক ইমাম শেরে বাংলার জন্ম। তিঁনি পিতৃ ও মাতৃকুল উভয় বংশধারায় সৈয়দ বংশীয়। ইমাম বাংলাদেশ হতে প্রাথমিক থেকে টাইটেল (মাস্টার্স) সম্পন্ন করে কুরআন সুন্নাহর উপর উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য ভারতের বিখ্যাত ফতেহপুর আলীয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। অসাধারণ পান্ডিত্য ও ব্যুৎপত্তি অর্জনের মাধ্যমে দাওরায়ে হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রি লাভ করেন বাবাজী। ফতেহপুর আলীয়া মাদরাসায় অধ্যয়নকালে অলৌকিকভাবে সাক্ষাৎ হয় ইলমে লাদুন্নি তথা গোপন রহস্যজ্ঞানের ধারক হযরত খাজা খিজির (আঃ)থর সাথে। খাজা খিজির (আঃ) ইমামকে ¯েœহে আলিঙ্গন করেন এবং ৪টি হাদিসের দরস দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। যে সাক্ষাৎ ইমামের জীবনকে আমূল-পরিবর্তন এনে দেয়।ইমামের স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ। ছাত্রজীবন থেকে ইসলাম, দেশ, মানবতা ও সভ্যতার শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁর তেজোদ্দীপ্ত হুংকার পরিলক্ষিত হতে থাকে। খোদা ভীতি ও রাসূল প্রীতির সুউচ্চ মিনার ইমামে পাক কাবা শরীফের গিলাফের রঙ কালো বলে তিনি সম্মানের সাথে গাঢ় কাল লম্বা টুপি পরিধান করতেন। আদবের বরখেলাফের আশঙ্কায় কখনো কালো জুতা পড়তেন না। উন্নত, অনুপম উত্তম চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, এককথায় আপাদমস্তক নবীপ্রেমিক। নবীপ্রেমের প্রতিবিম্ব ইমাম শেরে বাংলা। পড়াশোনা শেষে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে ইমাম সুন্নিয়ত রক্ষায় দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। নিজ গ্রাম মেখল ফকিরহাটে প্রতিষ্ঠা করেন এমদাদুল উলুম আজিজিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা। প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে সুন্নিয়ত প্রচার ও দ্বীনিশিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিনত হয় এ মাদরাসা। জাতিকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে হাটহাজারী জামেয়া আজিজিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া, চন্দ্রঘোনা তৈয়বিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া, ফতেহ নগর অদুদিয়া ও লালিয়ারহাট হামিদিয়া হোসাইনিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও বাংলার আজহার খ্যাত জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া, সোবহানিয়া আলীয়া, কদলপুর হামিদিয়া মাদরাসাসহ সুন্নি প্রতিষ্ঠানগুলোর শুভাকাক্সক্ষী ছিলেন শিক্ষাবিদ ইমাম শেরে বাংলা। সংগঠক হিসেবে ইমামের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে। জমিয়তে ওলামায়ে পাকিস্তান নামক একটি সুখ্যাত সংগঠনের সদস্য হিসেবে সাংগঠনিক যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি এ সংগঠনের সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। সুফিবাদী মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আঞ্জুমানে এশায়াতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাথআত। মানবতার শত্রু বাতিল অপশক্তি কোনভাবেই ইমামের সাথে পেরে উঠছিল না। কী মাহফিল, কী তর্কযুদ্ধ, কী লিখনি! সবদিকে ইমামের বিশ্বাসই জয়ী। বিজয়ী ইমামের কণ্ঠরোধ তথা পৃথিবীতে থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হীন ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আঁকলো জঙ্গিগোষ্ঠী। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৫১ সালের ২জুন হাটহাজারীর খন্দকিয়া গ্রামে ইমামকে মাহফিলের দাওয়াত দিয়ে শহীদ করে দেওয়ার পর মহান রাব্বুল আলামিনের দয়া ও প্রিয় নবীর সদকায় জীবন ফিরে পাওয়া ছিলো ইমামের মকবুলিয়াতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নবীপ্রেমের উজ্জ্বল পুরস্কার। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। মসজিদ ও খানেকায় সীমাবদ্ধ থাকার জন্য দ্বীনের আবির্ভাব হয়নি। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।