পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অস্তিত্বহীন জমি ক্রয় এবং সেই ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট, অস্তিত্বহীন ‘সার্ভিস সেন্টার’ স্থাপন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের নামে লোপাট করা হয়েছে গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা। এ অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিক, পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহীর মধ্যে। তবে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান প্রধান নির্বাহী বিশ্বজিৎ মÐলের দাবি, তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন যোগদান করেছেন। তাই এ সংক্রান্ত কোনো হালনাগাদ তথ্যই তার জানা নেই। তবে নন ব্যাংকিং আর্থিক খাতের সাম্প্রতিক লুটপাট ও অর্থপাচারের বিষয়ে কঠোর নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রাহকের অর্থ তসরুফ এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ পাচারের অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণ পেলে সংস্থাটি অবশ্যই অনুসন্ধান করবে জানান সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, অনুমোদন লাভের পর ১৯৯৬ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ‘হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:’। প্রতিষ্ঠানটির জন্মই হয় অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্য দিয়ে।
যুক্তরাজ্যের কয়েকজন নাগরিক ‘বাংলাদেশি নাগরিক’ পরিচয় দিয়ে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির অনুমোদন নেন। বাকি বিনিয়োগকারীরাও বৃটিশ নাগরিক। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে তারা বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে। রেকর্ড অনুযায়ী, বিনিয়োগের এ অর্থ কোনো ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসেনি। সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: ও পরিচালকগণ দেশে টাকা আনেন হুন্ডির মাধ্যমে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রথম পাঁচ বছর বোর্ড সভাগুলো অনুষ্ঠিত হয় কোম্পানির ১১, মতিঝিল এল্লাল চেম্বারস্থ প্রধান কার্যালয়ে। ২০০১ সালের ২২ এপ্রিল ২৫ তম বোর্ড সভাটি অনুষ্ঠিত হয় সিলেটে। হোমল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন কাজী এনামুল হক। তার নির্দেশনায় তখন থেকে সবগুলো বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয় সিলেটে। প্রতিষ্ঠানের ৩১ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে একটি অস্তিত্বহীন জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়। অস্তিত্বহীন এই জমিতে পরে বালুও ভরাট করা হয়। যদিও পরবর্তীতে ওই জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। তবে জমি ক্রয় বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বালু ভরাট বাবদও ব্যয় দেখানো হয় কয়েক কোটি টাকা। সারাদেশে অন্তত ৪৪টি সার্ভিসিং সেন্টার খুলে সেগুলো ‘অগ্রিম খরচ’ বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ৬১ কোটি টাকা। ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সালে এই লুটপাট আর আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। বিপুল এই আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটিত হয় ২০১০ সালের একটি বিশেষ নিরীক্ষায়। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত বোর্ডসভায় গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করা এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি এক যুগেও। অন্যদিকে অর্থ সঙ্কটের কারণে যখন প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের ‘বীমা দাবি’ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তখন গ্রাহক পর্যায় থেকে মামলা ঠুকে দেয়া হয়। এ মামলায় হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৭ পরিচালক কারাভোগও করেন। তবে আত্মসাতকৃত অর্থ এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি। আত্মসাতের মতো ফৌজদারি অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো আইনি ক্ষমতা নেই বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান ‘আইডিআরএ’র। সামান্য কিছু অর্থদÐ করা ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির তেমন কোনো এখতিয়ার নেই। আইনি দুর্বলতার সুযোগে নানা ভুয়া ভাউচার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকগণ লোপাট করেন অন্তত ১০৪ কোটি টাকা। রেকর্ড বলছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী এনামউদ্দীন, পরবর্তীতে তার পুত্র কাজী আরাফাত, পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে পরিচালক নজরুল ইসলাম, আব্দুর শুকুর ফারুক, মফিজ উদ্দিন এ অর্থ হাতিয়ে নেন। আত্মসাৎ সহায়তায় অগ্রণী ভ‚মিকা রাখেন কোম্পানির তৎকালীন উন্নয়ন ইনচার্জ জাকির হোসেন সরকার, জেনারেল ম্যানেজার ওয়ালি উল্লাহ নাসির, উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জলিল, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাশার আকন্দ, এএমডি জাকির হোসেন, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শফিকুর রহমানের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণ ভুয়া ভাউচারে এসব অর্থ হাতিয়ে নেন, মর্মে রেকর্ডপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বিগত চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণের অব্যাহত লুটপাটের প্রেক্ষাপটে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে দেখা দিয়েছে তহবিল সঙ্কট। গ্রাহকরা তাদের টাকা পাচ্ছে না। বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বীমা দাবি মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। বীমা দাবির টাকা ফেরত পাওয়া এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।
বিগত চেয়ারম্যান-পরিচালকগণের লুটপাট, অর্থ পাচার, গ্রাহকের বীমা দাবি পূরণে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, এটি ১০ বছর আগের কাহিনী। বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আমি এ প্রতিষ্ঠানের কোনো বিনিয়োগকারী নই। বিগত দিনে সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রেক্ষিতে সরকার আমাকে স্বতন্ত্র পরিচালক (বর্তমানে চেয়ারম্যান) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আমার দায়িত্ব হচ্ছে সামনে প্রতিষ্ঠানটিকে কীভাবে সঠিকপথে পরিচালনা করা যায় সেটি দেখা। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত তাদের বিষয়ে আইনগতভাবে যা হওয়ার হবে। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।
এদিকে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান এ প্রতিবেদকে বলেন, বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ পেলে অভিযোগটি অবশ্যই অনুসন্ধান করা হবে। নন-ব্যাংকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লুটপাট, পাচারের বিষয়টি দুদক কঠোর নজরদারিতে রেখেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।