দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর: রজব মাস। হিজরী মাস। মর্যাদার মাস, সম্মানের মাস। রজব শব্দটি আরবী। অর্থ সম্মানিত। জাহেলি যুগে আরব বাসিরা রজব মাসকে মর্যাদার মাস হিসাবে সম্মান করত। সে হিসাবে ‘রজব’ নামে এ মাসের নাম করণ করা হয়েছে। প্রতি বছর রজব মাসে উপস্থিত হয় রমজানের আগমনী বার্তা। পবিত্র কোরআনে ১২টি মাসের মধ্যে রজবসহ ৪টি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছে। রজব মাসের চাঁদ হাজির হলে বিশ^ নবী (দ) বিশেষ কিছু আমল করতেন। হজরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘যখন রজব মাস শুরু হত নবী (দ) তখন এ দোয়াটি পড়তেন আল্লাহুমা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান,ওয়া বাল্লিগনা রমদান’। অর্থ হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও সাবান মাসকে বরকত ময় করুন।এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,‘‘আসমান সমুহ ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গণণায় মাস নিশ্চয়ই বারোটি । সুতরাং তোমরা এই মাস গুলোতে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।(সুরা তওবা)। রজব মাসের ১ম রাত দোয়া কবুল হয়। বিশ^ নবী (দ) রজব মাসের ১ম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেন,পাচটি রাত এমন আছে, যে রাতে রান্দার দোয়া আল্লাহ ফিরে দেয় না। অথাৎ অবশ্যই আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। রাত গুলো হলো-জুমার রাত,রজবের প্রথম রাত,সাবানের ১৫ তারিখের রাত,ইদুল ফিতরের রাত ও ইদুর আজহার রাত’। রজব মাসে রোজার তেমন কোন ফজিল নেই। তবে নফল রোজা হিসাবে রোজা রাখা অনেক ফজিলত ও মর্যাদা রয়েছে।
আমরা মানুষ,সামাজিক জীব। সমাজে বসবাস করি। সমাজ জীবনে প্রচলিত কিছু রীতি নীতি চালু রয়েছে। যা আমরা জেনে ,না জেনে পালন করি। এ মাসের ২৭ তারিখে রোজার অনেক ফজিলত। অনেকে বিশ^াস করি যে,একটি রোজা রাখলে এক হাজার রোজার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। এ জন্য এই রোজাকে হাজারী রোজা বলে অভিহিত করি। তবে রজব মাসের ২৭ তারিখে রোজা রাখতে হবে এরুপ গ্রহন যোগ্য কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমরা শান্তি চাই। সে হিসাবে রজব মাসে পশু জবাই করে খাওয়া দাওয়া ব্যবস্থা করা ইসলাম সমর্থন করেন না। ইসলামের পুর্বে তথা জাহিলি যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে প্রতিমা বা দেবতার সন্তুষ্টির জন্য পশু জবাই করার প্রচলন চালু ছিল। পশু জবাই করার প্রচলনকে ‘আতিয়া’বলা হতো। বিশ^ নবী (দ) তাদের এই প্রথার মুলোৎপাটন করেন। হযরত রাসুল (দ) সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষনা করেন,‘ইসলাম ‘ফারা’ (উট বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতিমার উদ্দেশ্য) জবাই করার কোন প্রথা নেই এবং ‘আতিয়া’ ও নেই। মোট কথা রজব মাসে প্রতিমার সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য পশু জবাই করার প্রথা নেই’।(বুখারী)। উম্মুল মোমেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেন,আমি হযরত রাসুল (স) কে রজব মাসে এত বেশী রোজা রাখতে দেখেছি,রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি। ¯্রষ্টার পরে মাখলুকের মধ্যে হযরত রাসুল (দ) পাকের প্রথম স্থান হওয়ার পড়েও তিনি রমজানের প্রস্তুতি হিসাবে রজব মাসে রোজা রাখতেন। তাই আমরাও যদি এই রজব মাস থেকে পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ্র রাখ, আমি যেন আগত রমজানে পুর্বের তুলনায় অনেক বেশী ইবাদত বন্দেগী, দান,খয়রাত কোরআন পাঠসহ সব পুর্ণ কর্ম করতে পারি। এছাড়া হয়রত রাসুল (স) শাবান মাসে আনেক বেশী ইবাদত করতেন আর তিনি (স) রমজান ছাড়াও প্রতি মাসে নফল রোজা রাখতের আর বিশেষ করে রজব মাসে’।
পরিশেষে বলতে চাই,আমরা যদি হযরত রাসুল (দ) এর সুন্নত অনুযায়ী রজব মাসে বেশী বেশী নফল রোজা রাখি তবেই রমজানের রোজা সাধন করা অতি সহজেই সাধন করতে পারব।পাশা-পাশি নফল রোজার মাধ্যমে মনের কালি ও সব দুর্বলা মুছে ফেরার চেষ্টা করি। এ মাস থেকে রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহন করি। মহান আল্লাহর আনুগত্যে ইবাদত,বন্দেগীর বহি প্রকাশ ঘটাই। আল কোরআনের আলোকে শান্তিময় জীবন গড়ে তুলি। রজব মাস হোক সুখ শান্তির ঝর্ণা ধারা।এই হোক সবার প্রত্যাশা।
উত্তর দিচ্ছেন: মাও আসাদুজ্জামান আসাদ, সহকারী অধ্যাপক, আরবী, গ্রন্থকার,সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।