Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদানি পরিস্থিতিতে আস্থায় ধস বিনিয়োগকারীদের

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মাত্র ১০ দিন আগেও ভারতের ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সাম্রাজ্যকে মনে হচ্ছিল অজেয় ও অপ্রতিরোধ্য। জ্বালানি থেকে বন্দর ব্যবসাÑ সবকিছুতেই চরম সফল তিনি। কিন্তু গবেষণা সংস্থার একটি প্রতিবেদনেই নাস্তানাবুদ এ ধনকুবের। আদানি এখন তার করপোরেট জীবনের সবচেয়ে খারাপ সঙ্কটের সঙ্গে লড়ছেন। পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের গ্রহণযোগ্য গন্তব্য হিসেবে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সবচেয়ে জরুরি ও ভয়াবহ প্রশ্নটিরও জন্ম দিয়েছেন। হিনডেনবার্গ রিসার্চ ২৪ জানুয়ারির একটি প্রতিবেদনে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ আনার পর থেকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের বাজার মূল্য কমেছে ১০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। চলতি সপ্তাহে এ টাইকুন যখন ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি বাতিল করেন, তখন অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের সম্ভাবনাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অবস্থান ফেরাতে আদানির যুক্তিগুলো বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হয়।

এরই মধ্যে ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেস্ক তালিকায় বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি থেকে ২১-এ নেমে এসেছেন তিনি। লাইভ মিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতি মূলত আদানি গ্রুপের করপোরেট শাসন সম্পর্কে পুরনো সন্দেহগুলোকেই পুনরুজ্জীবিত করেছে। ১০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি ভারতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে বড় পরিসরেক্ষুণ্ন করে। প্রতিবেদনের দাবিগুলো সত্য প্রমাণিত হোক বা না হোক ভারতের মতো দেশের নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ও হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা গ্লোবাল সিআইওর সিঙ্গাপুর অফিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি ডুগান বলেন, ‘ভারতীয় ইক্যুইটিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ঝুঁকির সম্ভাবনাগুলো বড় ধরনের পুনর্মূল্যায়নসহ অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।’ ৬০ বছর বয়সী আদানি কয়েক দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এছাড়া তার ব্যবসাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর, পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ডাটা সেন্টারের মতো পুঁজি-ঘন প্রকল্পতে বিনিয়োগ, যা একই সঙ্গে মোদির উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দু। একজন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আদানি তার ব্যবসায়িক স্বার্থকে মোদির উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। তাছাড়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সম্পদ ও শ্রম দক্ষতার অভাব থাকলেও সেখানে তিনি হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন। তাই যদি আদানির সম্পদের পতন অব্যাহত থাকে এবং আদানির সাম্রাজ্য ঘিরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো নড়বড়ে হয়, তাহলে তা ভারতের প্রবৃদ্ধির গল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে।

এইচএসবিসির মতো ব্যাংক কিংবা অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠান চীনের ওপর নির্ভরতা কাটাতে যখন ভারতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন আদানির এ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে এল। নাটিক্সিস এসএর এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরো বলেন, ‘তবে সত্যটা হচ্ছে, আদানির কেলেঙ্কারি এমন একটা সময়ে উন্মোচিত হয়েছে, যখন চীনের অর্থনীতির পুনরায় চালু হচ্ছে। তাই বিদেশী বিনিয়োগকারীরা স্পষ্টভাবেই বিষয়টি বিবেচনা করছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারসংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় এক দশক ধরে শেয়ারের মূল্যে কারচুপি করছে আদানি গোষ্ঠী। জালিয়াতি চালিয়ে আসছে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও। কৃত্রিমভাবে নিজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বহুগুণ বাড়িয়ে আদানিরা বিশাল ধনসম্পদের মালিকে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আদানি গোষ্ঠী। সপ্তাহের ব্যবধানে বড় ধরনের সম্পদ খুইয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর ১০টি সংস্থার শেয়ারে রীতিমতো ধস নেমেছে। যদিও প্রতিবেদনে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে আদানি। পাল্টা মার্কিন সংস্থাটির বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ ছুড়ে দিয়েছে তারা।

আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হিনডেনবার্গ স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটিকে ভারতের অগ্রগতিকে রুখে দেয়ার চক্রান্ত বলেও দাবি তাদের। যদিও আদানির কার্যক্রম ঘিরে খোদ ভারতীয় বিনিয়োগকারী ও মিডিয়ায় কানাঘুষা চলছিল কয়েক বছর ধরে। ভারতীয় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আদানির ব্যবসায়িক সম্পর্ককে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছে। এদিকে হিনডেনবার্গ আদানি সম্পর্কে সংক্ষেপে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। সূত্র : এপি।



 

Show all comments
  • Mohmmed Dolilur ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ২:৪৩ এএম says : 0
    চলে যাও সব কিছু ছেড়ে 2025 সালে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আদানি পরিস্থিতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ