দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
অপরাধের লক্ষণ : অপরাধী শিশুরা বিপথগামী এবং তারা বিশৃঙ্খল ও সমাজ বিরোধী আচরণ করে থাকে। সে কারণে স্বাভাবিক শিশুদের থেকে এসব বিপথগামী শিশুদের আচরণ ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। যেহেতু তারা সমাজ বিরোধী আচরণের সাথে জড়িত সে কারণে তাদের মাঝে ধ্বংসাত্মক মেজাজ এবং আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা যায়। তাদের অপরাধমূলক কিছু লক্ষণ নিম্নরূপ-
ক) এসব শিশুদের মাঝে সমাজ বিরোধী চিন্তা লক্ষ্য করা যায় এবং তারা ব্যাপকভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকে।
খ) মেজাজের দিক দিয়ে এরা আক্রমণাত্মক এবং উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
গ) শারীরিকভাবে এরা শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং এদের মাঝে দৃঢ় সংকল্প, সাহসী মনোভাব এবং আচরণ লক্ষ্য করা যায়।
ঘ) তারা পরিবার এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি অসহযোগিতামূলক এবং অনমনীয় হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে নতুন কোনো কার্যক্রম সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন এবং বিরোধিতা করার প্রবণতা দেখা যায়।
ঙ) তাদের মধ্যে বিষণ্নতামূলক এবং অস্থির আবেগীয় ব্যক্তিত্বের লক্ষণ দেখা যায়। (উচ্চতর শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, বা.উ.বি. পৃষ্ঠা-১৫৫)
কিশোর অপরাধের কারণঃ- কিশোর অপরাধের জন্য বহুবিধ কারণ দায়ী। কোনো নির্দিষ্ট কারণে অপরাধ সৃষ্টি হয় না। তবে অপরাধ বিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীগণ অপরাধ বিশ্লেষণ করে যে প্রধান প্রধান কারণ আবিষ্কার করেছেন তা নিম্নরূপ-
(১) জৈবিক কারণঃ- মনোবিজ্ঞানী করৎবংঃসধৎ, ঝযবষফড়হ, এষঁরপশং এবং খধু এর মতে, মানুষের দৈহিক গঠন এবং বৈশিষ্ট্য অপরাধ প্রবণতার জন্য দায়ী। ত্রুটিপূর্ণ দৈহিক গঠন, স্নায়ুতন্ত্রের ত্রুটি প্রভৃতি শিশু-কিশোরদের মাঝে হীনমন্যতাবোধ এবং অস্বাভাবিক আচরণের সৃষ্টি করে। ফলে সে পরিবেশের সাথে স্বাভাবিক উপযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়ে অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে।
(২) বংশগত কারণঃ- যদি বংশের কেউ অপরাধী হয় তাহলে তার প্রজন্ম অপরাধী হতে পারে। এটা জিন দ্বারা বাহিত হয়। তবে এর পক্ষে বিপক্ষে নানামত আছে।
(৩) মনোবৈজ্ঞানিক কারণঃ- মনোবিজ্ঞানী গডার্ড (এড়ফধৎফ) অপরাধ প্রবণতার জন্য মানসিক অক্ষমতা বা দোষত্রুটিকে দায়ী করেছেন। মানসিক বৈকল্য এবং অসুস্থতার সঙ্গে অপরাধ প্রবণতা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। শিশুদের অপরাধ প্রবণতার জন্য যে সকল মানসিক কারণ দায়ী তা নিম্নরূপ-
ক) প্রত্যাখ্যাত শিশু
খ) অতিরিক্ত আদর ও স্নেহ
গ) অতিশাসন
ঘ) পারিবারিক দাম্পত্য-কলহ
ঙ) অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ
চ) পিতা-মাতার অতি উচ্চাশা ছ) নিরাপত্তাবোধের অভাব (৪) পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক কারণঃ- পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক কারণকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়- ক) দারিদ্র্য খ) বিপর্যস্ত গৃহ গ) বহিঃজগতের পরিবেশ ঘ) অস্বাস্থ্যকর বিদ্যালয় প্রথা।
(৪) সামাজিক কারণঃ- শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা সামাজিক কু-সংস্কারের জন্য অনেকটা দায়ী। সামাজিক কারণের আওতায় যে সকল অপরাধ প্রবণতা দেখা যায় তা নিম্নরূপ-
ক) পারিবারিক ভাঙ্গন খ) দাম্পত্য কলহ, বিচ্ছেদ, বিবাহ বিচ্ছেদ গ) চিত্তবিনোদনের অভাব ঘ) ত্রুটিপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ ঙ) বিদেশি চিত্তবিনোদন ও সংস্কৃতির প্রভাব আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটসহ সারা দেশে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতাই দায়ী। আমাদের সমাজ ও পরিবার এখন একটি অস্থির সময় পার করছে। হঠাৎ কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এটি অন্যতম কারণ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অভাবে পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তি বা অভিভাবকদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ, সর্বোপরি বিশ্বায়নের ধাক্কায় পরিবারের বন্ধন, মূল্যবোধ সব কিছু যেন ভেঙে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পরিবারে সন্তানদেরর আগের মতো গাইড করা হচ্ছে না। ব্রোকেন ফ্যামিলির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। এসব ফ্যামিলিতে বেড়ে ওঠা সনত্দানরা পাচ্ছে না বাবা-মা দুজনেরই পরিচর্যা। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সন্তানদের সামাজিকীকরণে। অসৎ সঙ্গে পড়ে এবং অনেক সময় জীবিকা অর্জনের জন্য নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশু-কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। শুধু নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজেই নয়, উচ্চবিত্ত সমাজের শিশু-কিশোররাও ছিনতাই-রাহাজানিতে জড়িয়ে পড়েছে মাদক সেবন কিংবা অন্য কোনো কারণে টাকা সংগ্রহের জন্যই নয়, রোমাঞ্চের খোজেও তারা এসব অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেবল টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ভায়োলেন্সপূর্ণ ভিডিও গেমসকেও দায়ী করা যায়। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা ও মানব অধিকার সংগঠনের জরিপে দেখা গেছে, অপরাধের সঙ্গে জড়িত শিশুদের শতকরা ৯০ জনই মাদকসেবী। ফেনসিডিল, গাজা, হেরোইনের মতো মরণ নেশায় বুদ হয়ে থাকে তারা। আর এ নেশার খরচ জোগাতেই অপরাধ জগৎ থেকে তাদের বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন এ সুযোগটি গ্রহণ করে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। তারা শিশু-কিশোরদের দিয়ে খুন-রাহাজানির মতো বড় অপরাধ করিয়ে থাকে। কারণ অপ্রাপ্তবয়স্করা আইনগতভাবে কিছুটা ছাড় পেয়ে থাকে এবং পুলিশও তাদের তেমন একটা সন্দেহ করে না ও নজরদারির মধ্যে রাখে না। সাধারণত দেখা যায়, অপরাধী শিশু-কিশোরদের শিশু-কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রে না পাঠিয়ে বয়স বাড়িয়ে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে। এতে তারা সংশোধিত না হয়ে আরো বড় ধরনের অপরাধী হয়ে উঠছে বলে অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন। শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা রোধে আমাদের সচেতন হতে হবে। এ জন্য সমাজ বিজ্ঞানী ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধ রৰার বিষয়টির দিকেও জোর দিতে হবে। পরিবার হচ্ছে মানুষ গড়ার সবচেয়ে বড় কেন্দ্র। পারিবারিক মূল্যবোধ আর্দশের চর্চা যেখানে থাকবে সেখানে কিশোররা ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। যেসব পরিবার তার সন্তানদের ব্যাপারে সচেতন সেসব পরিবারের সন্তানরা কখনো বিপথে যায় না। তাই কিশোর অপরাধ রোধে পারিবারিক মূল্যবোধ ও আর্দশের চর্চা বাড়াতে হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে শিশু-কিশোরদের ভয় দেখানো উচিত নয়। ভয় দেখিয়ে সাময়িকভাবে তাদের হয়ত কিছুদিন অনৈতিকতা থেকে দূরে রাখা সম্ভব। কিন্তু অচিরেই তা আরো দারূণভাবে প্রকাশ পায়। তাই প্রত্যেক বাবা-মায়েরই উচিত ছোটবেলা থেকেই তাদের সন্তানদের স্নেহময় পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ রেখে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় এবং নৈতিক-অনৈতিক বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেয়া। তাছাড়া শিশু-কিশোরদের বর্তমান যান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আবদ্ধ না রেখে তার মধ্যে কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে তাদের সৃজনশীল কাজে যুক্ত করা প্রয়োজন।
তবে নৈতিক শিক্ষার (ধর্মীয়) বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিশু-কিশোররা ক্রমশ নৈতিক শিক্ষা থেকে দূরে সরে আসছে বলেই তাদের একটা অংশ আজ বিপথগামী হয়ে পড়েছে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে মানবিক ও নৈতিক শিক্ষার অনুসঙ্গ যুক্ত করা খুবই প্রয়োজন। তাদের মাঝে মানবিক ও নৈতিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধের প্রসার ঘটাতে না পারলে তাদেরকে কখনোই অবক্ষয় এবং অধঃপতনের হাত থেকে বাঁচানো যাবে না। তাই এই ব্যাপারে সরকার এবং অভিভাবকদের অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। তবেই এই আত্মঘাতি সামাজিক অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হতে পারে।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।