Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদানী গ্রুপ ভারতীয় পতাকায় শরীর ঢেকে লুট করছে : হিনডেনবার্গ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ বলেছে, সংস্থাটি জাতীয়তাবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আদানি গোষ্ঠির দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ এবং যাবতীয় যুক্তি নাকচ করে হিনডেনবার্গ বলেছে, আমরা বিশ্বাস করি, জালিয়াতি জালিয়াতিই। এভাবে পৃথিবীর অন্যতম ধনী হলেও তা জালিয়াতিই।

এদিকে আলোচিত এই আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রতিমন্ত্রী বলছেন, মার্চ মাসে বিদ্যুৎ আসবে। প্রশ্ন হচ্ছে সত্যেই ক মার্চমাসে আদানী গ্রুপ বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেবে?

হিনডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ গুজরাটি শিল্পগোষ্ঠী আদানিদের অস্বাভাবিক বাণিজ্যিক উত্থানের পেছনে জালিয়াতি ও শেয়ারবাজারে কারচুপিকে বড় করে দেখানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় সেই দুর্নীতির প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। সেই প্রতিবেদনের কারণে এই গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারে ধস নামে। আদানিদের বিভিন্ন শেয়ারের দাম হু হু করে পড়ে যায়। বাজারে ছাড়া তাদের এফপিও (তালিকভুক্ত কোম্পানির বাজারে অধিকতর শেয়ার ছাড়া) ধুঁকতে থাকে। দুই দিনে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় ৮০ হাজার কোটি রুপি। আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নিকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারতীয় জীবনবিমা করপোরেশন (এলআইসি) ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বিপুল লোকসান হয়।

ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গোষ্ঠী গত রোববার ৪১৩ পৃষ্ঠার এক জবাবি বয়ান তৈরি করে হিনডেনবার্গের কাছে পাঠায়। তাতে বলা হয়েছে, ভারতের আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে হিনডেনবার্গের স্পষ্ট ধারণা নেই। বাজারে পুঁজি সংগ্রহ কীভাবে করা হয়, সে বিষয়েও তাদের ধারণা কম। তাই তারা ভিত্তিহীন অভিযোগ খাড়া করেছে।

আদানি গোষ্ঠীকে মোট ৮৮টি নির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হয়েছিল। তারা ৬২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘ জবাবদিহির মধ্যে মাত্র ৩০ পৃষ্ঠায় তারা মূল বিষয়গুলোর অবতারণা করেছে। বাকি পৃষ্ঠায় রয়েছে অবান্তর সব বিষয়ের উল্লেখ করে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবাগর্।

আদানি গোষ্ঠী বলেছে, হিনডেনবার্গের ওই প্রতিবেদন কোনো নির্দিষ্ট সংস্থার ওপর অযৌক্তিক আক্রমণ নয়। এর মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ভারতকে, তার স্বাধীনতা ও সংহতিকে এবং ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক গুণমানকে আক্রমণ করা হয়েছে। আক্রমণ করা হয়েছে ভারতের প্রবৃদ্ধি ও আকাংক্ষাকে। আদানি গোষ্ঠী ওই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, অশুভ মনোভাব নিয়ে ভ্রান্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করে তৈরি ওই প্রতিবেদন দুরভিসন্ধিমূলক।
আদানি গোষ্ঠীর জবাব প্রত্যাখ্যান করে গতকাল সোমবার পাল্টা উত্তর দেয় হিনডেনবার্গ। তারা বলে, মূল বিষয়গুলো থেকে নজর ঘোরাতেই ওই গোষ্ঠী জাতীয়তাবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। নিজের ও সংস্থার মাত্রাছাড়া শ্রীবৃদ্ধিকে দেশের উত্থানের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা একমত নই। কারচুপি কারচুপিই।

হিনডেনবার্গ বলেছে, আদানি গোষ্ঠীকে মোট ৮৮টি নির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হয়েছিল। তারা ৬২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘ জবাবদিহির মধ্যে মাত্র ৩০ পৃষ্ঠায় তারা মূল বিষয়গুলোর অবতারণা করেছে। বাকি পৃষ্ঠায় রয়েছে অবান্তর সব বিষয়ের উল্লেখ। যেমন কীভাবে তারা নারীদের উদ্যোগী হতে সাহায্য করছে কিংবা কীভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

ভারতকে খাটো করার যে অভিযোগ হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে আদানি গোষ্ঠী এনেছে, সেটা খÐন করে মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তাদের অভিযোগ নির্দিষ্ট এক সংস্থার বিরুদ্ধে। ভারতের বিরুদ্ধে নয়। ভারতের গণতন্ত্র প্রাণবন্ত। ভারত শিগগিরই বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় ঢুকতে চলেছে।

হিনডেনবার্গ বলেছে, আমরা বিশ্বাস করি, ভারতের ভবিষ্যতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আদানি গোষ্ঠী। ভারতীয় পতাকায় শরীর ঢেকে তারা দেশকে লুট করে চলেছে।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবারের পর গতকাল সোমবারও আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমেছে। আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও ৪ শতাংশ বাড়লেও তা প্রত্যাশা ছুঁতে পারেনি। আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারের দাম গতকাল ২০ শতাংশ কমেছে। আদানি গ্রিন এনার্জি শেয়ারের দাম পড়েছে ১৮ শতাংশ। আদানি পাওয়ার ও আদানি উইলমারের দাম পড়েছে ৫ শতাংশ করে। শ‚ন্য দশমিক ৫ শতাংশ দাম পড়েছে আদানি পোর্টস ও স্পেশাল ইকোনমিক জোনের শেয়ারের।

এদিকে উল্লেখ, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুত ক্রয়ের জন্য ভারতের এই বিতর্কিত আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ঝাড়খন্ডে ৮০০ মেগাওয়াট করে করে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় দুটি সাবস্টেশন ও অন্যান্য সঞ্চালন কাজ পিজিসিবি নির্মাণ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ না নিয়েই বিপুল পরিমান অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন মার্চমাসের মাঝামঝি সময় আদানি গ্রæপ বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। ৩ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরো জানান, প্রথম ইউনিট থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মার্চের মাঝামাঝি পাওয়া যেতে পারে। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আদানী গ্রুপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ