Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ছাত্রলীগ কি আপনাকে নিয়োগ দিয়েছে

চবি ভিসিকে ওবায়দুল কাদের

প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি না করে বিরোধ মিটিয়ে ফেলুন মহিউদ্দিন-নাছিরকে ওবায়দুল কাদের

 

চট্টগ্রাম ব্যুরো : নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি না করে দ্রুত বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল (রোববার) নগরীর চশমা হিলে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্দেশে এ আহ্বান জানান তিনি। একই সাথে ছাত্রলীগের মধ্যে বিরাজমান কলহ-কোন্দলও দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন তিনি।
মূলত চট্টগ্রাম মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কলহ-বিরোধ মিমাংসায় ওই বৈঠক হলেও মূল দল আওয়ামী লীগের কলহ-বিরোধের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কঠোর ভাষায় কয়েকজন নেতাকে ভর্ৎসনা করেন। তিনি দলের বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করার কঠোর নির্দেশনা দেন।
জাতীয় কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর এর আগে একবার চট্টগ্রাম আসেন ওবায়দুল কাদের। ওইদিন লালদীঘি ময়দানে দলীয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ঘরোয়া কয়েকটি অনুষ্ঠানে তিনি নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়ে যান। তারই ধারাবাহিকতায় গতকালের বৈঠক বলে জানান দলের সিনিয়র নেতারা। গতকাল সকালে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় প্রাতরাশ বৈঠকে সিনিয়র নেতাদের সাথে বসেন তিনি। দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি আগামী তিন মাসের মধ্যে সব ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দল’ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, আর কোনো খারাপ খবরের শিরোনামে ছাত্রলীগকে তিনি দেখতে চান না।
মহিউদ্দিনের বাসার ওই আলোচনার সময় সিটি মেয়র নাছির উদ্দীনও ছিলেন। চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন ও নাছিরের সমর্থক ছাত্রলীগের কোন্দল প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়। জানা গেছে, ওই বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার উদ্দিনকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি ভিসিকে উদ্দেশ করে বলেন, ছাত্রলীগ কি আপনাকে ভিসি বানিয়েছে? নাকি ছাত্রলীগ আপনাকে চেয়ারে রাখতে পারবে?
বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফীন, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন উপস্থিত ছিলেন।
তবে মেয়র আ জ ম নাছিরের সমর্থক হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু ছিলেন না। এমন সময়ে ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বসলেন, যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দরপত্র ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল চরমে উঠেছে। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির দুই মেরুতে থাকা মহিউদ্দিন-নাছিরকে কেন্দ্র করে মহানগর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও বিভক্ত।
তবে ওই প্রাতরাশ বৈঠককে রুটিন ওয়ার্ক বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি। নির্বাচনের জন্য আমরা ‘অল আউট প্রিপারেশনে’ যাচ্ছি। সেজন্য আমি চট্টগ্রাম দিয়ে শুরু করলাম।
তিনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নিয়ে ঘরোয়া আলোচনা করেছি। এখানে ছাত্রলীগ রিলেটেড কিছু সমস্যা হয়। সমস্যাগুলো যাতে না হয় সেজন্য আলোচনা করেছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের সংঘর্ষে জড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে আর খারাপ খবরের শিরোনামে দেখতে চাই না, এ সময় চবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইফরান চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টিকে ‘কনফিউজিং’ বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি। আগামী তিন মাসের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো মেটানোর পাশাপাশি ছয় মাসের মধ্যে সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করার কথা জানান তিনি। দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, অপকর্ম সংশোধন না হলে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিকভাবে দমন করা হবে বলে নেতাদের সতর্ক করে দেন ওবায়দুল কাদের
বৈঠক সূত্র জানায়, নাস্তার টেবিলে যাওয়ার আগে নগরীতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চান ওবায়দুল কাদের। মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের সব ওয়ার্ডে কমিটি আছে। নেত্রী নিজেই মহানগর কমিটি দিয়েছেন। তবে সব ওয়ার্ড সমানভাবে অ্যাকটিভ নয়। এসময় ওবায়দুল কাদের নওফেলের মোবাইল ফোনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি হানিফকে সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমকে নিয়ে চট্টগ্রাম এসে সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দেন।
রুদ্ধদ্বার সেই কক্ষে উপস্থিত একটি সূত্রে জানা গেছে, নাস্তা করার এক ফাঁকে ওবায়দুল কাদের বলেন, মহিউদ্দিন ভাই, আপনি আমাদের মুরব্বী। আপনি আমার নেতা। নাছির আমাদের ছোট। আপনি নাছিরের নেতা। সহযোগী সংগঠন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের টুকটাক সমস্যা থাকবে। কিন্তু আপনারা নিজেরা যদি কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি করেন তাহলে বিষয়টা কেমন লাগে? কোন সমস্যা থাকলে আমাকে সরাসরি জানাবেন। আমি সমাধান করতে পারব। আমি পারব না মনে করলে নেত্রীকে জানাবেন। কিন্তু নিজেরা নিজেরা কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি করবেন না। এসময় নাস্তার টেবিলে ওবায়দুল কাদেরের দুই পাশে বসা মহিউদ্দিন ও নাছির নিশ্চুপ থাকেন।
জঙ্গী হামলার ব্যাপারে
জনগণকে সচেতন থাকতে হবে
ফেনী জেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জঙ্গি হামলার ব্যাপারে দেশের জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। জঙ্গি নির্মূলে বর্তমান সরকার অত্যন্ত  দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।  জঙ্গিরা বসে নেই, তারা আরো হামলা চালাতে পারে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গি মোকাবেলা করতে হবে। গতকাল দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুরে নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাসের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে প্রতিনিয়ত মহাসড়কের এ অংশে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, ফলে তাদের বাদ দিয়ে কাজটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মন্ত্রী। পূর্বের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান  পিবিএল  দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৪ বছর ৪ মাসে মাত্র ৫১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছিল। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বি.কম, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল ও ফেনী পৌসভার প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীসহ মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সেনা অফিসার, সড়ক ও জনপথ কর্মকর্তা এবং আ‘লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীবৃন্দ।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:১৩ এএম says : 0
    আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সুন্দর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এভাবে কঠিন হাতে ছাত্র লীগকে আয়ত্তে আনতে পারলেই দলের উন্নতী অবধারিত। কিন্তু সিনিয়র নেতারা কি এটা মানতে পারবেন এটাই এখন দেখার বিষয়। তিনি আরো একটা ভাল কথা বলেছেন ভিসিকে এতেকরে অন্যান্য ভিসির কাছেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের অবস্থানের সংবাদ পৌছে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজমুল হাসান ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছ থেকে অন্যান্য রাজনীতিবিদদের অনেক কিছু শেখার আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • শরীফ ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:৫৭ পিএম says : 0
    নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি কখন ভালো হয় না। তাই এগুলো না করে বিরোধ মিটিয়ে ফেলাই ভালো।
    Total Reply(0) Reply
  • আল আমিন ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:৫৯ পিএম says : 1
    আশা করি ছাত্রলীগ তাদের নেতা কথা মেনে চলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মিল্লাত ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:০১ পিএম says : 0
    কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইফরান চৌধুরীর ‘কনফিউজিং’ মৃত্যুর বিষয়টির সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Murad ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:০৩ পিএম says : 0
    সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গি মোকাবেলা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহে আলম ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:০৬ পিএম says : 0
    শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের সন্ত্রাসের প্রোশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Anower ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:০৮ পিএম says : 0
    Many many thanks to the Minister for his brilliant speech about VC of CU
    Total Reply(0) Reply
  • Sajib ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:১০ পিএম says : 0
    I want to request to The Minister to be strict about Highway
    Total Reply(0) Reply
  • সালাউদ্দিন ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:১২ পিএম says : 0
    ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দল ও সরকার উভয়ই বিপদে পড়বে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ