দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর: মোবাইলের রিংটোন হিসেবে অনেকেই গানের বাজনা, গান ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। এটা যে নিন্দনীয় ও নাজায়িয তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর বিপরীতে কিছু ভাই আযান, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তাদের নিয়ত অবশ্যই ভালো। কিন্তু নিয়ত ভালো হলেও এ কাজটি ঠিক নয়। কারণ কুরআন আল্লাহর কালাম। কুরআন তিলাওয়াত অনেক বড় সওয়াব ও ফযীলতের আমল। কুরআন তিলাওয়াত শোনাও অনেক সওয়াবের কাজ। তেমনি আযান আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও তাসবীহ সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি, যা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ শিআর বা প্রতীক। এগুলো নিজেদের কাজে ব্যবহারের জন্য নয়। তাই এ বিষয়ে ইসলামী শরীআতের সঠিক সিদ্ধান্ত জানা দরকার। এ ব্যাপারে ইসলামী শরীআতের মূলনীতি হলো- আল্লাহ তাআলার নাম, কুরআনের আয়াত, আযান, সালাম বা দরূদ শরীফ ইত্যাদিকে কাউকে সতর্ক করার জন্য বা ডাকার জন্য ব্যবহার করা জায়েয নেই। আর মোবাইলের রিংটোনও যেহেতু সতর্ক করা ও ডাকার সমার্থক। তাই মোবাইলের রিংটোন হিসাবে আল্লাহর নাম, আযান, সালাম, দরূদ শরীফ ও কুরআনের আয়াত ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। সুতরাং এ জাতীয় কর্ম থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। মূলত মোবাইলের রিংটোন হিসাবে কুরআনের আয়াত, আযান, সালাম, আল্লাহু আকবার ইত্যাদির ব্যবহার নাজায়িয হওয়ার উপরোক্ত কারণ ছাড়াও আরও অনেক কারণ রয়েছে। এখানে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো- ১.আযান আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ, বড়ত্ব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের সাক্ষ্য সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি যা ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিআর বা প্রতীক। অনুরূপভাবে পবিত্র কুরআনের আয়াত ও আল্লাহ তা‘আলার নামের জিকির যে কত মর্যাদাপূর্ণ বিষয় তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিকে মোবাইলে রিং আসার অর্থ হলো, আপনাকে একথা অবহিত করা যে, কেউ আপনার সাথে কথা বলতে চায়। এখন ‘কেউ আপনার সাথে কথা বলতে চায়’ এই খবরটুকু দেওয়ার জন্য কি মহান আল্লাহর বড়ত্ব সম্বলিত আজান ও মহামর্যাদাপূর্ণ কুরআনের আয়াত বা জিকির ব্যবহার করা কি আদৌ উচিত হবে? এসব আওয়াজকে এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করাটা পবিত্র শব্দসমূহকে অবমাননা ও অপাত্রে ব্যবহার করার শামিল নয় কি? কোনো বিক্রেতা যদি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য জোরে জোরে সুবহানাল্লাহ বলে কিংবা কোনো পাহারাদার যদি জোরে জোরে জিকির করার মাধ্যমে নিজের জাগ্রত থাকার বিষয়টি লোকজনকে অবহিত করে তাহলে ফিকাহবিদগণ একেও পবিত্র শব্দসমূহের অপব্যবহার বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং মাকরুহ বলেছেন। এবার আপনারাই চিন্তা করে দেখুন, এসব ক্ষেত্রে যদি জিকিরের ব্যবহার ‘পবিত্র শব্দসমূহের অপব্যবহার’ হয়ে থাকে তাহলে ‘মোবাইলে কল এসেছে’ এ খবর দেওয়ার জন্য কুরআন তিলাওয়াত, আজান ইত্যাদির ব্যবহার কেমন হবে? ২.মোবাইল নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করার পর রিং আসলে অপবিত্র স্থানে পবিত্র তিলাওয়াত, আজান, জিকির ইত্যাদি বেজে উঠবে। এতে এগুলোর পবিত্রতা কত মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ৩.রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত ব্যবহার করলে অনেক সময় এমন হওয়া স্বাভাবিক যে, কে কল করেছে তা দেখা ও কল রিসিভ করার ব্যস্ততার দরুণ তিলাওয়াতের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার সুযোগ হয় না। অথচ আদব হলো, কুরআন তিলাওয়াত চলতে থাকলে কাজ বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে তিলাওয়াত শ্রবণ করা। ৪.কারো মোবাইলে রিং আসলে সে যেহেতু রিসিভের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং রিসিভ করাই তার মূল উদ্দেশ্য থাকে, তাই আয়াতের যে কোনো স্থানেই তিলাওয়াত চলতে থাকে সেদিকে খেয়াল না করে রিসিভ করে ফেলে। ফলে অনেক সময় উচ্চারিত অংশের বিবেচনায় আয়াতের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। আর পবিত্র কুরআনের অর্থ বিকৃতি যে কত বড় গুনাহের কাজ তা বলাই বাহুল্য! মোটকথা বহু কারণেই আযান, যিকর, তিলাওয়াত ইত্যাদিকে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে হাঁ, যে রিংটোনে গানের সুর বা বিশেষ কোনো তাল নেই তা ব্যবহারে দোষের কিছু নেই। যেমন অনেক মোবাইলে ল্যান্ডফোনের আওয়াযের মত বা সাইকেলের বেলের মত রিংটোন থাকে- এ ধরনের রিংটোন ব্যবহারে দোষ নেই। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন। [আল আশবাহ ওয়ান্ নাযায়ের, পৃষ্ঠা- ৩৫ আল কাফী:১/ ৩৭৬ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি:৫/ ৩১৫, আততিবইয়ান ফি আদাবি হামালাতিল কুরআন- ৪৬, রদ্দুল মুহতার- ১/ ৫১৮; হুক্কুত তিলাওয়া,শাইখ উসমান: ৪০১]
উত্তর দিচ্ছেন: মুফতী পিয়ার মাহমুদ, সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলূম, মোমেনশাহী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।