Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগের নয়া সমীকরণ

ইউপি নির্বাচন

প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তৃণমূলের একক প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। ক্ষমতাসীন দলের সক্রিয় নেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় আওয়ামী লীগকে অনেক ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের ভূমিকাও এড়াতে পাড়ছে না দলটি। স্থানীয়দের মতপার্থক্য বা তৃণমূলের তোয়াক্কা না করে প্রার্থী বাছাইয়ে ভূমিকা রাখছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। দলীয় সমর্থন না পেলে অনেকেই স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করতে পারেন, সে সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে দলটিকে। একই সঙ্গে ইউপি নির্বাচন ঘিরে সরকারের কর্মকা- ও দলীয় কার্যক্রমের সঠিকতা যাচাইয়ের পাশাপাশি রাজনীতির নতুন সমীকরণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ বলেন, তৃণমূলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০৩টি ইউনিয়নের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকী ২৩৬টির তালিকাও শুক্রবারের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আর এ মনোনয়নপত্র শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বিতরণ করা হবে।
অর্থের বিনিময়ে বিএনপি সমর্থক ও রাজাকারের পুত্রকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে দলের তৃণমূল থেকে অভিযোগ প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ একটি পুরানো রাজনৈতিক দল। এখানে যোগ্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভাব নেই। তাই আমাদের প্রয়োজন নেই অন্য দল থেকে হায়ার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেয়ার।
এদিকে, ইউপি নির্বাচন ঘিরে সরকারের কর্মকা- ও দলীয় কার্যক্রমের সঠিকতা যাচাইয়ের পাশাপাশি রাজনীতির নতুন সমীকরণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সরকারের কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা জরিপ করছে। তার ফলাফলও সরকার ও দলের হাতে এসেছে। অবশ্য জরিপের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্নও রয়েছে। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তৃণমূল মানুষের প্রত্যক্ষ রায় পাওয়া যাবে। আর এই ফলাফল রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের সঠিকতা নিশ্চিত করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আমরা যদি অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান পদে জয় লাভ করি, তাহলে আমরা সরকারী সিদ্ধান্ত ও দলীয় ভিশন বাস্তবায়নে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো। ইউপি নির্বাচনের ফলাফলে আমরা বুঝতে পারবো জনগণ সরকারের পদক্ষেপগুলোকে সমর্থন করছে কী না।
দলটির সভাপতিম-লীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, বিরোধীদলের সরকার বিরোধী রাজপথের আন্দোলনে জনসমর্থন পায়নি। অপরদিকে নির্বাচনের ফলাফলেও সরকার বিরোধী জনরায় আসেনি। সেক্ষেত্রে সরকারের কার্যক্রম যাচাইয়ের জন্য তৃণমূল ভোটের কোন বিকল্প নেই। পৌর নির্বাচনে বিরোধীরা যদি আমাদের চেয়ে বেশি, কিছু কম অথবা সমানও পেত তাহলে রাজনীতির হিসেবটা এক রকম হতো। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যদি বিরোধীরা আমাদের চেয়ে বেশি পায় তাহলে আমরা একভাবে ভাববো। আর যদি আমরা বিরোধীদের চেয়ে বেশি পাই তাহলে সরকার ও দলীয় কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য আরও গতিশীল কার্যক্রম পরিচালনা করবো।
দলের নেতারা মনে করেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পারাটাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন সফল হওয়ার মাধ্যমে সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাই করা যাবে। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে সেক্ষেত্রে দলীয় জনপ্রিয়তার প্রশ্নটিও রয়েছে।
আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৩৯ ইউপিতে ভোট হবে। আগ্রহীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। পরে আরও পাঁচ ধাপে সাড়ে তিন হাজার ইউপির ভোট হবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে ভোট হবে। প্রতি ইউনিয়নে একজন করে প্রার্থী দেয়ার সুযোগ রয়েছে নিবন্ধিত ৪০টি দলের সামনে। এর বাইরে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। ইসি সূত্রে জানা যায়, প্রথমধাপের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রত্যয়নের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসিকে দেয়ার নির্ধারিত দিন ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় প্রার্থীর দলীয় প্রত্যয়নও সঙ্গে জমা দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ এবার তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী দেয়ার কথা জানিয়েছে। সেই তৃণমূল মতামতে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলেও দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যয়ন দিচ্ছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।   
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য ইনকিলাবকে বলেন, ইউপির মতো তৃণমূল পর্যায়ে দলীয়ভাবে ভোট আমাদের এ অঞ্চলে এটাই প্রথম। প্রথমবার বলে প্রার্থী বাছাই কিছুটা সমস্যা হবেই। আমাদের দলে সক্রিয় নেতাকর্মী বেশি হওয়ায় একক প্রার্থী বাছাই জটিল হবে। তবে শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে বলেই আমরা আশা করছি।
আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মনোনয়ন বঞ্চিতদের দলছুট হওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও আওয়ামী লীগে সেই আশঙ্কা অনেক কম। ভোট সামনে রেখে কেউ যেন দলে আসার সুযোগ না পায়- সে দিকেও নজর রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এটা চ্যালেঞ্জ হলেও অনেক এলাকায় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। আমরা সতর্ক রয়েছি; সংসদ সদস্যদের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ বিদ্রোহী হয়- তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হবে।
নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা মনোনয়নে প্রভাব সৃষ্টি করছেন এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, অনেক সংসদ সদস্য রয়েছেন যারা জেলা সভাপতি। তারা এলাকার রাজনীতি করেন। তাদের ওপর দলের আস্থা রয়েছে যে, সংসদ সদস্য হিসেবে তারা তৃণমূলের উপর প্রভাব খাটাবেন না। তবে দলীয় সভানেত্রীর কাছে তৃণমূলের তথ্য আসছে। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অন্য কেউ নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগের নয়া সমীকরণ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ