বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ফেরাউন মূসা (আ.) কে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, এ কথা শোনার পর মূসা (আ.) কে জীবন রক্ষার্থে মিসর ছেড়ে মাদইয়ানে চলে আসতে হয়। অজানা-অচেনা জনপদে ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে তিনি দেখেন, দু’টি মেয়ে পানি পান করানোর জন্য মেষপাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কুয়া থেকে পানি পান করাতে পারছেন না। খবর নিয়ে জানা গেল, এদের বাবা বয়োবৃদ্ধ, মেষপালকে পান করানোর মতো বয়স তার নেই। নিরুপায় হয়ে এই মেয়েরা নিজেরাই মেষপালকে পানি পান করাতে এসেছেন। পুরুষ মেষপালকদের সঙ্গে একসাথে পানি পান করানো সম্ভব নয় বলে তারা অপেক্ষা করছেন।
মূসা (সা.) তাঁদের সম্মানার্থে মেষপালকে পানি পান করিয়ে দিলেন। কাজ শেষ হলে তাঁরা বাড়ি ফিরে গেলেন আর তিনি একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রামের জন্য বসলেন। ভিনদেশে তার, না খাদ্যের কোনো ব্যবস্থা ছিল আর, না থাকার কোনো বন্দোবস্ত। গতকাল পর্যন্ত যিনি ছিলেন ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে রাজসিক সব ব্যবস্থাপনা ও আয়োজনের মাঝে, আজ তার থাকা ও খাওয়ার ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও নেই!
বাহ্যত কোনো বন্দোবস্ত না থাকলেও তিনি জানতেন, সেই মহান রাব্বুল আলামীন তার সঙ্গে আছেন, জীবনের নানা প্রবাহে যিনি তাঁকে হেফাযতের বিস্ময়কর সব ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। ফেরাউনের তল্লাশিবাহিনী যখন বনী ইসরাঈলের নারীদের কোল থেকে পুত্রসন্তান ছিনিয়ে নিয়ে মমতাময়ী মায়ের কোল খালি করছিল, তখন তার রব অদ্ভুতভাবে তাঁকে রক্ষা করেছেন।
যখন তাঁর জন্মদাত্রী মা ফেরাউন বাহিনী থেকে রক্ষার জন্য তাকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, জন-মানুষ থেকে বহু দূরে নদীর তরঙ্গ-প্রবাহে যখন তিনি একাকী অজানার পথে ভেসে যাচ্ছিলেন তখনও তার রব তার সঙ্গে ছিলেন। রাব্বুল আলামীনের ইশারায়ই সেদিন ফেরাউনপতœী তাঁকে নদী থেকে তুলে নিয়েছিল। যে ফেরাউন তাঁর কাছ থেকে বাঁচার জন্য এত এত নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেছিল তার রব তাকে সেই ফেরাউনেরই প্রাসাদে স্বয়ং তার স্ত্রীর কোলে বড় করেছেন!
সেই মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি পূর্ণ আস্থা নিয়ে সমর্পিত চিত্তে তিনি প্রার্থনা করলেন : হে আমার রব! আপনি আমার প্রতি যে কল্যাণ বর্ষণ করবেন, আমি তার ভিখারী। (সূরা কাসাস : ২৪)। বড় হৃদয়স্পর্শী প্রার্থনাবাক্য। নিজের প্রয়োজনের কথা তো অকপটে তুলে ধরলেন, কিন্তু নির্দিষ্ট করে কিছু চাইলেন না। বরং আল্লাহর কাছে ন্যস্ত করে দিলেন, আপনি যা-ই আমাকে দান করবেন, তাই আমি হাত পেতে গ্রহণ করব। আমি আপনার দরবারের এক নগন্য ভিখারী!
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর দু’আ কবুল করলেন। দেখা গেল, দুই মেয়ের এক মেয়ে লজ্জাবনত পদে ফিরে এসে বলছেন, আমার বাবা আপনাকে ডাকছেন। আপনি আমাদের উপকার করেছেন, তাই তিনি আপনার জন্য কিছু করতে চান। মূসা (আ.) বুঝতে পারলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গায়েব থেকে তার জন্য কোনো ব্যবস্থা করেছেন। একটু আগেই তিনি তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছেন। তাই তিনি তাদের বাবার কাছে যেতে রাজি হয়ে গেলেন।
এর পরের ঘটনা লম্বা। উক্ত বয়োবৃদ্ধের ঘরে পৌঁছার পর তিনি তাকে মিসর থেকে বেরিয়ে আসার কথা খুলে বলেন। বৃদ্ধ তাকে সান্ত¡না দেন এবং তাঁদের কাছেই তাকে থেকে যেতে বলেন। তিনি তাঁর প্রস্তাব মেনে সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় দশ বছর সেখানে অবস্থানের পর তিনি মিসরে ফিরে আসেন। আসার পথে তুর পর্বতে তাকে নবুওত দান করা হয় এবং তিনি নবুওতের মহান দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন।
মূসা (আ.) এই প্রার্থনা এবং আল্লাহর গায়েবী সাহায্য থেকে আমরা শিক্ষা পাই : ক. সমস্যা-সঙ্কটে আল্লাহর প্রতি অভিনিবিষ্ট হওয়া চাই। একনিষ্ঠ মনে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা হলে আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দান করেন। খ. নির্দিষ্ট কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে যেমন প্রার্থনা করা যায় তেমনি অনির্দিষ্টভাবেও তাঁর কাছে প্রার্থনা করা যায়। গ. আল্লাহ আপন অসীম হিকমতে বান্দার জন্য যখন যে বিষয়ের ফায়সালা করেন, মুমিনের কর্তব্য, সেটি খুশি মনে এবং সাদরে গ্রহণ করা। কারণ কীসে বাস্তবিক কল্যাণ তা আল্লাহই ভালো জানেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।