Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জজ মিয়া একজন আলোকিত নেতার গল্প

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

এ যুগের নেতাদের থেকে তিনি ছিলেন আলাদা। জাতীয় সংসদে দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি জনগণের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন; নিজের জন্য কিছুই করেননি।
অথচ এখন মন্ত্রী-এমপি রাজনীতিকরা জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা বলে নিজেদের পকেট ভারি করেন। বৈধ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও দুর্নীতি-লুটপাট করে শত শত কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, কানাডায় বেগম পাড়ায় আলিশান বাড়ি, দুবাইয়ে বাড়ি এবং আমেরিকায় টাকার পাহাড় গড়ে তুলছেন। সুইচ ব্যাংকে টাকার পাহাড় গড়ছেন। অথচ ময়মনসিংহ-৮ (গফরগাঁও) আসনের দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়ে জনসেবা করলেও এনামুল হক জজ মিয়ার শেষ জীবন কেটেছে সরকারি আবাসনের ঘরে। মৃত্যুর আগে তার ভাগ্যে জুটেনি ওষুধ, ছিল না খাবার কেনার টাকাও। এযুগের নেতারা কি এনামুল হক জজ মিয়ার জীবন থেকে কিছু শিক্ষা নেবেন?

এনামুল হক জজ মিয়া গত ১১ জানুয়ারি উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামে প্রায় এক বছর ধরে বসবাস করা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ইন্তেকাল করেন। অনেক সময় ঘরে খাবার থাকত না। তখন পাশের বাড়ির লোকজনের কাছেও তিনি খাবার চাইতেন। কেউ দিত, কেউ দিত না। আবাসনের প্রায় সবার জীবনই কষ্টের। অথচ এমপি থাকার সময় বরাদ্ধ দেওয়া জমিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, গফরগাঁও সরকারি কলেজ। তিনি খাইরুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এছাড়াও বিনাপয়সায় এলাকার অনেক মানুষকে চাকরি দিয়েছেন।

এই সাবেক এমপির মৃত্যুর পর গত ১৩ জানুয়ারি তার সঙ্গী স্ত্রী রুমা হক সাবেক এই এমপির জীবনের নির্মম দুঃখ-গল্প তুলে ধরেন। কিন্তু দেশের গণমাধ্যমগুলো সেই দুঃখগাথায় গুরুত্ব দেননি। তিনি জানান, সাবেক এমপি এবং মুক্তিযোদ্ধা জজ মিয়ার মৃত্যুর আগে তার আগের স্ত্রী-সন্তানরা কেউ দেখতে আসেনি বা খোঁজ রাখেনি। তিনি বলেন, জজ মিয়া অনেক উদার ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন। প্রায় ১২ বছর আগে জজ মিয়ার সংসারে আসি আমি। প্রথম দিকে বুঝতাম অনেক দুঃখ ছিলো তার মনে। কিন্তু কেন তার জীবনের এমন পরিণতি বা কষ্ট তা বলেননি কোনো দিন। দুইবার এমপি হয়ে এলাকার অনেক মানুষের উপকার করেছেন। শুনেছি তার কাছে এসে কেউ নিরাশ হয়ে ফিরে যায়নি। জীবনে ব্যাপক ধন-সম্পদ তার না থাকলেও চলার মতো জমি-সম্পত্তি ছিলো এলাকায়। কিন্তু জীবনের শেষ দিনগুলো অনেক কষ্টে কেটেছে তার। একজন সাবেক এমপির জীবনে এত কষ্ট! তিনি বলেন, সংসার চালাতে গিয়ে গ্রামে যে জমিটুকু ছিলো তা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তিনি ভুমিহীন হিসেবে সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘরে।

সূত্র জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের পালিত মেয়েকে বিয়ে করে জাতীয় পার্টি থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এনামুল হক জজ মিয়া। তখন টানা ৯ বছর দাপুটে এমপি থাকা অবস্থায় বিনা পয়সায় এলাকার অনেক মানুষকে চাকরি দিয়েছেন। এলাকার উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের চাকা ঘুড়ালেও নিজের জন্য কিছুই করেননি।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার একটি বংশীয় পরিবারের সন্তান জজ মিয়া। তার বাবা স্বনামধন্য স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তাছাড়া জজ মিয়ার ভাই-ভাতিজারা প্রতিষ্ঠিত। অথচ এক সময় জজ মিয়া তাদের সবার কাছেই পরিবারের ‘আলোকিত’ মানুষ থাকলেও শেষ জীবনের দুঃখ-কষ্টে কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু কেন বা কী ক্ষোভে তারা এমন করেছে- এর কারণ জানা নেই। তবে জজ মিয়ার শেষ জীবনের এই করুণ পরিণতিতে ব্যথিত এলাকার সাধারণ মানুষ।

স্ত্রী রুমা হক জানান, এরপর প্রায় ১২ বছর আগে এমপি সাহেব আমাকে বিয়ে করেন। তখন থেকেই কোনো রকমে দুঃখ-কষ্টে চলছিল আমাদের সংসার। আমাদের দাম্পত্য জীবনে ন‚রে এলাহী নামে ৮ বছরের এক ছেলে আছে। সে বর্তমানে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। এই অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে আমি কী করব, কোথায় যাব, কিছুই জানি না। তবে আমার ছেলেটার একটা গতি হলে মরেও শান্তি পেতাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জজ মিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ