পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে আমার পরিচয়’ প্রবাদের মতোই যেন আইভি নাম। ইংরেজি শব্দ ‘আই’ মানে আমি, আর ‘ভি’ অক্ষরকে ভিক্টোরি চিহ্ন বিজয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাংলা ব্যাকরণে সন্ধি বিচ্ছেদ আই+ভি=আইভি, মানে আমি বিজয়ী। সত্যিই তাই; নারায়ণগঞ্জের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি ২০০৩ সাল থেকে যে ক’বার ভোট করেছেন প্রতিবারই বিজয়ী হয়েছেন। এবার দুর্বল প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিজয়ী হলেও ৫ বছর আগের নির্বাচনে প্রভাবশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধেও বিজয়ী হন। প্রশ্ন হলো তার এই বিজয়ের পিছনে কী নামের মাহাত্ম্য কাজ করে! জ্যোতিষীরা সেটা বলতে পারবেন।
তবে তার বিজয়ের নেপথ্যে নেতৃত্বের ক্যারিশমা, ব্যক্তিত্ব, সততা-নিষ্ঠা, দুর্নীতি-চাঁদাবাজীকে প্রশ্রয় না দেয়া, ভোটের জন্য সন্ত্রাসের সঙ্গে আপোষ না করা সর্বোপরি গণমানুষের চিন্তা-চেতনা, মননকে বুঝতে পারার সক্ষমতা। ক’বছর থেকে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় (ইউনিয়ন) পর্যায়ের প্রার্থীদের আচরণ, কূটকৌশল, দাম্ভিকতা, সন্ত্রাস, বোমাবাজী, প্রশাসন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনৈতিকভাবে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করা, মস্তান-সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ভোটকেন্দ্রে ত্রাস ছড়িয়ে ভোটারদের আতঙ্কিত করার যে চিত্র মানুষে দেখতে অভ্যস্ত; সেটাতে বিশ্বাসী নন আইভি। প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে এবং নৌকা মার্কার প্রার্থী হয়েও তিনি সব মত পথের ভোটার যাতে ভোট দিতে পারেন নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি সে বার্তা দিয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে কথার বোমা-বিষ্ঠার বদলে আদর্শ-নীতি দিয়ে মোকাবিলা করেছেন। নিজের সফলতা-ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন আমজনতার কাছে। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মানেই ভোট কেন্দ্র দখল করে যে ব্যালট পেপারে সিল মারা, প্রতিপক্ষের পিছনে গু-া লেলিয়ে দেয়া, অন্যপ্রার্থীদের ভোট দেবেন শঙ্কা থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, ব্যালট ছিনতাই, ত্রাস সৃষ্টি করে ভোট নেয়ার দৃশ্য মানুষের কল্পনায় চলে আসে সেটা থেকে আইভি ব্যতিক্রম। নেতৃত্ব ও বিজয়ের জন্য আইভিকে অভিনন্দন। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হয়ে এ নির্বাচনে আইভি যদি ‘মেয়র’ নাও হতেন তাহলেও মানুষ তাঁকে অভিনন্দন জানাতো। গণতন্ত্রের জমিনে এমন নেতৃত্বই মানুষ প্রত্যাশা করে।
সেলিনা হায়াৎ আইভি ১৯৬৬ সালের ৬ জুন নারায়ণগঞ্জের একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা, মাতা মমতাজ বেগম। চুনকা পরিবারের ৫ সন্তানের মধ্যে ডা. আইভি হলেন প্রথম। তিনি দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুল, মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান এবং ১৯৮২ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে ডাক্তারি পড়তে রাশিয়ার ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে এমবিবিএস পাস করেন। দেশে ফিরে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৯৩-৯৪ সালে মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। আইভী ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজবাড়ির কাজী আহসান হায়াৎকে বিয়ে করেন। এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কাজী আহসান হায়াৎ বর্তমানে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে নিউজিল্যান্ডে কর্মরত। তিনি কাজী সাদমান হায়াৎ সীমান্ত ও কাজী সারদিল হায়াত অনন্ত নামের দুই পুত্র সন্তানের জননী। আইভি মূলত স্বামীর কর্মস্থল নিউজিল্যান্ডে ১৯৯৫ সাল থেকে বসবাস শুরু করেন। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিক হন। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ওই বছরের ১৬ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অতঃপর ২০১১ সালে মেয়র নির্বাচিত হন। ২২ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৃণমূলের নেতারা তাকে মনোনীত না করায় নির্বাচন তার জন্য ছিল বিড়াট চ্যালেঞ্জ।
সবার দৃষ্টি ছিল বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের দিকে। নানা কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র নির্বাচন দেশের মানুষের আগ্রহের সৃষ্টি করে। ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নামে ভোটারদের যেভাবে ‘বোকা-আহাম্মক’ বানানো হয়েছে তা মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। ৩ সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও কলঙ্কিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন; প্রতারিত হয়েছে ভোটাররা। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদের বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, সংঘাত ও ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনসহ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার ঘটনা ঘটে। ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচন কার্যত পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের ‘জনগণের চোখে ধূলা দেয়ার মতো’ মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে নির্বাচন হচ্ছে। ৬১ জেলা পরিষদে নির্বাচনের আগেই ২২ জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, পেশাজীবীরা নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনদের ‘রং-তামাশা’ অভিহিত করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর কাজী রকীব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের নাম দিয়েছেন ‘ক্রীতদাস’ ইসি। অন্যদিকে সরকারের জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলা, নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, মাঠের বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর ভীতি প্রদর্শনে বিএনপি কার্যত মাঠ ছাড়া। জুলুম-নির্যাতন থেকে বাঁচতে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর কেউ নিষ্ক্রিয়, কেউ সমঝোতা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। জুলুম-নির্যাতনের সুনামী থেকে বাঁচতে জামায়াতের তৃণমূলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের ছাতার নীচে চলে গেছে। পরিস্থিতি এমন যে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৮৮ মামলা এবং হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১০টি থেকে ১২৫টি পর্যন্ত মামলা ঝুলছে। সারাদেশের দলটির হাজার হাজার নেতাকে নিত্যদিন আদালতে যেতে হচ্ছে। সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচনের প্রয়োজনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দাতাদেশ ও সংস্থাগুলো নিরপেক্ষ ইসি গঠনের চাপ দিচ্ছে। নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিচ্ছেন। এমনই প্রেক্ষাপটে দলীয় প্রতীকে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয় নারায়ণগঞ্জে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচন নিয়ে দেশী বিদেশী সবার মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়।
প্রাচ্যের ডা-িখ্যাত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহের আরো হেতু ছিল। শহরটিকে বলা হয় সন্ত্রাসের লীলাভূমি। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ভরপুর নারায়ণগঞ্জে চাঁদাবাজী মহামারী আকার ধারণ করেছে। আবার সেভেন মার্ডারের লোমহর্ষক ঘটনার কারণে শহরটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছেও ব্যাপক পরিচিত। এছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা যাদের প্রার্থী করার জন্য কেন্দ্রে নাম পাঠিয়েছিলেন তাদের বাদ দিয়ে কেন্দ্র থেকে সেলিমা হায়াৎ আইভিকে প্রার্থী হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়াও এমন কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী হন যাদের চাঁদাবাজী-সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়েও ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়। সবচেয়ে বেশি শঙ্কা ছিল এলাকার ভোটকেন্দ্র সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে। ওই থানার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকে ছিলেন বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার আসামি। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে আছে হত্যা-খুন-দখলদারিত্ব-চাঁদাবাজীর রেকর্ড। তাছাড়াও ৭ খুন মামলার আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল আবার ৭ খুনের ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম কমিশনার প্রার্থী হন। কিন্তু সব ভীতি, আতঙ্ক, শঙ্কা পায়ে মারিয়ে অনুষ্ঠিত হলো নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন। বিএনপির ভাষায় ‘সরকারের ক্রীতদাস’ খ্যাত নির্বাচন কমিশনের অধীন এটাই হলো শেষ নির্বাচন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী নৌকার সেলিনা হায়াৎ আইভি ও ধানের শীষের এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের ভদ্রজনোচিত আচরণে নির্বাচনে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানে কোথাও কেউ অপ্রীতিকর কিছু করার সাহস পায়নি। ধানের শীষের প্রার্থীর দাবি অনুযায়ী সেনাবাহিনী মোতায়েন করা না হলেও কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে ৯ হাজার সদস্য। ফলে নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটে। দেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন দেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। তাদের বক্তব্য হলো গত কয়েক বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পেরেছে। পরাজিত প্রার্থী কার্যত ফলাফল মেনে নিয়েছে। এভাবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারলে এই নির্বাচন হবে পথপ্রদর্শক। ফলাফল মেনে নেয়ার যে সংস্কৃতি মানুষ দেখলো তা রাজনীতির জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক।
নির্বাচনের আগে আমেরিকার ডেমোক্রেটিক ফোরাম নামের একটি সংগঠন জরীপ করে জানায়, নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ৫ শতাংশ ভোট পাবে। ভোটের ফলাফলে সঙ্গে জরিপের কোনো মিল নেই। ধানের শীষের প্রার্থী ভোটারদের কাছে তেমন পরিচিত ছিলেন না তারপরও তিনি ৯৬ হাজার ভোট পেয়েছেন। ভোটের হিসেবে যা প্রায় ৩০ শতাংশ। এ নির্বাচন সারাদেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য হতে পারে বার্তা ‘মাগো আমায় দেখাসনে আর আর জুজু বুড়ির ভয়/ আজকাল আর আমি তোমার ছোট্ট খোকা নই’ (সুফিয়া কামাল)। ভয়-ভীতি আতঙ্কে বিএনপি’র যারা রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন তাদের ‘কবিতা’র খোকার মতো প্রকাশ্যে আসতে পারেন দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে। আর বিএনপির নীতি নির্ধারকদের জন্য বার্তা হলো টাকা আর অর্থবিত্ত দেখে যাতে তাকে প্রার্থী করা উচিত নয়। এতে দলের নেতাকর্মী ও ভোটাররা হোঁচট খায়। প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় যারা ধানের শীষ ছাড়া ভোট দেন না তাদের অনেকেই নারায়ণগঞ্জে ভোট দিতে যাননি। আর যারা গেছেন তাদের বড় অংশ মনে করেছেন দলের বাইরে আইভি একমাত্র প্রার্থী যিনি সন্ত্রাসকে ঠেকানোর দৃষ্টতা রাখেন। সন্ত্রাসের ভিতরে বসবাস করেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার সক্ষমতা রাখেন। পছন্দের দলীয় প্রার্থী না থাকায় জাতীয়তাবাদী ও ইলসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের অনেকেই এ জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘আইডল’ আইভিতে বেছে নেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের জন্যও হতে পারে নতুন বার্তা। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে শুধু মস্তান, পেশীশক্তি, দাঙ্গাবাজ প্রার্থী নয়; আইন শৃংখলা বাহিনীকে অনুকূলে ব্যবহার এবং ভোটকেন্দ্র দখল নয়; যোগ্য প্রার্থী মনোনীত করা গেলে জনগণের ভোটেই বিজয়ী হওয়া সম্ভব। যা সেলিনা হায়াৎ আইভি নেতানেত্রীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। দেশের ভোটের রাজনীতিতে চালু হয়েছে নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়া এবং কিছুক্ষণের জন্যে হলেও সন্ত্রাসীদের ছাড় দিতে হয়। কিন্তু আইভি ভোটের জন্য প্রভাবশালী স্থানীয় নেতার সঙ্গে সমঝোতার পথে হাটেননি; যা তার বিজয়ের পথকে সহজ করে দিয়েছে। ৫ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভির নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখে আইভির কর্মী হতে ইচ্ছে করে’। ড. কামাল হোসেনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব যাকে নিয়ে এমন ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তাঁকে আবারও অভিনন্দন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।