পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টঙ্গীর তুরাগ নদির তীরে আগামীকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইজতেমাকে সফল করতে ইতিমধ্যে ময়দানের সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমাকে ঘিরে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় ধর্মীয় উৎসবমখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
ময়দানের আশপাশের রাস্তায় রঙ-বেরঙয়ের দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি শোভা পাচ্ছে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ময়দানের চারপাশে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২টা থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে কর্মরত সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সকল ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ময়দানে পানি সংকট নিরসনে নতুন গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন, বাস, ফায়ার সার্ভিস, ট্রাফিক পুলিশ, বিদ্যুৎ, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে। ক্যামেরা স্থাপন : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পুরো ময়দানে প্রায় ৩০০ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে সাত হাজার পুলিশ মোতায়ন থাকবে। র্যাব ও আনসারসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করবে।
ভারতীয় মুসল্লিদের আগমন : টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আগরতলা স্থলবন্দর সিমান্ত পথে দলে দলে আসছেন ভারতীয় মুসল্লি। ভারতীয় মুসল্লিরা ব্রাহ্মনবাড়িয়া আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। এখান থেকে বাসে কিংবা ট্রেনযোগে ইজতেমার ময়দানে আসছেন।
চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারিদের ছুটি বাতিল : আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সকল ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
গ্যাস সংযোগ : ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে ১৪০ থেকে ১৫০ পিএসআই উচ্চচাপ সম্পন্ন গ্যাসের লাইন সংযোগ দেয়া হয়েছে। সেখানো শুধু বিদেশি মেহমানদের রান্নার কাজ হবে।
সড়ক বাতি ও এলইডি লাইট স্থাপন : ময়দানে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সিটি করর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি টঙ্গী-কামারপাড়া রোডে রঙ-বেরঙের সড়ক বাতি লাগানো হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলমান বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে মুসল্লিদের চলাচলে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে চারশ এলইডি লাইট স্থাপন করা হচ্ছে।
ইজতেমায় ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি : শুক্রবার থেকে ইজতেমা শুরু হওয়া উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় ময়দানে প্রতিটি খিত্তায় ফায়ার এক্সটিংগুইসার, ফায়ার হুক, ফায়ার বিটারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ময়দানের চারপাশে ১৪টি পোর্টেবল পাম্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মাঠের বিভিন্ন স্থানে ফায়ার সার্ভিসের তিনশতের অধিক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। ময়দানে ফায়ার কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি : ইজতেমায় মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন সাড়ে সাত হাজার পুলিশ। নির্ধারিত পোশাকের বাহিরে সাদা পোশাকে মোতায়ন করা হবে পুলিশ। এছাড়াও বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় দল, ডক স্কোয়াদ, নৌটহল দল এবং বিষ্ফোরক দ্রব্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা দায়িত্ব পালন করবেন।
মাসলেহাল জামাত : ইজতেমা ময়দানের ভাণ্ডার সংলগ্নস্থানে বরাবরের মতো এবারো মাসলেহাল জামাতের কামরা স্থাপনা করা হয়েছে। ময়দানে আগত কোনো মুসল্লির মৃত্যু হলে সেখানে মৃত ব্যক্তির গোসল দেয়া ও কাফন দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। মাসলেহাল জামাতের মুরুব্বিরা মৃতের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে নিজ এলাকায় পাঠানো ব্যবস্থা করে থাকেন।
ময়দানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা : ময়দানে আগত মুসল্লিদের ওজু গোসলসহ অন্যান্য কাজে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। সেজন্য পূর্বের স্থাপন করা ১৪টি গভীর নলকূপের পাশাপাশি এবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের পক্ষ থেকে ময়দানে নতুন করে ১হাজার ফুট গভীর ২টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
অস্থায়ী দোকানপাট ও অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ : ইজতেমা উপলক্ষে ময়দানের চারপাশের অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানপাট ও বস্তি ইতিমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়াও ময়দানের চারপাশে দেয়াল ও রাস্তার মোড়ে লাগানো অশ্লীল পোস্টার-ব্যানার, সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে।
ইজতেমায় ট্রেন ও বাস সার্ভিস : ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঢাকা-টঙ্গী, ময়মনসিংহ-টঙ্গী ও টাঙ্গাইল-টঙ্গী রুটে ১৩টি অতিরিক্ত ট্রেন পরিচালিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রাকিবুর রহমান। তিনি আরো বলেন শুক্রবার জুমার দিন স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। এই রুটে চলাচলরত প্রতিটি ট্রেন ইজতেমা চলাকালীন সময়ে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে যাত্রা বিরতি করবে।
এছাড়াও ইজতেমা উপলক্ষে ১২ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫দিন বিআরটিসি’র পক্ষ থেকে ৩০০টি বিশেষ বাস চালু থাকবে। প্রগতিসরনি, আশুলিয়া বাইপাস এবং গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাটল বাস চালু থাকবে। আখেরী মোনাজাতের পর মুসল্লিদের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দেয়ার জন্য একতলা বিশেষ বাস পরিষেবা চালু থাকবে। বিদেশি মেহমানদের জন্য একটি স্টীকারযুক্ত এসি বাস বিমানবন্দর থেকে ইজতেমা ময়দান পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করবে।
উল্লেখ্য, ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে প্রথমপর্বের (আলমি শূরার) বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (ওয়াসিফুল ইসলামপন্থী) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্বে অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।