Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত

মুফতি ইমামুদ্দীন সুলতান | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো,আত্মীয়স্বজনদের খোঁজ-খবর রাখা, সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের সাথে সদাচরণ করা, নিজ সাধ্য ও সামার্থের আলোকে বিপদাপদে সাহায্য সহযোগিতা করা এবং মাঝে মাঝে দেখা-সাক্ষাৎ করা ইত্যাদি। আত্মীয় দ্বারা কাছে বা দূরের সকলই উদ্দেশ্য। সবার সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখা ইসলামের নির্র্দেশ। তবে এক্ষেত্রে তুলনামূলক নিকটাত্মীয়রা প্রাধান্য পাবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের পরিচয় দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, (তরজমা) ‘সেই সকল লোক, যারা আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং চুক্তির বিপরীত কাজ করে না। এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তারা তা বজায় রাখে, নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং ভয় রাখে কঠিন হিসাবের’। (সূরা রা‘দ-২০-২১)
অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যে সকল সম্পর্ক রক্ষা করার আদেশ করেছেন তা রক্ষা করে এবং সে সম্পর্কজনিত কর্তব্যসমূহ পালন করে। আত্মীয়-স্বজনের অধিকারসমূহ যেমন এর অন্তর্ভুক্ত, তেমনি দীনি সম্পর্কের কারণে যেসব অধিকার জন্ম নেয়, তাও।

বর্তমান সমাজে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার বিষয়টি খুব অবহেলিত। ব্যক্তি জীবনে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা অনেক ব্যক্তিও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষায় তেমন গুরুত্বারোপ করে না। এটাকে অনেকটা ঐচ্ছিক মনে করে থাকে। অথচ ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম এবং তা রক্ষা না করা গুনাহ। কেননা ইসলামে একজন আত্মীয়ের প্রতি অপর আত্মীয়ের অনেক হক রয়েছে,যেগুলো আদায় করা জরুরী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্তকে ও মুসাফিরকেও। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে তাদের জন্য এটা শ্রেয় এবং তারাই সফলকাম। (সূরা রুম-৩৮) তাই যারা এই হক আদায় করে হাদীস শরীফে তাদের অনেক ফজীলত বর্ণিত হয়েছে।

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ফজীলত: এক.পরকালে হিসাব-নিকাশ সহজ এবং জান্নাতে প্রবেশ: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তিনটি গুণ এমন রয়েছে যার ভিতরে গুণগুলো থাকবে পরকালে তার হিসাব-নিকাশ সহজ হবে এবং আল্লাহ নিজ দয়ায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গুণগুলো কেমন? রাসূল সা. বলেন গুনগুলো হলো এই। এক. যে তোমাকে বঞ্চিত করে তুমি তাকে দান করো। দুই. যে তোমার প্রতি জুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা করো। তিন. যে তোমার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে চায় তুমি তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। সাহাবায়ে কেরাম বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ভিতর এই গুণগুলো থাকলে আমি কি পাবো? রাসূল সা. বলেন বিচার দিবসে হিসাব সহজ করা হবে। এবং আল্লাহ তায়ালা নিজ দয়ায় তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (হাকেম-৩৯১২)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আবু আইয়ূব আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উপস্থিত লোকজন বলল তার কি হয়েছে? তার কি হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেনঃ তার একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। এরপর নবী (সা.) বললেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে। একে ছেড়ে দাও বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি ঐ সময় তার সাওয়ারীর উপর ছিলেন। (বুখারী-৫৫৫৭)

দুই: রিযিক ও আয়ূ বৃদ্ধি: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার দুনিয়াবী উপকারিতা হলো, এর দ্বারা আর্থিক স্বচ্ছলতা ও রিযিক বৃদ্ধি পায় এবং আয়ূ বাড়ে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যাকে এ বিষয়টি আনন্দিত করে যে, তার রিযিক (জীবিকায়) সচ্ছলতা দেয়া হোক অথবা (এবং) তার অবদান আলোচিত হোক (দীর্ঘায়ু দেয়া হোক) সে যেন তার আত্মীয়তার সম্বন্ধ সংযুক্ত রাখে। (মুসলিম-৬২৯২,বুখারী-৫৯৮৫)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর শাস্তি: এক.আল্লাহর অভিসম্পাত: আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা যেমন আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় এবং ফজীলহপূর্ণ তেমনি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাও আল্লাহ তায়ালার কাছে খুইন নিন্দনীয় এবং গুনাহের কাজ। পবিত্র কুরআনে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের অভিসম্পাত ও ভৎসনা করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের জন্যই লা‘নত আর তাদের জন্যই রয়েছ আখিরাতের মন্দ আবাস।’ [সূরা আর-রা‘দ: ২৫]

দুই: আল্লাহর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ: দুনিয়াতে একজন মুমিন ব্যক্তির সবচে বড় সফলতা হলো, আল্লাহর সাথে তার রহমত এবং দয়ার সসম্পর্ক বজায় থাকা এবং আল্লাত তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। কিন্তু আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর সাথে এ সম্পর্ক বজায় রাখেন না। হাদিস শরীফে হযরত আয়শা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রেহম অর্থাৎ আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলন্ত রয়েছে । সে বলে, যে ব্যক্তি আমার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখবেন। আর যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন। (মুসলিম-২৫৫৫,বুখারী-৫৯৮৯)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ্ তা'আলা সমস্ত মাখলুককে সৃষ্টি করলেন; আর যখন তা হইতে অবসর হলেন তখন 'রেহম' (আত্মীয়তা) উঠে দাঁড়িয়ে রাহমানুর রাহীম আল্লাহর কোমর ধরিল। আল্লাহ্ বললেন: থাম (কি চাও ?) রেহম আরয করল, এটা হলো আত্মীয়তা ছিন্নকারী হইতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। আল্লাহ্ তা'আলা বলিলেন: তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও, যে ব্যক্তি তোমার সম্পর্ক বহাল রাখিবে আমিও তাহার সাথে সম্পর্ক রাখিব। আর যে তোমাকে ছিন্ন করিবে আমিও তাহার সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করিব। রেহম আরয করল, হ্যাঁ, রাযী আছি, হে আমার প্রভু। আল্লাহ্ বললেন: আচ্ছা, তোমার সাথে আমার এই অঙ্গীকার রইল। (মিশকাত-৪৯১৯,মুসলিম-৬২৮৭,বুখারী-৫৯৮৭)

তিন: দুনিয়াতেই শাস্তি প্রদান: এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে, দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেও দেন আখেরাতেও দেন। তন্মধ্যে একটি হলো আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা। হযরত আবূ বকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ন্যাপরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ ও রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তা’আলা যার সাজা পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন। (তিরমিযি-২৫১১)

চার: পরকালে জাহান্নাম: আত্মীতার সম্পর্ক ছিন্নকারীর দুনিয়ার শাস্তি-ই শেষ নয়। পরকালে তার জন্য জাহান্নামের কঠিন হুশিয়ারী রয়েছে। জুবাইর ইবনে মুতঈম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেছেনঃ ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ইবনে আবু উমর (রাহঃ) বলেন, সুফিয়ান বলেছেন, অর্থাৎ আত্মীয়তা সম্বন্ধ ছিন্নকারী। (মুসলিম-৬২৮৯) (চলবে)

লেখক : মুহাদ্দিস-জামিয়া ইমদাদিয়া আরাবিয়া শেখেরচর,নরসিংদী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->