দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
দুর্বল ঈমানদার : আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। যেসব যুদ্ধে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম অংশগ্রহণ করেছেন সেগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হয়েছে এবং মুসলমানরা গনিমত লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু মুসলমান নামধারী কিছু কিছু মানুষ এমন ছিল যাদের মধ্যে ঈমানের প্রকৃত প্রাণশক্তি বিদ্যমান ছিল না। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে তারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে নি। এরপর যুদ্ধে জয়লাভ করার পর যখন গনিমত অর্জিত হয়েছে তখন তারা আফসোস ও পরিতাপ করে বলেছে, আমরা যদি বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সহচরবৃন্দের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতাম, তাহলে গনিমত লাভ করে সফল হতে পারতাম। এ মর্মে আল কুরআনে এসেছে, ‘পক্ষান্তরে তোমাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অনুগ্রহ আসলে তারা এমন ভাবে বলতে শুরু করবে যেন তোমাদের মধ্যে এবং তাদের মধ্যে কোন মিত্রতাই ছিল না। (বলবে) হায়, আমি যদি তাদের সাথে থাকতাম, তাহলে আমি ও যে সফলতা লাভ করতাম।' (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৩)
কাফের সম্প্রদায় : আজকের পৃথিবীতে কাফের সম্প্রদায় যাচ্ছেতাই করে বেড়াচ্ছে। বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা, অশ্লীলতা, যৌনতা, নগ্নতা ও অন্যায়-অপরাধের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে কাফেরদের পদচারণা নেই। তারা মনের কামনা বাসনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করছে। নির্লজ্জ যৌনজীবন উপভোগ করছে। পৃথিবীর বুকে তারা নিজেদের অপরাধের ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারছে না। মৃত্যুর পর যখন তাদের দেহে পুনরায় প্রাণ সঞ্চারিত হবে ও পুনরুত্থান ঘটবে তখন তাদের ঘুম ভাঙবে। তারা জীবনে যত অন্যায়, অনাচার ও অবিচার করেছে তার সবকিছু স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে। নিজেদের আমলের ডায়েরি প্রত্যক্ষ করে তারা পরকালীন জীবনের অন্তহীন নরক যন্ত্রণার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আফসোস ও পরিতাপ করতে থাকবে। তারা বলবে, হায়! আমি যদি জন্মগ্রহণ না করতাম! আমি যদি পুনর্বার উত্থিত না হতাম! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম! মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম, যেদিন মানুষ প্রত্যেক্ষ করবে যা সে সামনে প্রেরণ করেছে এবং কাফের বলবে, হায়, আফসোস-আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।' সুরা নাবা, আয়াত : ৪০)
বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ : পরকালে মানুষকে দুই দলে বিভক্ত করা হবে। এদের এক দলের ডান হাতে আমলনামা প্রদান করা হবে এবং অপর দলকে বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। যাদের ডানহাতে আমলনামা প্রদান করা হবে তারা হবে সৎকর্মশীল, নেককার, ঈমানদার ও আল্লাহওয়ালা মানুষ। তাদের আমলনামায় জান্নাতের সুসংবাদ লিপিবদ্ধ থাকবে। চিরন্তন সুখ-শান্তির শুভসংবাদ লিপিবদ্ধ করে সৎকর্মশীলদের ডান হাতে তাদের কর্মের ডায়েরি তুলে দেওয়া হবে। অপরদিকে অপরাধী ও অনাচারী ব্যক্তিবর্গের বাম হাতে আমলনামা প্রদান করা হবে। সেই আমলনামায় তাদেরকে চিরন্তন নরক যন্ত্রণার দুঃসংবাদ দেওয়া হবে। তাদের আমলনামায় কোন ধরনের সুসংবাদ থাকবে না। কেবল দুঃখ ও কষ্ট ভোগের বিবরণ থাকবে। সেদিন বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ আফসোস করে বলবে, যদি আমাকে আমলনামা দেওয়া না হতো! মৃত্যুর পর যদি কোন ধরনের হিসাব নিকাশ না হতো, তাহলে কতই না ভালো হতো। এ সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে, ‘যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে, হায় আমায় যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত।' (সুরা হাক্কাহ, আয়াত : ২৫-২৭)
আলোচ্য নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা সেসব লোকের ব্যাপারে জানতে পেরেছি যারা পরকালে আফসোস ও পরিতাপ করবে। কিন্তু তাদের আফসোস ও পরিতাপ কোন কাজে আসবে না। তাই আসুন! আমরা এমনভাবে জীবন অতিবাহিত করি যেন পরকালে পরিতাপকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হই। মহান আল্লাহ আমাদেরকে নেককার বান্দাদের দলভুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুন। জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।