পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিষ্ঠানের নাম ‘জিএইচ গ্রুপ’। ঘরে বসে অনলাইনে আয় করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। বিনিময়ে শত শত গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা। প্রতারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে নিজের তৈরি নিত্যনতুন ‘ফিন্যান্স অ্যাপস’। ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসআপ ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে চলছে এ প্রতারণা। পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া একটি পরিবারের সব সদস্য সিন্ডিকেট করে প্রতারণা করলেও এটির মাস্টারমাইন্ড মঞ্জুরুল হাসান সাদী। পুরনো ঢাকা ৪৫/১ কেবি রোড, গেন্ডারিয়ার আফসারউদ্দিনের পুত্র এই সাদী। তার প্রতারণার সহযোগী হচ্ছেন, মা নাহিদ আফসার ওরফে লাইজু বেগম, ভাই কামরুল হাসান ফারহাবি, বোন সাবাহ সাদী, মিথিল। চায়না থেকে আইটি’র ওপর পড়াশোনা সাদীর। নিজেই তৈরি করতে পারেন অ্যাপস। ঘরে বসে অনলাইনে চাকরি এবং বেকারত্ব নিরসনের মিথ্যা প্রলোভনে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এমনকি হিজড়াদের নিয়ে গড়ে তোলা সিন্ডিকেট দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। চাকরির বিপরীতে জিএইচ গ্রুপ গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত হিসেবে নিচ্ছে ৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। চাকরি বলতে তেমন কিছুই নয়। গ্রাহকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকে লাইক-পোস্ট দেয়া, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপে জিএইচ গ্রুপের বিজ্ঞাপন, ভিডিওক্লিপ ফরোয়ার্ড করা। বিনিময়ে দৈনিক আড়াইশ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। তবে এই টাকা নগদে পরিশোধ করা হয় না। কিছু ডেমো অ্যাপস তৈরি করে এমপ্লয়ীকে দেখানো হয় যে, এই অ্যাপসের অ্যাকাউন্টে পয়েন্ট বা বেতনের টাকা জমা হচ্ছে। কিন্তু কিছু দিন পর দেখা যায়, ওই অ্যাপসটিই গায়েব। প্রথম কয়েকদিন যেতেই চাকরিতে যোগদানকারীকে উদ্বুদ্ধ করা হয় আরও অন্তত ১০ জন গ্রাহককে সম্পৃক্ত করতে। এতে ওই গ্রাহকদের যে বেতন দেয়া হবে, তা থেকে যিনি নতুন গ্রাহক আনবেন তার অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হতে থাকবে ১০% করে। এভাবে এমএলএম কোম্পানির মতো একজন ১০ জনকে সম্পৃক্ত করেন, তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা করে জামানত রাখেন ওই ১০ জনের প্রত্যেকে যুক্ত করেন আরও ১০০ জন। এভাবে মানুষকে সম্পৃক্ত করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত এমন অন্তত ১৮০০ গ্রাহকের কাছ সাদীর কথিত জিএইচ গ্রুপ হাতিয়ে নিয়েছে ৫ থেকে ৭০০ কোটি টাকা। এ টাকায় লোক দেখানোর জন্য বসুন্ধরা সিটিতে কেনা হয়েছে একটি বিদেশি জুতার দোকান, একটি আমদানি-রফতানি প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস একসেসরিজ আমদানির ব্যবসা। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মূল প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে অনলাইনে এমএলএম প্রতারণা। এ অর্থের বড় একটি অংশ চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। ব্যাংকে রাখলে টাকার উৎস জানতে চাইতে পারেÑ এই আশঙ্কায় অনেক সময় নিজ বাসায়ই রাখা হয় কোটি কোটি টাকা। আত্মীয়-স্বজনের বাসায়ও টাকা রাখা হয়।
প্রতারিত ভুক্তভোগীরা বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)সহ বিভিন্ন সংস্থায় নালিশ করেও পাননি কোনো ফলাফল। ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন, মোবাইল ফোনের সিম ও অ্যাপস পরিবর্তনের কৌশলে চক্রটি অদ্যাবধি রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোনো তথ্য যাতে সংবাদমাধ্যম কিংবা কোনো গোয়েন্দা সংস্থার হাতে না পড়ে সতর্কতাস্বরূপ তারা পারস্পরিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন ‘টেলিগ্রাম’ অ্যাপস।
আইটি এক্সপার্ট মঞ্জুরুল হাসান সাদী একাধারে মোটিভেশনাল স্পিকারও। কথার জাদুতে হতাশ মানুষের মনে জাগিয়ে তোলেন আশার সঞ্চার। নিজে নেপথ্যে থেকে প্রায়ই বিভিন্ন অভিজাত রেস্টুরেন্টে আয়োজন করেন সেমিনারের। ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের এসব সেমিনারে জড়ো করেন। সেখানে তার বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে কথিত বিদেশি প্রতিষ্ঠান ‘জিএইচ গ্রুপ’র সদস্য হিসেবে নাম নিবন্ধন করেন। এটির না আছে কোনো অফিস। না আছে ঠিকানা। এ ক্ষেত্রে আগ্রহী ব্যক্তির কাছ থেকে ‘জামানত’ রাখেন ৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। মানুষের আস্থা অর্জন এবং ব্যাপক প্রচারের স্বার্থে প্রাপ্ত জামানতের টাকা থেকে চাকরি লাভকারী ব্যক্তিকে দৈনিক ২৫০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক করা হয়। এটি আসলে লোক দেখানো। কয়েক দিন যেতেই কথিত চাকরি লাভকারীকে নতুন নতুন সদস্য ভর্তি করাতে চাপ দেয়া হয়। ভর্তি হওয়া নতুন প্রার্থীদের কাছ থেকেও নেয়া হয় অনুরূপ জামানত। এভাবে জামানত বাবদ প্রাপ্ত অর্থ কোটির ঘর ছাড়িয়ে গেলে বাড়িয়ে দেয়া হয় জামানতের অংকও। বেশি জামানতে অধিক টাকা লাভের আশায় তখন বেকার তরুণরা ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত রাখে সাদীর ‘জিএইচ গ্রুপ’ এ। জামানত রাখার পর জিএইচ গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে একটি কার্ড দেয়া হয়। বেকার তরুণ-তরুণী ভাবেন তিনি চাকরি করছেন। চাকরি বলতে তেমন কিছু নয়। মঞ্জুরুল হাসান সাদীর জিএইচ গ্রুপের প্রচারণামূলক ভিডিও, স্টিকার, প্রচারপত্র ফরোয়ার্ড, লাইক ও পোস্ট দেয়া। যে যত বেশি প্রচারপত্র পোস্ট করতে পারেন তার পারফরম্যান্স ততো ‘ভালো’ বিবেচিত হয়। কিন্তু সাদীর মূল টার্গেট হচ্ছে জামানতের টাকা। জামানতের টাকা যখন ১০-২০ কোটি ছাড়িয়ে যায়, তখন জিএইচ গ্রুপের কথিত চাকরিদের দৈনিক ক্যাশ ব্যাক দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়। এক পর্যায়ে জিএইচ গ্রুপের অ্যাপসে কেউ আর প্রবেশ করতে পারেন না। অন্যদিকে সাদী নতুন অ্যাপস খুলে নব উদ্যোমে নতুন প্রার্থীর কাছ থেকে শুরু করেন জামানত গ্রহণ। প্রতারণার খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব ও সর্বশান্ত হয়েছেন শত শত মানুষ।
ভেল্কিবাজি ব্যবসা : প্রতারিতদের কাছে মঞ্জুরুল হাসান সাদী এবং তার মায়ের প্রচারিত অনলাইনে চাকরি করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রলোভন ‘ভেল্কিবাজির ব্যবসা’ বলে অভিহিত করেন ভুক্তভোগী ফিরোজ আহমেদ। জিএইচ গ্রুপের পোস্টে লাইক-কমেন্ট ও ফরোয়ার্ড করলে কি লাভ? আয় হয় কীভাবে? দৈনিক আড়াইশ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে এমপ্লয়ীদের বেতনইবা আসে কোত্থেকে? আয়োজিত সেমিনারে এমন প্রশ্ন তুলে নিজেই জবাব দেন মঞ্জুরুল হাসান সাদী। তার জবাবটি এ ধরনের-জিএইচ গ্রুপ একটি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি। ওয়ার্ল্ড মার্কেটে প্রতিষ্ঠানের সুনাম আছে। বিভিন্ন ব্যাবসা-বাণিজ্যে রয়েছে বিপুল বিনিয়োগ। এসব ব্যবসায় লেনদেন হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিট কয়েনে। এটি চোখে দেখা যায় না। পৃথিবী এগিয়ে গেছে। আমরাই পেছনে পড়ে আছি। আন্তর্জাতিক ট্রেডিংয়ে বিট কয়েনকে বলা হয় ‘ভবিষ্যৎ মুদ্রা’। ডলার, পাউন্ড, রিয়েল, দিরহাম, ইয়েন, রিঙ্গিত, টাকা-রুপী ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিশ্বময় জিএইচ গ্রুপের ট্রেডিং চলছে ক্রিপ্টো কারেন্সিতে। এ থেকে যে প্রফিট হয় তা দিয়ে হাজার হাজার এমপ্লয়ীর বেতন দেয়া হয়। কথিত ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’র দেশের রাজস্ব খাতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলেও প্রচার করেন সাদী। যদিও ২০১৪ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিট কয়েন লেনদেনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। কারণ, এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারাই অনুমোদিত নয়। এসব ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী অনুমোদিত নয়। সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য এ বিষয়ে নিয়ে হৃদয়গ্রাহী বক্তব্যে মোহমুগ্ধ করেন ধূর্ত সাদী। তার প্রধান টার্গেট হচ্ছে চাকরির জামানতের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া।
কোটি কোটি টাকা হারিয়ে নির্বিঘ্নে সটকে পড়েন মঞ্জুরুল হাসান সাদী। কখনও গা ঢাকা দিয়ে থাকেন ঢাকা, চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল। কখনও চলে যান চীন। কখন কোথায় অবস্থান করছেন কেউ ধারণা করতে পারে না। সাদীর প্রতারণার শিকার পুরান ঢাকার বেশ ক’জন তরুণ গত জুন মাসে লালবাগের একটি রেস্টুরেন্টে সেমিনারে বক্তৃতারত অবস্থায় দেখতে পায়। ক্ষুব্ধ প্রতারিতরা তাকে আটক করে অর্থ দাবি করেন। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় সাদী সেখান থেকে বেরিয়ে হাওয়া হয়ে যান। এ ঘটনায় জিএইচ গ্রুপের কাছে লাখ লাখ টাকা খোয়ানো প্রতারিতরা নিশ্চিত হন, সাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায়ই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো গোয়েন্দা সংস্থা সাদীর বাসায় অভিযান চালাতে গেলে সাদীর মা লাইজু বেগম নিজে কিংবা অন্য কাউকে গুরুতর অসুস্থ দাবি করে গেট খোলেন না। কখনও বা মোটা অংকের টাকা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘ম্যানেজ’ করা হয়। ভুক্তভোগী পাড়া-প্রতিবেশী তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার সালিশ করলে কিছু টাকা ফেরত দেন। তখন তারা মিরপুর, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
জিএইচ গ্রুপ দ্বারা প্রতারিত ও ৩-৪ লাখ টাকা করে খুইয়েছেন এমন কয়েকজন ভুক্তভোগী হচ্ছেন, পুরান ঢাকার মোহতাসিম মাহির, আবীর মোক্তাদির, তাবাসসুম জাহান মীম, শিল্পী আক্তার, শেখ রাসেল, শিপন শেখ ও সাহিদা বেগম। দুদকে দায়েরকৃত অভিযোগে তারা জানান, মঞ্জুরুল হাসান সাদী সাধারণ কোনো প্রতারক নয়। সে আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্রের সদস্য। এর আগে বেশ কয়েকটি এমএলএম কোম্পানি খুলে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে চায়না চলে যায়। সেখান থেকে তথ্য-প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিত্যনতুন অ্যাপস খুলে চালাচ্ছে নিত্যনতুন অনলাইন প্রতারণা। হালকা-পাতলা গড়নের মঞ্জুরুল হাসান সাদী যেমনÑ ধূর্ত, তেমন ভয়ংকরও। এ কারণে তার বিরুদ্ধে স্বনামে কেউ অভিযোগ পর্যন্ত করে না। ছদ্মনামে অভিযোগ করলে কোনো প্রতিকারও মেলে না।
প্রতারণার বিষয়ে জানতে সাদীর ব্যবহৃত ০১৯৭০০২৫৬১১ মোবাইল নম্বরে এবং একই নম্বরে খোলা হোয়াটঅ্যাপে কল দেয়া হয়। বার বার রিং হলেও অপরপ্রান্ত থেকে কেউ ধরেনি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও মেলেনি সাড়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।