Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপচয়রোধে ইসলামের নির্দেশ কি?

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

উত্তর: প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোন কিছু কেনা, গ্রহণ করা বা ভক্ষণ করাকে বলা হয় অপচয়। অপচয়ের কারনে আমাদেরকে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। তাছাড়া, বর্তমানের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অপচয় করা বৃহৎ মানব জাতির জন্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে হুমকির কারণ। অপচয়ের ফলে প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় অপচয়কারী ব্যক্তি নিজেকে। তারপর সে ক্ষতির প্রভাব গিয়ে পতিত হয় গোটা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন এবং অর্থনীতির উপরে।

বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটকালে প্রতিটি দেশেরই অবস্থা কমবেশি বেগতিক। একদিকে চিন্তা হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার, অন্যদিকে চিন্তা হচ্ছে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগানোর। এমন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য বা অর্থের অতিরিক্ত ব্যয় করা হতে পারে ভয়াবহ বিপদের কারণ।

আসন্ন বিপদকে মোকাবেলার জন্য আমাদেরকে হতে হবে আরো সচেতন, আরো মিতব্যয়ী। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছু ক্রয় বা গ্রহণ তে নয়ই বরং চেষ্টা করতে হবে নূন্যতম মাত্রায় প্রয়োজন মেটানোর। অর্থাৎ, অপচয় পরিহার করতে হবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআ›লা অপচয় করাকে নিষেধ করেছেন। যেমন, সুরা আন›আমের ১৪১ নং আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, তোমরা এগুলির ফল খাও যখন তা ফলবন্ত হয় এবং ফসল কাটার দিন এগুলির হক আদায় কর(ওশর)। আর তোমরা অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালবাসেন না।অনুরুপ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সূরা আ›রাফ এর ৩১ নং আয়াতে। সেখানে বলা আছে, ্রহে আদম বংশধর! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর। তোমরা খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করো না(অপচয় করো না), আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

আর যারা অপচয় করে তাদেরকে উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তাআ›লা সূরা বনী ইসরাঈলের ২৯ নং আয়াতে বলেছেন, ্রআর তুমি তোমার হাত গলায় বেড়ী করে রেখ না (অর্থাৎ কৃপণ হয়ো না) এবং তাকে একেবারে খুলেও দিয়ো না (অর্থাৎ অপচয় করো না)। তাহ’লে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে। অর্থাৎ, বোঝা গেল, অপচয় এবং কৃপণতা করার মধ্যে কোন ধরণের উপকার থাকতে পারে না। বরং, তাদেরকে দুনিয়া এবং পরকাল উভয় জগতে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হবে। অন্য আয়াতে এসেছে, ্রনিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ।গ্ধ (সূরা বনী ইসরাঈল, ২৭)।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তাঁর বান্দার তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। ১) অনর্থক কথাবার্তা বলা ২) সম্পদ নষ্ট করা এবং ৩) অত্যধিক প্রশ্ন করা’। (সহীহ বুখারী- ১৪৪৭)।

সম্পদ যখন নির্ধারিত খাতে নির্দিষ্ট পরিমানে ব্যয় করা হয় তখন সেটাকে সম্পদ নষ্ট করা বলা হয় না। নষ্ট করার অর্থ হচ্ছে- কোন খাতে অতিরিক্ত সম্পদ খরচ করা বা অপ্রয়োজনীয় খাতে বিন্দু পরিমাণও ব্যয় করা। অপচয় বাদ দেয়া মানে আমি কৃপণতার নীতি গ্রহণ করাকে বুঝাচ্ছি না। শরীয়তের দৃষ্টিতে কৃপণতাও অপচয়ের মতোই নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। আমি বলতে চাচ্ছি, আমাদেরকে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা উচিৎ। কেননা, মধ্যপন্থাই উত্তম পন্থা। রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজেও সর্বদা মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতেন। প্রকৃতপক্ষে, মহান আল্লাহ তাআ›লার নির্দেশনা ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দেখানো পথই সর্বোত্তম ও সর্বজনীন।

মানবজাতিকে মধ্যমপন্থা ও মিতব্যয়ী হওয়ার নসিহত প্রদান করে পবিত্র কুরআনে এসেছে একাধিক নির্দেশনা। সূরা ফুরকানের ৬৭ নং আয়াতে উল্লেখ করা আছে, ্রতারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না। বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে। ঈমানদার ব্যক্তিদের পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে এই আয়াতটির অবতারণা করা হয়েছে। তার মানে, মিতব্যয়ীতা বা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা ঈমানদার মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই অর্থে বলা যায়, অপরিমিত খরচ তথা অপচয় এড়ানো ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবী।


উত্তর দিচ্ছেন: মোঃ নাঈম ইসলাম শিক্ষার্থী, আরবী সাহিত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ