পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ডিজিটাল এই দেশে মোবাইল ফোন অতি প্রয়োজনীয় ডিভাইস। বিজ্ঞানের বদৌলতে বলতে গেলে মোবাইল মানুষের জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। মোবাইলের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, ব্লগে সামাজিক যোগাযোগও বাড়ছে। কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় মোবাইল ও ফেসবুক নতুন প্রজন্মকে যে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সে খবর আমরা ক’জন রাখছি? এখন যে শিশু অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে আগামীতে দেশ গড়তে তাদের মস্তিষ্ক কি স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে? তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির দুনিয়ায় শিক্ষার্থী ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা’রা কেমন আছেন? নাকি তারাও মোবাইল-ইন্টারনেটে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন?
একটি জাতীয় দৈনিকে গতকাল ফিচার পাতায় ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিতে পিতা-মাতা মোবাইলে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। পাশে দাঁড়িয়ে ছেলে মোবাইলে গেম খেলছেন। ওই ছবি রাজধানী ঢাকার বসবাসরত পরিবারের বাস্তব চিত্র। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা যেভাবে দৌড়াচ্ছি; এতে অদূর ভবিষ্যতে জাতি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। ছুরি অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। ছুরি দিয়ে নানা কাজ হয়। ডাক্তার ছুরি রোগীর অপারেশনের কাজে ব্যবহার করেন; সেই ছুরি সন্ত্রাসী-ছিনতাইকারী খুনের কাজে ব্যবহার করেন। ছুরির দোষ নেই; সেটা কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে সেটাই মুখ্য। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, ইমেইল, ব্লগ, মোবাইলের প্রয়োজনীয়তা ও গুণাগুণ বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আপনি কিভাবে ব্যবহার করছেন বা ওই সবের ভাল-মন্দ কোনটা নিচ্ছেন সেটাই মুখ্য। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, মোবাইল, ইন্টারনেটের লাগামহীন অপব্যবহার দেশের নতুন প্রজন্মের সর্বনাশ করছে। ফোন-ইন্টারনেটের ‘অতি’ ব্যবহারে শিশুরা অসামাজিক হয়ে উঠছে। শিশুদের কল্পনাশক্তি হ্রাস, পড়াশোনায় অমনোযোগী, চোখের সমস্যা, ঘুম কম, অতিরিক্ত ওজন ও আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার জন্য দায়ী ওই মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স নামের একটি সংস্থার সমীক্ষায় এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
খেতে না চাইলে শিশুদের টিভি দেখিয়ে, মোবাইল ফোন হাতে দিয়ে খাওয়ানো হয়। বোঝার আগেই শিশুরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েন মোবাইল ফোনে। শিক্ষিত অথচ অচেতন অনেক অভিভাবককে গর্ব করে বলতে শোনা যায়, আমার ছেলে-মেয়ে এই বয়সেই মোবাইল বিশারদ। ফোন সেটের কোন ফোল্ডারে কী আছে; কোথায় কোন যন্ত্রাংশ, গেম সবই তার মুখস্থ। ব্যক্তিগত কথা পাঠকদের পছন্দ নয়। তারপরও জন্মের পর থেকে আমার ছেলে প্রতিদিন বাসায় অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা দেখছে। শিশু বয়সে পত্রিকার ছবি দেখে খাবার খেত। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় পত্রিকা পড়তে পড়তে খাবার খেত। একটু বড় হয়ে রাতে বই পড়তে পড়তে ঘুমাতো। পত্রিকা পড়লেও এখন রাতে মোবাইলে ফেসবুক দেখে-গেম খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়ে। বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়া কল্পনাও করে না। বই জ্ঞানের ভা-ার। অথচ শিশুদের ক্লাসের বাইরের বই পড়তে দেখা যায় না। শিশুরা মোবাইল/টিভি স্ক্রিনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। ছোট শিশু এবং প্রাইমারি স্কুলে পড়–য়া ছেলে-মেয়েদের অ্যাপ, গেম, ভিডিও, চ্যাটিং নেশায় পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেটের ভেতরে আছে জ্ঞানের মহাসমুদ্র। বিজ্ঞানের বদৌলতে গুগলে গেলে ভাল-মন্দ সব তথ্যই পাবেন। প্রশ্ন হলোÑ আমাদের ছেলেমেয়ে কী সেই জ্ঞানার্জনে সে তথ্যেই ভালোটা নিচ্ছে? নাকি মোবাইল-ইন্টারনেটের অপব্যবহারে নেশার রাজ্যে ডুবে যাচ্ছে?
মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার ইস্যুতে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান জরিপ করেছে। গবেষণাধর্মী ওই জরিপে শিশুদের জন্য মোবাইল-ইন্টারনেট মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে তুলে ধরা হয়। প্রযুক্তির ওই দুই মাধ্যম শিশুদের নেশার রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে এবং সেই মারাত্মক ‘নেশা’ তাদের জীবনকে সর্বনাশ করছে।
গবেষণায় বলা হয়, মোবাইল-ইন্টারনেট শিশুদের কল্পনাশক্তি হারিয়ে ফেলছে। আগে ভূতের গল্প ও ঠাকুরমার ঝুলি/ব্যাঙ্গোমা ব্যাঙ্গোমি বইয়ে পড়ত। এখন ওই সব গল্প শিশুরা বইয়ের পাতায় পড়ে না। টিভিতে কার্টুন ও ভিডিওতে দেখে থাকে। এতে শিশুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বই পড়ে নিজেদের কল্পনাশক্তির সৃষ্টির প্রবণতায় ব্যাঘাত ঘটছে। শিশুরা যত বেশি মোবাইল/টিভির প্রতি অনুরক্ত হচ্ছে তত বেশি কল্পনাশক্তি কমে যাচ্ছে; আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে। এই আসক্তির ফলে শিশুরা অসামাজিক হয়ে পড়ে। তাদের সব মনোযোগ থাকে মোবাইল বা টিভির দিকে। অন্য কিছুই তার মাথায় থাকে না। সারাক্ষণ মোবাইল/টিভি নিয়ে মেতে থাকায় তাদের মনোজগৎ থেকে খেলার ইচ্ছা ক্রমশ হারিয়ে যায়; শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। ছোটবেলার অভ্যাস ধীরে ধীরে নেশায় পরিণত হলে পরিস্থিতি ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গবেষণা বলছে, এসব শিশু অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার মধ্যেই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় পড়ে। ওজন বৃদ্ধি পাওয়া শিশুদের ঘুম কম হয়। যেসব শিশুর হাতে অল্প বয়সেই মোবাইল দেয়া হয় রাতে তাদের স্বাভাবিক/গভীর ঘুম হয় না। ঘুমের সময় কোনো নোটিফিকেশন/এসএমএসে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে; রাতে বারবার তাদের ঘুম ভেঙে যায়। প্রয়োজনীয় ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু ৭ ঘণ্টার কম ঘুমোয় তাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। দিনের মধ্যে অনেকটা সময় মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় শিশুদের চোখের ওপর ভীষণ চাপ পড়ে। কম আলোয় একনাগাড়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় চোখের পলক পড়ার হার কমে যায়। এতে চাখে যন্ত্রণা, ড্রাই আইসে সমস্যা হয়। পরবর্তীকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়। গবেষণার সমীক্ষা বলছে, যত বুদ্ধিমান শিশুই হোক হাতে মোবাইল/ল্যাপটপ থাকলে সোস্যাল মিডিয়া, মেইল পড়া, ভিডিও দেখার প্রতি মনোযোগ বেশি হওয়ায় ক্লাসে অমনোযোগী হয় এবং রেজাল্ট খারাপ করে। অতএব শিশুর হাতে মোবাইল নয়; বিজ্ঞানের ¯্রােতে বাবা-মা’র গা ভাসালে ভবিষ্যতে পরিবার, সমাজ ও দেশের সর্বনাশ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।