Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহপাক ওহীর মাধ্যমে নবীগণকে ‘গায়েবের সংবাদ’ বলে দিয়েছেন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আরবি ভাষায় ‘নাবাউন’ শব্দের অর্থ হলো সংবাদ। এর বহুবচন হলো ‘আম্বাউন’ এবং এর অর্থ হলো সংবাদসমূহ। একবচনে ‘নাবাউন’ শব্দটি আল কুরআনে ১৫ বার এসেছে। আর সম্বন্ধ পদ ‘নাবাআহু’ রূপে এসেছে একবার এবং ‘নাবাআহুম’ রূপে এসেছে একবার। এতে করে একবচনে ‘নাবাউন’ শব্দের ব্যবহার আল কুরআনে সর্বমোট ১৭ বার লক্ষ্য করা যায়। আর বহুবচন ‘আম্বাউন’ শব্দটি আল কুরআনে এসেছে ১০ বার। এবং বহুবচন সম্বন্ধপদ ‘আম্বাইকুম’ রূপে এসেছে একবার এবং সম্বন্ধ পদ ‘আম্বাইহা’ রূপে এসেছে একবার। সুতরাং বহুবচন ‘আম্বাউন’ শব্দটি -এর সম্বন্ধ পদসহ আল কুরআনে এসেছে ১২ বার। মোটকথা, বিভিন্ন আঙ্গিকে ‘নাবাউন’ শব্দের ব্যবহার কুরআনুল কারীমে ১৭+১২=২৯ বার লক্ষ্য করা যায়।

আর ‘গায়েবের সংবাদসমূহ বাক্যের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘আম্বাউল গায়েব’। এই ‘আম্বাউল গায়েব’ শব্দের ব্যবহার কুরআনুল কারীমে তিন বার হয়েছে। যেমন : (ক) সূরা আল ইমরানের ৪৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : এটা গায়েব সংবাদের অন্তর্ভূক্ত, যা আমি আপনাকে ওহী দ্বারা অবহিত করছি। আর ‘মারইয়ামের’ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাদের মধ্যে কে গ্রহণ করবে-এর জন্য যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করেছিল; আপনি (হে মুহাম্মাদ সা.) তখন তাদের নিকট ছিলেন না এবং তারা যখন বাদানুবাদ করছিল তখনও আপনি তাদের নিকট ছিলেন না।
(খ) সূরা হুদ-এর ৪৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : এসব গায়েবের সংবাদ আমি আপনাকে (হে মোহাম্মাদ সা.) ওহী দ্বারা অবহিত করছি, যা-এর আগে আপনি জানতেন না এবং আপনার সম্প্রদায় ও জানতো না। কাজেই আপনি ধৈর্য্য ধারণ করুন। নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাকীদেরই জন্য।

(গ) সূরা ইউসুফের ১০২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : এটা গায়েবের সংবাদ যা আপনাকে (হে মোহাম্মাদ সা.) আমি ওহী দ্বারা অবগত করছি। ষড়যন্ত্রকালে (ইউসুফ (আ.)-এর ভ্রাতৃবৃন্দ) যখন তারা মতৈক্যে পৌঁছে ছিল, তখন আপনি তাদের সাথে ছিলেন না।

উপরোক্ত আয়াতত্রয়ের অর্থ ও মর্মের প্রতি সচেতন দৃষ্টিতে তাকালে অতি সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, মহান আল্লাহপাক ওহীর মাধ্যমে নবীগণকে গায়েবের সংবাদ বলে দিয়েছেন-এর ধারাবাহিকতা প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) হতে শুরু করে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতবা (সা.) পর্যন্ত সকল নবী ও রাসূলগণের মাঝেই সমভাবে লক্ষ্য করা যায়। তারা সকলেই ওহীর মাধ্যমে গায়েবের সংবাদ লাভ করে ছিলেন এবং সে মোতাবেক আমল করে ছিলেন।

শুধু তাই নয় গায়েবের সংবাদ ওহীর মাধ্যমে অবহিত হওয়ার পর মানুষের সামনে তা প্রকাশ করতেন বলেই সব ওহী লাভকারীগণকে একবচনে ‘নবী’ এবং বহুবচনে ‘আম্বিয়া’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে সাইয়্যেদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, রাসূল রাব্বিল আলামীন, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতবা (সা.) কে এসব গায়েবের সংবাদের এক বিশেষ অংশ মহান আল্লাহপাক দান করেছেন, যার পরিমাণ পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণের তুলনায় অনেক অনেক বেশি।

এ কারণেই তিনি স্বীয় উম্মতকে এমন অনেক ঘটনা বা সংবাদ বিস্তারিত অথবা সংক্ষেপে বলে দিয়েছেন, যেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত হবে। ‘কিতাবুল ফিতান’ শিরোনামে ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে এমন বর্ণনা সম্বলিত রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর বহু সংখ্যক ভবিষ্যদ্বানী হাদীসের গ্রন্থ সমূহে মওজুদ রয়েছে। এ সমস্ত গায়েবের সংবাদ সম্বলিত জ্ঞান আল্লাহপাক তার প্রিয়তম রাসূল (সা.) কে দান করেছেন।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, সহীহ মুসলিম শরীফে ফিতনা ফাসাদ অধ্যায়ে, ক্রমিক নং- ৬৯৭৩ হতে ৭১৫০ পর্যন্ত ১৭৭টি হাদীস সংকলিত হয়েছে। যার সবগুলোই গায়েবের সংবাদ সম্বলিত। অনুরূপভাবে সহীহ বুখারী শরীফে ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে গায়েবের সংবাদ সংবলিত বহু সংখ্যক হাদীস সংকলিত হয়েছে।

বস্তুত; কিতাবুল ফিতান হাদীস শাস্ত্রের গ্রন্থ সমূহের একটি বিরাট অধ্যায়। এ অধ্যায় সম্পর্কে যারা অবগত নয়, তারা ‘মূল গায়েব’ এবং গায়েবের সংবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ে সক্ষম হতে পারেন না। আর পারেন না বলেই তারা নানারকম বিভ্রান্তির অবতারণা করছেন, যা একান্তই পরিত্যাজ্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন