দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
এ, কে, এম, ফজলুর রহমান মুন্শী : ইসলামের তালীম ও শিক্ষা হচ্ছে এই যে, নবী এবং রাসূল আল্লাহ পাকের মাখলুক, আল্লাহ পাকের বান্দাহ এবং মানুষ। তারা উপাস্য, স্রষ্টার অবতার, দেবতা বা ফেরেশতা নন।
এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে এই সমস্যাটি সম্পর্কে এক অন্ধকারময় পরিবেশ বিরাজমান ছিল। কিন্তু তার ফায়েজ ও তালীম দ্বারা সে অন্ধকার দূরীভূত হয়ে আলোর নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
ইসলাম-পূর্ব যুগে ইহুদীদের মত এমন কিছু মতাবলম্বী মানুষও ছিল, যারা মনে করত-ভবিষ্যদ্বাণী যারা বলতে পারে, তারা যদিও নবী তবু তারা সাধারণ মানুষের মতই একজন। তৎকালে তারা যে সকল ভবিষ্যৎ বক্তাদেরকে নবী বলে মনে করত, তারা সকল প্রকার গোনাহের কাজও করত। এমনকি অসচ্চরিত্রের কার্যাবলীর সাথেও তারা গভীরভাবে সম্পৃক্ত থাকত। সময় সময় তারা কুফুরীও করত কিন্তু এত কিছুর পরও তাদেরকে ইহুদী ও অন্যান্য লোকেরা নবী বলেই বিশ্বাস করত।
অপরদিকে খৃস্টান সম্প্রদায় তাদের পরিত্রাণকর্তাকে মনে করত যে, সে মানুষ হতে বহু ঊর্ধ্বে। স্বয়ং প্রভু, অথবা সৃষ্টি জগৎ ও বস্তুহীন জগতের সুষ্ঠু সমন্বয়কারী কিংবা এ দুয়ের সমাহার।
তা ছাড়া হিন্দুরা তাদের পথপ্রদর্শকের সম্পর্কে ধারণা করত যে, তারা দেবতা এবং অবতার। অর্থাৎ সাকার প্রভু অথবা মানুষরূপী প্রভু। যার মাঝে সকল প্রকার ঐশ্বরিক শক্তির বিকাশ আছে।
কিন্তু ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা এ সকল মতবাদের একটিও সমর্থন করেনি; বরং এগুলোর মধ্যবর্তী অবস্থা অথবা মধ্যম পন্থাকে গ্রহণ করেছে। ইসলামের বিধান অনুসারে নবী ও রাসূলগণ মাখলুক, মানুষ এবং পরিপূর্ণ বান্দাহ এবং আল্লাহ পাকের নির্দেশের সামনে তারা অনুগত ও আত্মসমর্পণকারী। অপরদিকে তারা আল্লাহর সম্মানিত ও মর্তবাশীল বান্দাহ, মাসুম, পুণ্যবান, আল্লাহর শক্তি হতে ফয়েজ ও বরকত লাভকারী, সৌভাগ্যবান এবং হেদায়েতের কেন্দ্রস্থল। আল্লাহ পাকের নির্দেশে তাদের দ্বারা বহু অত্যাশ্চর্য ও অলৌকিক কর্মকা-ও পরিসাধিত হয়। তাছাড়া ভুল ধ্যান-ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত সীমাতিক্রমকারী মতবাদগুলোকে তারা সঠিকভাবে মূলোৎপাটন করেন।
ইসলামের আবির্ভাবের প্রাক্কালে আরবের অন্ধকারাচ্ছন্ন সম্প্রদায়গুলো হিন্দু, গ্রীক, ইহুদী ও খৃস্টানদের মত মনে করত যে, মানুষের সুপথ প্রদর্শনের জন্য মানুষ নয়, বরং মানুষ হতে ঊর্ধ্বে অবস্থিত কোনও সত্তা হওয়া প্রয়োজন। আর সে সত্তা কেবল ফেরেশাদেরই আছে।
আল-কুরআন তাদের এই ধারণাকে বার বার মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং ঘোষণা করেছে, যদি পৃথিবীতে ফেরেশতাগণ আবাদ থাকত, তাহলে ফেরেশতাদেরকে তাদের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করা হত। আর মানুষের নিকট ফেরেশতাগণ নবীরূপে আগমন করলেও তাদের আকৃতি হতো মানুষেরই মত। এমতাবস্থায় তোমরা কি তাকে ফেরেশতারূপে মান্য করতে?
মোদ্দা কথা হচ্ছে এই যে, নবী ও রাসূলদের দুটো পরিচয় রয়েছে। একটি হলো তারা মানবাকৃতি ধারণ করেই আগমন করেন। মানুষের মতই পানাহার, চলাফেরা, নিদ্রা-জাগরণ, বিবাহ-শাদী এবং জন্মগ্রহণ করেন ও মৃত্যুমুখে পতিত হন। আর দ্বিতীয়টি হলো তারা নিজেদের রূহানী শক্তি, নিরপরাধ হওয়া, পবিত্র চরিত্রের অধিকারী হওয়া এবং নবুওতের পদমর্যাদা লাভের জন্য নির্বাচিত ও মনোনীত হওয়ার দিক দিয়ে সাধারণ মানুষ হতে বহু ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন।
ইহুদীদের মত যাদের দৃষ্টি নবী ও রাসূলদের মানবীয় আকৃতির উপর পতিত হয় তারা তাদেরকে সাধারণ মানুষরূপে মনে করে। আর খৃস্টানদের মত যাদের নজর তাদের মানব-ঊর্ধ্ব গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের উপর পতিত হয়, তারা তাদেরকে উপাস্য হওয়ার গুণাবলীর সাথে সম্পৃক্ত মনে করে। অথচ প্রকৃত সত্য এই উভয় অবস্থার মাঝখানেই অবস্থিত।
বস্তুত নবী এবং রাসূলগণ নিজেদের মানবীয় গুণাবলীর দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে মানুষ। কিন্তু তাদের মাঝে এমন কিছু মানব-ঊর্ধ্ব বৈশিষ্ট্যাবলী পাওয়া যায়, যার দরুন তারা মানব-ঊর্ধ্ব মর্যাদার আসনে সমাসীন থাকেন। আরবের অবিশ্বাসী কাফের শ্রেণী এ পর্যায়েই দ্বিধা-সন্দেহে নিপতিত হয়ে পড়েছিল এবং নবী ও রাসূলগণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারছিল না। যখনই তাদের সামনে কোনও নবী এবং রাসূল নিজেদের নবুওত এবং আল্লাহর নিকট হতে আগমণ করার দাবি উত্থাপন করতেন তখনই তারা তাদের মানবীয় বৈশিষ্ট্যাবলীর প্রতি লক্ষ্য করে বলত, তুমি আমাদের মতই মানুষ। তুমি আল্লাহ পাকের বার্তাবাহক ও কাসেদ কেমন করে হতে পার? আল-কুরআনে এ কথাই সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে- এরশাদ হচ্ছে, “তবে কি আল্লাহ পাক মানুষকে কাসেদ এবং রাসূল করে প্রেরণ করেছেন।” (সূরা বনী ইসরাঈল ঃ রুকু-১১) আরবের অবিশ্বাসীরা রিসালাত ও নবুওতের পদমর্যাদার অধিকারী কোনও মানুষ হতে পাবেন তা স্বীকার করত না। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের কথার উত্তরে বলেছিলেন, “আমি হচ্ছি কেবল একজন মানুষ রাসূল”। (সূরা বনী ইসরাঈল ঃ রুকু-১০)
তাছাড়া তারা এ সন্দেহও পোষণ করত যে, পথভ্রষ্ট মানুষের পথ-প্রদর্শন কি কোন মানুষ করতে পারে? আল-কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, “তবে কি মানুষ আমাদের সুপথ প্রদর্শন করতে পারে?” (সূরা তাগাবুন”: রুকু-১)
প্রকৃতপক্ষে এটি এমন একটি সন্দেহ ছিল, যার মাঝে আটকে পড়ে খ্রিস্টান সমাজ হযরত ঈসা (আ:)-কে মানুষ বলে কল্পনা করত না। তারা মনে করত, উত্তরাধিকার সূত্রে গোনাহগার মানুষকে অপর একজন মানুষের ছেলে কেমন করে নাজাত দিতে পারে? কিন্তু এ সহজ কথাটি বুঝতে চায়নি যে, মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে গোনাহগার নয় বরং জীবন পরিক্রমায় কখনো সে গোনাহগার হয় এবং কখনো গোনাহগার হয় না। এজন্য নিষ্পাপ ও বেগোনাহ হতে হলে মানুষ হওয়া যাবে না এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এই কথাটি অবিশ্বাসী কাফেররাও বুঝতে পারেনি। ফলে আম্বিয়ায়ে কেরামকে তাদেরই মতো শরীরসম্পন্ন মানুষ কল্পনা করে তাদেরকে নুবওতের যোগ্য বলে মনে করত না। তারা একথাও বলত- “তুমিত কিছু ই নয়; বরং আমাদের মতো মানুষ।” (সূরা ইব্রাহীম : রুকু-২)
এ জন্য তারা অন্যান্য লোকদেরকে নবীকে অস্বীকার করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছিল। তারা বলত, “তিনি কিছুই নন; বরং তোমাদের মতো মানুষ।” (সূরা ইব্রাহীম : রুকু-২)। তাছাড়া লোকদের নবী ও রাসূলকে অস্বীকার করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে বলত- “এ তো কিছুই নয়Ñ বরং তোমাদেরই মত মানুষ”। (সূরা আম্বিয়া : রুকু-১) অপর এক আয়াতে আছে, তারা একথাও বলতÑ “এ কিছুই নয়, কিন্তু তোমাদেরই মত মানুষ।” (সূরা মুমিনীন : রুকু-২)
আর আম্বিয়াগণের সামনে তারা এই দলিল পেশ করে বলত, “তুমিত আমাদেরই মত মানুষ”। (সূরা শোয়ারা: রুকু-৮) আবার কখনো বহুবচন উল্লেখ করে বলত, “তোমরাত আমাদেরই মতো মানুষ”। (সূরা ইয়াসীন : রুকু-২) আর তারা নিজেদের এই দাবির সত্যতাকে তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রত্যক্ষ দর্শনের মাধ্যমে প্রতিপন্ন করতে প্রয়াস চালাত এবং বলত, “আমরাত তোমাকে আমাদের মত মানুষই দেখছি” (সূরা হুদ : রুকু-৩) কিন্তু আম্বিয়ায়ে কেরাম তাদের কথার প্রত্যুত্তরে সবসময় এই জবাবই দিতেন যে, হ্যাঁ, তোমাদেরই মতো মানুষ। কিন্তু আল্লাহপাকের ফজল ও করমের ফলে সৌভাগ্যবান। এটাই হচ্ছে আমাদের ও তোমাদের মাঝে প্রভেদ। আল-কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “তাদের রাসূলগণ উত্তর করলেন, আমরা তোমাদেরই মতো মানুষ। কিন্তু আল্লাহপাক স্বীয় বান্দাহদের মাঝে যার উপর ইচ্ছা ইহসান ও সহৃদয়তা প্রদর্শন করে।” (সূরা ইব্রাহীম : রুকু-২)
অবিশ্বাসী কাফেরদের নজর নবী ও রাসূলগণের এই দু’টো দিকের মাঝে কেবলমাত্র একটি দিকের উপর পতিত হত। আম্বিয়াগণ তাদের প্রশ্নের উত্তরে তাদের দৃষ্টি নিবন্ধ দিকটিসহ নিজেদের অপর দিকটিও উপস্থাপিত করেছেন এবং বলেছেন, হ্যাঁ, আমরা মানুষ। কিন্তু এমন শ্রেণীর মানুষ যাদের উপর আল্লাহপাকের দয়া ও অনুকম্পার বারি বর্ষিত হয়। অর্থাৎ আমাদেরকে নবুওতের দ্বারা সৌভাগ্যবান করা হয়েছে এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারা মর্যাদাশীল করা হয়েছে। আল-কোরআনে যে সকল নবী এবং রাসূলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাদের সকলেই একই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল এবং অনুরূপ প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিও আরোপ করা হয়েছিল। তাদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বার বার বলেছিলেন যা তাঁকে আল্লাহপাক অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, “বলে দিন, আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ।” প্রকৃতপক্ষে এই ঘোষণার দ্বারা খ্রিস্টানদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করা হয়েছে যে, “নবীগণ আল্লাহর সাথে অংশীদার”। এই ধারণায় অসাড়তা প্রমাণিত হওয়ার ফলে প্রচলিত খ্রিস্টান সমাজের ভ্রান্ত বিশ্বাসেরও স্বরূপও ফুটে উঠেছে উদিত সূর্যের মতো।
অফসোস এজন্য যে, এই শ্রেণীর ভ্রান্ত ধারণা বর্তমানকালে উম্মতে মোহাম্মদীর একটি দলের মাঝেও পাওয়া যায়, যারা দুনিয়ার বুকে আল্লাহপাকের তাওহীদে কামেল-এর প্রচারকারী বলে খ্যাত। অপরদিকে এই ঘোষণার ফলে একদল অতিরঞ্জনকারী এই পরিণাম বের করেছে যে, Ñ “পয়গাম্বর ও সাধারণ মানুষের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এমনকি সাধারণ মানুষের উপর পয়গাম্বরদের কোন রকম শ্রেষ্ঠত্বও নেই। তবে পয়গাম্বরদের উপর অহী এসে থাকে। সাধারণ মানুষ তা লাভ করতে পারে না।”
বস্তুত তাদের এই ধারণার মূল মর্ম হচ্ছে এই যে, পয়গাম্বরদের মাঝে যাঁর উপর অহী নাযিল হয়, তাঁর মাঝে শুধু একটি মুহূর্তের জন্য মনসবে নবুওতের মর্যাদা পাওয়া যায়। এর আগে এবং পরে তিনি একজন সাধারণ মানুষই বটে। শুধু তা-ই নয়, এই শ্রেণীর অপর একটি দল আরোও অগ্রসর হয়ে এই দাবি করতেও কুষ্ঠাবেধ করেনি যে, মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পয়গাম্বরী, মূলত কেবলমাত্র ইহাই যা আল-কোরআনের ভাষায় হুকুম এসেছে। তাছাড়া তার যে সকল আহকাম আল-কোরআনে নেই- সেগুলো তাঁর প্রজ্ঞা ও মনীষা এবং বিষয়াবলীর এন্তেজামী পদক্ষেপ মাত্র। যেগুলো পালন করা ইসলামী শরীয়ত নয়। এমনকি এগুলো শরীয়তের অংশ নয়। এই জাতীয় ধারণাগুলো মূলত অতিরঞ্জিতকারীদের ধারণার মোকাবেলায় জঘন্যতম অবমূল্যায়নকারীদের থেকেই প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে এই দু’শ্রেণীর মতাবলম্বীদের কেউই সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠত নয়। উভয় শ্রেণীই গোমরাহ এবং প্রকৃত সত্য হতে বহুদূরে অবস্থিত। মূলত সঠিক সত্যপথ ও মত হচ্ছে এ দু’মতবাদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। কোরআন পাকের তিনটি স্থানে ঐ সকল আয়াত সন্নিবেশিত হয়েছে যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাশারিয়াত বা মানুষ হওয়ার ঘোষণা জারি করা হয়েছে। কিন্তু সকল স্থানেই তৌহিদে কামেলের বয়ান, আল্লাহর সামনে রাসূলগণের আনুগত্যের ব্যাখ্যা এবং ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। বিরুদ্ধবাদীদের ধারণা ছিল এই যে, রাসূলগণের মাঝে এই শক্তি ও ক্ষমতা অবশ্যই থাকতে হবে যে, তাঁরা কোন কথার স্বীকৃতি জবরদস্তি করে আল্লাহর নিকট হতে আদায় করবে এবং চেষ্টা ও সুপারিশের মাধ্যমে অপরাধসমূহ ক্ষমা করিয়ে নেবে। অথচ কোরআনপাকের শিক্ষা হচ্ছে এই যে, নবী ও রাসূলগণ যা কিছু হাসিল করেছিলেন, তাহলো আল্লাহপাকের এজাযত অনুমতি ও দানের বিকাশ মাত্র।
যে সকল মুশরেক শ্রেণী আল্লাহর বান্দাহদেরকে তার অংশীরূপে গ্রহণ করেছিল তাদের ভ্রান্ত ধারণার উল্লেখ করে আল-কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছেÑ“তবে কি অবিশ্বাসীরা এই মনোভাব পোষণ করছে যে, তারা আমার বান্দাহদেরকে (রাসূল এবং ফেরেশতা) আমাকে ছাড়া উপাস্য বানিয়ে নিবে? আমি এই অবিশ্বাসীদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছি।” (সূরা কাহফ : রুকু-১২)
মহান আল্লাহপাক তাদের এই ধারণাকে ‘কুফর’ সাব্যস্ত করেছেন এবং তারপর সূরা কাহকে স্বীয় সীমাহীন গুণাবলী ও কামালাতের কথা তুলে ধরেছেন। তারপর ইরশাদ করেছেন-“হে প্রিয় নবী! বলে দিন, আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ, আমার কাছে অহী প্রেরিত হয়, বস্তুত তোমাদের মাবুদ মাত্র একজনই।” (সূরা কাহফ : রুকু-১২) আল কোরআনের অপর একস্থানে ঠিক একই তালীমকে তুলে ধরা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে- “বলে দিন যে, আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ, আমার উপর অহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য কেবলমাত্র একজনই। সুতরাং তোমরা সোজাপথে তাঁরই দিকে অনুরক্ত থাক এবং অপরাধসমূহের ক্ষমা প্রার্থনা কর, বস্তুত মুশরেকীনদের জন্য রয়েছে ধ্বংস।” (সূরা হা-মীম আস সিজদাহ: রুকু-১) এই আয়াতের মূলমর্ম হচ্ছে এই যে, আল্লাহপাকের সন্নিধানে রাসূলগণও অন্যান্য বান্দাহদের মতো বান্দাহ বিশেষ। তাই প্রার্থনা কেবল আল্লাহর দরবারেই করা উচিত এবং নিজেদের অপরাধ মার্জনা করার দরখাস্ত তাঁরই কাছে পেশ করা অপরিহার্য। কেননা, প্রার্থনা গ্রহণ করা ও অপরাধ মার্জনা করার এখতিয়ার রাসূলগণের নেই। আল-কোরআনের অপর একস্থানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কাফেরদের এই দাবিসমূহের কথাও বিবৃত রয়েছে। তারা বলেছিল, তুমি যদি প্রকৃতই রাসূল হয়ে থাক, তাহলে আমাদের জন্য স্বর্ণের শামিয়ানা বানিয়ে দাও, যেখানে পানির ¯্রােতধারা নেই সেখানে পানির ধারা প্রবাহিত কর, আমাদের ধূসর মরুভূমিকে সবুজ-শ্যামল বাগানে রূপান্তরিত করে দাও, নিজের সাথে ফেরেশতাদের পাখা নিয়ে গমনাগমন কর, আমাদের সামনে আকাশে উড়ে যাও এবং সেখান হতে কিতাব হাতে নিয়ে অবতরণ কর। আল কোরআনে এ সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে- “এবং তারা বললো, আমরা কখনো তোমার উপর ঈমান আনব না যতক্ষণ না তুমি ভূমি হতে আমাদের জন্য এক প্র¯্রবণ উৎসারিত করবে। অথবা তোমার খেজুরের অথবা আঙ্গুরের এক বাগান হবে, যার ফাঁকে ফাঁকে তুমি অজ¯্র ধারায় প্রবাহিত করে দেবে নদীনালা। অথবা তুমি যেমন বলে থাক, তদনুযায়ী আকাশকে খ--বিখ- করে আমাদের উপর ফেলবে, কিংবা আল্লাহ ও ফেরেশতাগণকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবে। অথবা তোমার একটি স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে, তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আকাশে আরোহণ আমরা কখনো বিশ্বাস করব না। যতক্ষণ তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ না করবে, যা আমরা পাঠ করব।” (সূরা বনী ইসরাঈল, রুকু-১০) (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।