বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
চলমান পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ও অবস্থান এবং অবস্থিতির প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে সহজেই অনুমান করা যায় যে, আসমান এবং জমিনে পরম কৌশুলী ও মহা বিজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত অসংখ্য ও অগণিত বস্তুরাজি সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি বস্তুতেই পৃথক পৃথক গুণ, বৈশিষ্ট্য ও শক্তি প্রচ্ছন্ন রেখেছেন। মূলত -এর সবগুলোই আল্লাহর সেনাবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত। পৃথিবীর উত্থান-পতনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহপাক বিভিন্ন সময়ে এবং প্রয়োজনে তাঁর সেনা বাহিনী ব্যবহার করেছেন। তাঁর সেনা বাহিনীর মোকাবিলা করার শক্তি সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুরই নেই। আল্লাহর সেনাবাহিনী সকল সময়ে সকল অবস্থায় বিজয় অর্জন করেছে, বর্তমানেও করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। এই সতর্কবাণী আল্লাহপাক বার বার আল কুরআনে উচ্চারণ করেছেন।
এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ১. আর আসমান সমূহ ও জমিনের সেনাবাহিনী সমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, হিকমতওয়ালা। (সূরা আল ফাতহ : ৪)। ২. আর আসমান সমূহ ও জমিনের সেনাবাহিন সমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা। (সূরা আল ফাতহ : ৭)। ৩. আর আপনার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া কেউ জানে না। (সূরা মুদ্দাস্সির : আয়াত-৩১)।
৪. হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের ওপর সমাগত হয়েছিল। অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়ে ছিলাম ঘূর্ণিবায়ূ এবং এমন বাহিনী যা তোমরা দেখনি; আর তোমরা যা কর আল্লাহপাক তার সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা আল আহযাব : ৯)। ৫. আর অবশ্যই আমাদের বাহিনীই বিজয়ী হবে। (সূরা আস্ সাফফাত : ১৭৩)।
উদ্ধৃত-আয়াত সমূহের অর্থ ও মর্মের প্রতি তাকালে সহজেই অনুমাণ করা যায় যে, আসমান ও জমিনের সব কিছুই আল্লাহর সেনাবাহিনী। আর এই বাহিনী সম্পর্কে আল্লাহপাক ছাড়া অন্য কেউ কিছুই জানেনা এবং এই বাহিনীকে চোখেও দেখা যায় না। এমন কি আল্লাহপাকের বাহিনীকে পরাজিত করাও সুদূর পরাহত।
তাই, বর্তমান দুনিয়ার পরাশক্তির অধিকারী, বিত্তবান ও ধোকাবাজ রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং তাদের পাচাটা অনুসারীদের প্রতি আমরা সবিনয়ে অনুরোধ করছি সে, এখনও সময় আছে নিজেদের যাবতীয় অনাচার, পাপাচার ও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরোধীতা থেকে তওবাহ করুন, বিরত থাকুন, এবং ঈমান ও এনকিয়াদের সত্য পথ অবলম্বন করে নিজে বাঁচুন এবং সৃষ্টির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করুন। অন্যথায় আমও যাবে এবং ছালাও হারাবে। কারণ, আল্লাহপাকের সেনাবাহিনী তাঁর নির্দেশ মোতাবেক নিজেদের প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলেছে। শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষা।
মনে রাখবেন, মহাপরাক্রমশালী ও মহাবিজ্ঞানী-আল্লাহপাক স্বীয় হুকুম এবং নির্দেশ সম্পর্কে স্পষ্টতই আল কুরআনে ঘোষণা করেছেন : ১. আর আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়িত হবেই। (সূরা আন্ নিসা : ৪৭)। ২. জেনে রেখ সৃজন এবং নির্দেশ তাঁরই, সৃষ্টিকূলের প্রতিপালক আল্লাহ কতইনা বরকতময়। (সূরা আল আরাফ : ৫৪)। ৩. ইহা আল্লাহর নির্দেশ যা তিনি তোমাদের প্রতি নাজিল করেছেন, আর যে আল্লাহকে ভয় করে (পাপের পথ পরিহার করে) তিনি তার পাপ রাশির প্রতি বিধান করে দেন। (সূরা আত্ তালাক : আয়াত-৫)।
এখানে আল্লাহকে ভয় করার অর্থ হলো তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা স্থাপন করা ও সর্বতোভাবে তাঁর ওপর ভরসা করা। এতদপ্রসঙ্গে হযরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করতে, তবে আল্লাহপাক তোমাদেরকে পাখির ন্যায় রিজিক দান করতেন। পাখি সকাল বেলায় ক্ষুর্ধাত অবস্থায় বাসা হতে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্তি করে ফিরে আসে। (মুসনাদে আহমাদ : ১/৩০)।
মোটকথা, এই দুনিয়ার বুকে আল্লাহপাকের দেয়া আইন ও বিধান এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (সা:)-এর জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যারা নিজেদের বানানো আইন ও কানুন প্রতিষ্ঠায় নিমগ্ন, তাদের হাবভাব ক্রিয়া-কলাপ অবলোকন করলে মহান আল্লাহপাকের এই বাণীর কথা মনে পড়ে। তিনি ইরশাদ করেছেন : আর দুনিয়ার জীবন প্রতারণার সামগ্রি ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা আল হাদীদ : ২০)।
বস্তুত আল্লাহপাকের এই বাণী অনুধাবন করার পর একজন বুদ্ধিমান ও চক্ষুষ্মান ব্যক্তি এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে পারে যে, দুনিয়া একটি প্রতারণার স্থল। এখানকার সম্পদ প্রকৃত সম্পদ নয়, যা আলমে বরযখ ও আলমে আখেরাতে কাজে আসতে পারে। দুনিয়ার ক্ষণভঙ্গুরতার অবশ্যম্ভাবী পরিণতির প্রতি লক্ষ্য রেখে মানুষের উচিৎ জাগতিক সুখ ও আনন্দে মগ্ন না হয়ে আখেরাতের চিন্তা বেশি করা। যেন অক্ষমতা ও মৃত্যু আসার পূর্বেই সৎ কাজের পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে এবং জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভে ধন্য হতে পারে। এখানেই রয়েছে চরম ও পরম সার্থকতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।