দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর: যিনি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর রাজী-খুশি বা ফানা হয়ে যান তাকেই সূফী বলা হয়। যা সূফী দর্শনে ফানা আনিল এরাদা বলা হয়ে থাকে। সূফীদের ইহলৌকিক ও পরজাগতিক কোনো বস্তুুর প্রতি আখাংকা বা মোহ থাকে না। পরমের ইচ্ছাই হলো সূফীর ইচ্ছা। এরশাদ হয়েছে, ‘রাদিআল্লাহু আনহুম ওয়া রাদুআনহু।’ (সূরা আল-মুজাদালাহ: ২২)। অর্থাৎ রব তাদের প্রতি সন্তÍুষ্ট এবং তারা রবের প্রতি সন্তÍুষ্ট। সূফীদের অনর্থ বা অহেতুক কাজ-কর্ম পরিহার করে চলতে হয়। সূফীরা কম কথা বলেন। অল্প আহার করে থাকেন। কম ঘুমিয়ে থাকেন। তারা অনর্থ অপ্রয়োজনীয় ঘুরা ফেরা চলা ফেরা পরিহার করে থাকেন। তারা রবের দর্শন তথা দীদারের ইচ্ছাতে সার্বক্ষনিক মোরাকাবা মোশাহেদা তথা ইয়াদ করে থাকেন। সূফীরা নির্বিলাশ জীবন যাপনকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সূফীরা পার্থিব ধন-দৌলতের জন্য কখনো ইন্তেজারী করেন না। যা সূফী দর্শনে ফানা আনিল হাওয়া বলা হয়। দয়াময় প্রভূর ইচ্ছার ওপর কারো কোনো কর্তৃত্ব কিংবা কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী (র:) তাঁর কালামে লিখেছেন, ‘রূপ মনোহর, নৈরূপ বরণ, নৈরূপে পরিয়ে, রূপ আবরণ, বহুরূপী রূপে, নিত্য নব সাজে, দেখাও রূপেরি শান।’ আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির ভাঙ্গা-গড়ার মধ্যে দিয়ে শান ও কুদরতের বহি: প্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন। আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির পরিবর্তন-বিবর্তন ও ভাঙ্গা-গড়ার মাধ্যমে বান্দার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপমা উদাহরণ তুলে ধরেন থাকেন। যা থেকে মানবকূল শিক্ষা নিতে পারে। যার ধারাবাহিকতা সৃষ্টির শুরু থেকে এখনো অব্যাহত রয়েছে। এরশাদ হয়েছে,‘কুল্লা ইয়াওমিন হুয়া ফী শান।’ (সূরা আর-রহমান: ২৯)। অর্থাৎ তিনি সর্বদাই নিত্য নতুন কাজে মনোযোগ দেন। আল্লাহতায়ালা হযরত আদম (আ:) ও হযরত হাওয়া (আ:) দু’জনকে সৃষ্টি করে জান্নাতে রেখে দিয়েছিলেন। জান্নাতে বসবাসের এক পর্যায়ে আল্লাহতায়ালার হুকুম অমান্য করে তথা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে গন্দম ফল তথা নিষিদ্ধি বস্তুু খাওয়ার অপরাধে তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানোর মাধ্যমে জমিনের আবাদ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই থেকে শুরু হয় সৃষ্টির ভাঙ্গা-গড়ার নিত্য নতুন প্রক্রিয়া। এ ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হযরত আদম (আ:) ও হযরত হাওয়া (আ:) কে ধরাধামে পাঠানোর মাধ্যমে মহান প্রভূ সৃষ্টির আড়ালে থাকিয়া এক অপরূপ খেলা খেলিতেছেন। মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী (র:) তাঁর কালামে আরো লিখেছেন, ‘কে তুমি হে সখা, আড়ালে থাকিয়া, হরিলে আমারি প্রাণ। ছলনা কৌশলে, জগৎ মজালে, এমন মোহনী জান।’ সৃষ্টির ভাঙ্গা-গড়ার অপূর্ব লীলা খেলার বৈচিত্র্যের মধ্যে যিনি নিজেকে রবের ইচ্ছার অধীনে বিলিন করতে পেরেছেন। তিনিই হলেন প্রকৃত সূফী। পার্থিব জগতে সূফীরা যেমন দু:খ যাতনার সম্মুখীন হয়েছেন ববের ইচ্ছার ওপর স্থীর থেকেছেন। নবীদের ক্ষেত্রেও এরূপ দেখা যায়। হযরত ইব্রাহিম (আ:), হযরত যাকারিয়া (আ:) কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখী হয়েছিলেন। মহান প্রতিপালক সময় সময়ে বান্দার ভালোবাসার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। বান্দাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন করে সাজানো গুছানো জীবন সংসার নিমিষেই তছনছ করে দিয়ে ঘরের বাহির করে দেন। যারা রবের প্রেমে বিভোর তথা ফানা থাকেন তারাই শুধু প্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন। তাদেরকে কোনো দু:খ যাতনা বেদনা বিন্দু মাত্র টলাতে পারে না। যে পরীক্ষাটিতে হযরত মনসুর হাল্লাজ (রা:) কে টলাতে পারেননি। যারা আল্লাহতায়ালার নেয়া পরীক্ষায় হাসি মুখে অটল থাকতে পারবেন। রবরে ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা মনে করবেন তারাই সূফীর মর্যাদা লাভ করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবী লাভ করবেন। আল্লাহ সূফীদের পথ অনুসরণ করে দোজাহানের পাথেয় অর্জনের তৌফিক দান করুক। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন:- ফিরোজ আহমাদ, ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।