Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গাছ পাচার বন্ধের পর এবার মৎস্য সেক্টর ধ্বংসের তৎপরতা

সুন্দরবনে প্রতি বছর বিষ প্রয়োগে কোটি কোটি টাকার মাছ শিকার

| প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : দৈনিক ইনকিলাবের রিপোর্টের জের ধরে বারবার বিশেষ অভিযান চালায় বন বিভাগ। সফলতাও আসে। কিন্তু শীত মৌসুম আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেছে বিষ দিয়ে মাছ শিকার। সুন্দরবনের খালে এটি প্রতি বছরের চিত্র। এর সাথে জড়িত রয়েছে বনদস্যুরা, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, বন বিভাগের কতিপয় অসৎ সদস্যসহ উপকুলীয় অঞ্চলের পুলিশের কথিত ক্যাশিয়ার ও খুলনার গোয়েন্দা শাখার সোর্সরা। সবাই মিলেমিশে লুটেপুটে নিচ্ছে সুন্দরবনের এই মৎস্য সম্পদ। গাছ পাচার বন্ধের পর এবার লাঠে উঠছে মৎস্য সেক্টর।
সূত্র মতে, বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের মৎস্য ভা-ার এখন হুমকির সম্মুখীন। এর আগে গত দেড় যুগে ব্যাপকভাবে সুন্দরীগাছ পাচারের মহোৎসব চলে। গত অর্ধ যুগে তা একটি ব্যালেন্সিং পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। আর এখন শুরু হয়েছে মৎস্য উজাড়ের মহাযজ্ঞ। এদিকে আমিষের চাহিদা পূরণের অফুরন্ত এই ভা-ারের রক্ষণাবেক্ষণ এখন যেন সময়ের দাবি। পর্যাপ্ত সাপোর্ট, জলযানের অভাব, সোর্স মানি ও ঝুঁকি ভাতা না থাকায় এবং সর্বোপরি মাস্টার প্লানের অভাবে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ও অভয়ারণ্যে বিষ দিয়ে মাছ শিকার কোনোভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না। মাছ ধরার এই সর্বনাশা প্র্যাকটিস গত অর্ধ যুগ ধরে চলে এলেও লোকবলের অভাব ও বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে এ অপরাধ দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মাছ বিষ প্রয়োগে মারা হচ্ছে। এতে শত শত মাছের প্রজাতি ধ্বংসের পাশাপাশি মৎস্য প্রজনন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ মৎস্য ভা-ার শূন্য হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। আর আমরা খাচ্ছি বিষাক্ত খাবার অনুপযোগী মাছ।
সূত্র মতে, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট সুন্দরবনের স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ও জলভাগের পরিমাণ ২ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবন বন বিভাগ পূর্ব ও পশ্চিম এ দুই ভাগে বিভক্ত। দুই বিভাগে মোট ৪টি রেঞ্জ রয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যে ৪ শতাধিক খাল রয়েছে। এসব খাল-নদী পরিদর্শন করার জন্ম ৭৬টি ক্যাম্প ও মাত্র ২শ’র মতো বন প্রহরী আছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। সুন্দরবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও সরঞ্জামাদি নেই। সুন্দরবন অসংখ্য নদী-নালা ও খাল দ্বারা বেষ্টিত।  এর মধ্যে বেশ কিছু নদী ও খাল অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে প্রজননের কারণে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু অসাধু মৎস্য শিকারিরা সুন্দরবনে বিভিন্ন খাল ও নদ-নদীতে বিষ প্রয়োগ করে অবাধে নানা প্রজাতির মাছ শিকারের নামে সর্বনাশা কারবার চালাচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন বনের গহিনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে বিষ প্রয়োগ করে শিকার করা মাছ খেয়ে জনসাধারণ পেটের পীড়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিষ প্রয়োগকৃত পানি পান করে বাঘ, হরিণসহ বনের নানা প্রাণীও বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বন বিভাগ মাঝে মধ্যে এসব মৎস্য দস্যুদের আটক করলেও বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগে গত অর্ধ যুগ ধরে চলছে সর্বনাশা এই মাছ শিকার। এর সাথে একশ্রেণীর মাঠপর্যায়ের অসাধু বন কর্মচারী ও বনদস্যু বাহিনীগুলো সাপ্তাহিক চুক্তিভিত্তিক উৎকোচ গ্রহণ করে এই কর্মকা-ের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। প্রতি বছর পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগ থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ বিষ দিয়ে মারা হয়। বন বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান খুলনাঞ্চলের বন রক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ পশ্চিম বন বিভাগের ডিএফও থাকাকালীন ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর কয়েকবার গাছ পাচার বন্ধের পাশাপাশি বিষ দিয়ে মাছ শিকার রোধের বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দেন। শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান। একটি চৌকস বনপ্রহরী দল অভিযান চালিয়ে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা সিন্ডিকেটের আন্তঃজেলা দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড কয়রার মহেশ্বরীপুরের বাসিন্দা দস্যু মোতালেব বাহিনীর সদস্য কালাম মোল্লাকে বিষ ও বিষাক্ত মাছসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে অভিযান অব্যাহত থাকে। কিন্তু গত ৬ মাসে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই বর্তমান ডিএফওর। যে কারণে আবারও বিষ প্রয়োগে মৎস্য শিকারে মেতে উঠেছে সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে উপকূলীয় অঞ্চলের  লোকজন জানায়, একটি চক্র প্রতি বছর বেশ কয়েকটি গ্রুপ গঠন করে তাদের লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরায়। এই সিন্ডিকেটটি কয়েক বছর যাবৎ কতিপয় অসাধু বন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্য এবং স্থানীয় কতিপয় হলুদ সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে এই ব্যবসা করে আসছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির মহাসচিব আজগর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান ডিএফওর কর্মকা- সন্তোষজনক নয়। আমরা তাকিয়ে আছি সিএফ-এর দিকে। কারণ সুন্দরবন আমাদের। যে কারণে অভিযান জোরদার করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুন্দরবন

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ