Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে : ফারদিনের বাবা

তদন্তের কিছু বিষয় গ্যাপ রয়েছে- ডিবির সঙ্গে বুয়েটের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেরা অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে চলতে পারা ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর এখন আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ অভিযোগ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী নিহত ফারদিন ন‚রের বাবা কাজী ন‚র উদ্দিন।

র‌্যাব পুলিশের তদন্তে অসন্তুষ্টি জানিয়ে কাজী ন‚র উদ্দিন বলেন, ঘটনার দিন বুয়েটের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে ফারদিন চুল কাটিয়েছিল এবং শেভ করেছিল। আত্মহত্যার আগে কি কেউ চুল কাটায়, শেভ করে? আমি ফারদিনের লাশ দেখেছি, তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরিকল্পিত এই হত্যাকান্ডটি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্যই শুরু থেকে নানা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। বিভ্রান্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিক ভাইদের আমি অনুরোধ করে বলছি, আপনারা আমার সঙ্গে সুলতানা কামাল ব্রিজে চলেন। আমি ব্রিজ থেকে লাফ দেব। সেখান থেকে পড়লে কতটা আঘাত লাগে, আপনারা দেখবেন।
বুয়েট প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ফারদিনের বাবা বলেন, বুয়েটের ভিসি এবং প্রশাসন কি জানত, ফারদিন আত্মহত্যা করেছে,যে কারণে তারা আমার পরিবারকে সান্ত¡না পর্যন্ত দেয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে দেখাও করেননি। আমার ছেলে বুয়েটে ভর্তি না হলে এমন পরিণতি হতো না। ডিবির এই তদন্ত নিয়ে নারাজি দেবেন কি না, জানতে চাইলে কাজী ন‚র উদ্দিন বলেন, এরপরও কি আর না–রাজি দিতে হবে?

অপরদিকে দীর্ঘ ৩৮ দিনের তদন্ত শেষে তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, পারিপার্শ্বিক বিষয় দেখে মনে হয়েছে ফারদিন আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সবকিছু মিলিয়েই আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি। ফারদিন হত্যাকান্ডের শিকার হননি, হতাশা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন,ফারদিন সেদিন রাতে বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যান। অথচ গত দুই বছরেও তিনি এসব এলাকায় যাননি। ফারদিন দুই বছরে ফোনে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছেন। আমরা সবার কাছে খোঁজ-খবর নিয়েছি। ফারদিন বিভিন্ন ধরনের বই পড়তেন। তিনি বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় হতাশার কথা বলেছেন। এক বান্ধবীকে লিখেছেন, ‘৩০ বছরের বেশি কারও বাঁচার দরকার নাই’। আবার কাউকে লিখেছেন,‘যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ কষ্ট পাবে’। আরেকজনকে লিখেছেন,‘কোনো একদিন শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমি আত্মহত্যা করেছি’। ফারদিন শুক্রবারই আত্মহত্যা করেছেন। ডিবি প্রধান বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে তার কথা পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে ফারদিন হতাশায় ভুগছিলেন। তাছাড়া ফারদিনের লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ধস্তাধস্তির আলামত নেই। তার মোবাইল-টাকা পকেটে ছিল, হাতে ঘড়ি ছিল। কোনোকিছু খোয়া যায়নি। আত্মকেন্দ্রিক ফারদিন লিখেছেন, ৯৫ শতাংশ মানুষের জীবন পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ। হয়তো পরিবার তাকে বাসায় থাকতে বলতো, কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন না। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাই এখানে মার্ডারের কোনো লক্ষণ নেই। কারাগারে বন্দি ফারদিনের বান্ধবী বুশরার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আদালতের বিষয়। আমরা আমাদের রিপোর্টে জানিয়ে দেবো তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি।

এদিকে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন বলে ডিবি যে বক্তব্য দিয়েছে, তার ‘প্রমাণ’ দেখতে গতকাল মিন্টো রোডে সংস্থাটির কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থীর একটি প্রতিনিধি দল। তারা ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে দুই ঘণ্টা আলোচনা শেষে বলেছেন, ডিবির তদন্তে কিছু কিছু জায়গায় কিছু গ্যাপ আছে, কিছু অস্পষ্টতা আছে। এগুলো আরও পরিষ্কার হওয়ার দরকার আছে। তবে ডিবির কর্মতৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার ফারদিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শেষে ডিবি জানায়, বুয়েটের ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। এর প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বুয়েট শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছিলেন বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী। তবে ডিবি কর্মকর্তাদের আহবানে ‘আত্মহত্যার প্রমাণ’ দেখতে ওই কর্মস‚চি স্থগিত করেন তারা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে যায় বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল। ডিবির শীর্ষ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলে বেলা প্রায় দুইটা পর্যন্ত।

আলোচনা শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে বুয়েট ছাত্র তাহমিদ হোসেন বলেন, ডিবির তদন্তের যে আলামতগুলো ছিল, তারা সেগুলো আমাদের দেখিয়েছে। আলামতগুলো আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। এগুলোর পেছনে তারা বেশ “এফোর্ট” দিয়েছে বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু কিছু গ্যাপ আছে, কিছু অস্পট আছে। একটা গ্যাপ হলো, ফারদিনকে ব্রিজের যে পারে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে যে মাঝখানে ব্যাক করেছে, ওই জায়গায় তার সঙ্গে কে ছিল বা সে একদম একা ছিল কি না সেটি পরিষ্কার নয়। লেগুনাচালক নাকি বলেছেন, দুজনকে নামানো হয়েছিল। তার সঙ্গে আরেকজন নেমেছিলেন। কে নেমেছিলেন, সেটা পরিষ্কার নয়। এর বাইরে অন্য জিনিসগুলোর কংক্রিট অ্যাভিডেন্স তারা টু অ্যান এক্সটেন্ট দেখিয়েছেন। তারা আমাদের কিন্তু ওই রকম কংক্রিট, সলিড কোনো তথ্য, অতটা তারা দেখাননি। আত্মহত্যার মোটিভটা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় কি না, এ জায়গায় ভবিষ্যতে কাজ করা যেতে পারে। ডিবি বলেছে, তারা এটি নিয়ে কাজ করবে।

বুয়েটের আরেক ছাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ডিবি বলেছে, শতভাগ তো কোনো ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে গ্যাপ আছে। তারা এটা নিয়ে কাজ করছেন। আমরা আমাদের পয়েন্টগুলো বলেছি।
উল্লেখ্য, বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে গত ৪ নভেম্বর ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। ওই দিনই তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন ৫ নভেম্বর রামপুরা থানায় জিডি করেন তার বাবা কাজী ন‚র উদ্দিন। নিখোঁজের তিন দিন পর ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এ ঘটনায় ফারদিনের বাবা মামলা করেন। মামলায় ছেলের এক মেয়ে বন্ধুকে আসামি করেন। ওই মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফারদিন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ