পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ইনকিলাব ডেস্ক ঃ আগামী সপ্তাহ থেকেই পরিবর্তন দেখতে পাবে লোকসানে থাকা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্রখাতের কোম্পানি জুট স্পিনার্স লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কারখানায় পুরো দমে কাজ শুরুর কথা জানান জুট স্পিনারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ শামস্- উজ জোহা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এক কোটি টাকার এসএমই লোন এবং জনতা ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরে সক্ষম হয়েছি। যা দিয়ে নতুন মেশিন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এগুলো চালু হলে ঘুরে দাঁড়াবে জুট স্পিনার্স। বিনিয়োগকারীর প্রশ্নের জবাবে বলেন, রফতানি মূল্য হ্রাস এবং পাট সূতা রফতানিতে ভর্তুকির পরিমান ২০ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশ হওয়ায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শুধু আমরা (জুট স্পিনার) নয় এদেশের সকল পাট শিল্পই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মনিপুরি পাড়ায় জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) জুট স্পিনার্স লিমিটেডের ৩৬তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুট স্পিনার্সের লোকসান নিয়ে বিনিয়োগকারীদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন এমডি এবং চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগগুলো একেক করে খন্ডন করেন এমডি মোহম্মদ শামস্-উজ জোহা। ।
বিনিয়োগকারী এম আজিজুর রহমান রাজিব শনিবারে একটি জাতীয় পত্রিকায় জুট স্পিনার্সের ভবিষৎ ঝুঁকিপূর্ণ এই শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিউজ উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পড়ে শোনান এবং উপস্থিত বিনিয়োগকারীদের শুনতে অনুরোধ করেন। পরে এমডি নিজেই নিউজটি পড়ে শুনান। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় নিরীক্ষকের বক্তব্য সত্য কিনা তখন এমডি বলেন, পত্রিকায় যা এসেছে তা সত্য। ওই বিনিয়োগকারী আরো বলেন, প্রয়োজনে নতুন শেয়ার ইস্যু করে বা ব্যাংক ঋণ নিয়ে অথবা কোম্পানির জমি বিক্রি করে হলেও কারখানার মূলধন বাড়ান। পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে কিভাবে কোম্পানিকে ভাল করা যায় তার জন্য কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য জানতে চান ওই বিনিয়োগকারী।
অন্য বিনিয়োগকারী লুৎফর রহমান বাদল বলেন, জুট স্পিনার্সের লোকসান ৭ কোটি টাকা আর কোম্পানির বেতন ভাতা বাবদ ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি টাকা। এটা কি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে? ভবিষতে এ কোম্পানি নিয়ে কি আশা করা যায়? এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্দ্যেশ্য করে বাদল আরো বলেন, আপনারা আর্থিক প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন মজুদ পন্যের পরিমাণ হচ্ছে ২৪ কোটি টাকার বেশি, এই পণ্য কি আদৌ আছে নাকি মিথ্যা তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন?
বিনিয়োগকারীদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস্ উজ জোহা বলেন, রফতানি মূল্য হ্রাস এবং পাট সূতা রফতানিতে ভর্তুকির পরিমান ২০ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশ হওয়ায় মরার উপর খারার ঘাঁ হয়েছে। তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে শুধু আমরা (জুট স্পিনার) নয় এদেশের সকল পাট শিল্পই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, জুট স্পিনার্সের শেয়ার দর যখন ৪৮ টাকা ছিল এবং কোম্পানিও লোকসানে ছিল তখন তো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কথা উঠেনি। আজ যখন আমরা লোকসান কাটিয়ে ভাল করার জন্য চেষ্টা করছি তখন এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সঙ্কটে কারখানা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা বিদেশ থেকে বড় অংকের টাকার মেশিনারি আনার চেষ্টা করছি। এজন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এক কোটি টাকা ঋণ পাবো। কারণ এ শিল্পকে এসএমই থাতের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর হয়ে গেছে। এছাড়া আমরা জুট ডাইভারফিকেশনের সাথে যুক্ত হয়েছি। পাটের বিভিন্ন ধরণের পণ্য উৎপাদন করা হবে। কোম্পানির অবস্থারও উন্নতি হবে এবং ভবিষ্যতে শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ভাল কিছু দেয়ার আশা করছি।
মোহাম্মদ শামস্ উজ জোহা বলেন, লোকসান নিয়ে আমরা চিন্তিত থাকলেও একেবারে আতঙ্কিত নই। সঙ্কটময় মুহূর্তে শ্রমিক থেকে শুরু করে শেয়ার হোল্ডারসহ সবাই আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন। কোম্পানির ভাল করার জন্য আমরা আমাদের সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে সকল পরিচালকম-লী এবং শেয়ার হোল্ডার ও অন্যন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্-উজ-জোহা নতুন পরিচালক নিয়োগসহ ছয়টি এজেন্ডা উপস্থাপন করেন। সকলের সম্মতিক্রমে এজেন্ডাগুলো পাশ করানো হয়। অনুষ্ঠানে কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামস্ উল হুদা, পরিচালক মোহম্মদ শামস্ উল কবির, পরিচালক মিসেস শাহিদা হোসাইন, পরিচালক রুমানা নাজনীন এবং স্বতন্ত্র পরিচালক হারুনুর রশিদ এবং কোম্পানি সচিব এটিএম মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, লোকসানের কারণে ২০১৬ হিসাব বছরে কোনো লভ্যাংশ সুপারিশ করেনি জুট স্পিনার্সের পরিচালনা পর্ষদ। গেল হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪২ টাকা ১০ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১৯ টাকা ৬৯ পয়সা। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ১৭ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে জুট স্পিনার্স। যেখানে আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৯ টাকা ৭০ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় ১৫৭ টাকা ৬১ পয়সা। ১৯৮৪ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৩ কোটি ৫০ লাখ ও পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুসারে এর পুঞ্জীভূত দায় ১৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৭ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ২৩ দশমিক ১১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে বাকি ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ শেয়ার। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার সর্বশেষ ৫৪ টাকায় জুট স্পিনার্সের শেয়ার হাতবদল হয়। -ওয়েবসাইট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।