পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিয়োগে প্রতারক চক্রের ৩ বিদেশীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার দুপুরে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার উপপরিচালক রুম্মন মাহমুদ এ তথ্য জানান। অন্যদিকে তিনটি বেসরকারী ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়ার সাথে জড়িত ৪/৫ জন বিদেশী নাগরিককে শনাক্ত করেছে ডিবি পুলিশ।
তিনি জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে তিনজন বিদেশীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিদেশীরা প্রত্যেকেই নাইজেরিয়ার নাগরিক।
র্যাব-২ এর আগারগাঁও কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানান, ফেসবুককের মাধ্যমে বিভিন্ন করা কলা কৌশলে এরা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়।
র্যাবের আইন ও গণ মাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহামুদ জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের ৫ সদস্যকে গত মঙ্গলবার রাতে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার কথা স্বীকার করে। সম্প্রতি এ ধরনের অসাধু চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু বিদেশী নাগরিক যারা আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধারার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব কর্মকা-ের ক্ষেত্রে তারা মূলতঃ সচ্ছল ব্যক্তিদেরকে টার্গেট করে অর্থাৎ যারা নিজেরাই টাকা প্রদান করতে সক্ষম। তেমনি এক ঘটনায় অপরাধীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে তোলে।
তিনি জানান, ফেসবুক এর মাধ্যমে এক ব্রিটিশ ভদ্রলোকের সাথে ওই চিকিৎসকের বন্ধুত্ব হয়। তার সাথে সম্পূর্ণ ব্রিটিশ ভাষায় তার কথাও হয়। বন্ধুত্বের সূত্রে তাকে ইংল্যান্ড হতে কিছু উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছেন বলে জানায়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে গরহ-জড় ঞৎধফব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ নামের কুরিয়ার সার্ভিস-এর একজন প্রতিনিধি মোবাইল নম্বর ০১৭৪৭২৬৪১০১-হতে স¤পূর্ণ ব্রিটিশ ভাষায় উক্ত চিকিৎসকে জানানো হয় যে, তার নামে একটি গিফট বক্স এসেছে। এতে পরিবহন ব্যয় বাবদ ৫৬,৫৬৬/-(ছাপান্ন হাজার পাঁচশত ছেষট্টি) টাকা পরিশোধ করতে হবে। সেই মোতাবেক উক্ত চিকিৎসক গত ১১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা হতে গরহ-জড় ঞৎধফব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ এর হিসাব নং-০০১০১৭৮০৯, সোনালী ব্যাংক, উত্তরা শাখা, ঢাকা বরাবর ছাপান্ন হাজার পাঁচশত ছেষট্টি টাকা জমা করেন। পরবর্তীতে ১৩ ফেব্রুয়ারি গরহ-জড় ঞৎধফব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ এর একই প্রতিনিধি একই মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে বলে, প্রেরণকৃত গিফট বক্সের এক্সরে স্ক্যান রিপোর্ট এর তথ্যে দেখা যায় যে, উক্ত বক্সে এ ডায়মন্ড (হিরক) এর অতি মূল্যবান গহনা আছে যার মূল্য ২ কোটি টাকা। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে জানানো হয়, উক্ত গিফট সংগ্রহ করতে হলে তাকে দুই লক্ষ বাষট্টি হাজার নয়শত টাকা আরেকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে প্রেরণ করতে হবে। সেই মোতাবেক তিনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঝগঝ এর মাধ্যমে প্রেরণকৃত মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড এর গরহ-জড় ঞৎধফব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ এর হিসাব নং-০৬৪১০২১০০০০৯৮৬ বরাবর আবার ২,৬২,৯০০/-(দুই লক্ষ বাষট্টি হাজার নয়শত) টাকা জমা করেন। ঐ দিনেই অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখ বিকালে তৃতীয়বার তাকে ফোনের মাধ্যম তাকে জানানো হয় যে, বক্স এর ভিতরে অনেক মূল্যবান দ্রব্যাদি থাকায় তাকে আরও ১০,৮৩,০০০/-(দশ লক্ষ তিরাশি হাজার) টাকা প্রেরণ করতে হবে। তখন তিনি উক্ত গিফট বক্সের যথাযথ অবস্থান জানতে চাইলে জবাবে পরবর্তীতে জানানো হবে বলে বলা হয়। এ অবস্থায় টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় এবং গিফট বক্সের সঠিক ঠিকানা না জানানোর কারণে বিষয়টি চিকিৎসকের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হয়। পরবর্র্তীতে তিনি এ বিষয়ে র্যাব এর শরণাপন্ন হলে র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রথমে ব্যাংক হিসাবের ২ জন মালিক মোহাম্মদ আলী (৩০) এবং মঞ্জুর মাহমুদ (৩১) ব্যাংকের জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে গেলে তাদেরকে আটক করে। আটককৃত তিন নাইজেরিয়ান ব্যক্তি হাউজ নং-০৮, রোড নং-০১, ব্লক-বি, নিকেতন, ঢাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলেন। উল্লেখ্য যে, আটককৃত তিনজন নাইজেরিয়ান নাগরিকের নিকট বৈধ কোন কাগজ-পত্র নেই।
পরবর্তীতে তাদেরকে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের দেওয়া আংশিক তথ্যেও উপর ভিত্তি করে র্যাবের একটি বিশেষ আভিযানিক দল বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ এবং ইমো এর আইডি সমূহ বিশ্লেষণ করে উক্ত আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সক্রিয় আরও ৩ জন নাইজেরিয়ান সদস্য ওুঁপযবি ঋৎধহশরহ (৩০), ঙনর ঐবপযবু (৩৪), ওশ ঋষবধংশ (৩৫) আটক করা হয়।। তাদের কাছ থেকে তেপান্ন হাজার এগার টাকা, পাসপোর্ট, বিভিন্ন ব্যাংকের ব্লাংক চেক, ক্রেডিট কার্ড এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। উক্ত দ্রব্যাদি তারা বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজে ব্যবহার করে ।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উক্ত নাইজেরিয়ান নাগরিকরা গত ১৩ আগস্ট ২০১৩ হতে বাংলাদেশের মোহাম্মদ আলী ও মঞ্জুর মাহমুদ এর সাথে যৌথভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। উক্ত গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা মোহাম্মদ আলী ৫% এবং মঞ্জুর আহমেদ ৫% করে কমিশন পেতেন। প্রতারণার প্রথম পর্যায়ে তারা বাংলাদেশীদের মাধ্যমে টার্গেট খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে টার্গেট প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে তাদের ফেসবুক আইডি বের করে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে। এসব ক্ষেত্রে তারা খুবই সুদর্শন এবং আমেরিকা অথবা ইউরোপের নাগরিক পরিচয় দেয়। তাদের এ প্রতারণার ক্ষেত্রে কিছু মহিলা সদস্যও রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বন্ধুত্ব গাঢ় হওয়ার পরে তারা প্রেমের অভিনয় এবং বিভিন্ন উপহার প্রেরণের মাধ্যমে সম্পর্কটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।
এদিকে তিনটি বেসরকারী ব্যাংকে এটিএম বুথে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়ার সাথে জড়িত ৪/৫ জন বিদেশী নাগরিককে সনাক্ত করেছে ডিবি। তাদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ব্যপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরল ইসলাম জানিয়েছেন, এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনায় ৪ থেকে ৫ জন বিদেশী নাগরিক পুলিশি নজরজারিতে রয়েছেন। তিনি গতকাল বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই ৪/৫ নাগরিক পূর্ব ইউরোপের কোনো দেশের নাগরিক। তাদের মধ্যে একজন ওই ঘটনায় জড়িত রয়েছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। সে অনুযায়ী তদন্তে এগোচ্ছি আমরা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটিএম বুথের সিসি ফুটেজে আমরা দেখেছি, ৪-৫ জন লোক একই মুখাবয়বের; তবে এরমধ্যে একজনের চেহারা স্পষ্ট। আমরা তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়ার পর জড়িত ব্যক্তিকেই গ্রেফতার করবো।
ডিএমপির ডিআইজি মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে ডিবি ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট যৌথভাবে কাজ করছে। ফুটেজসহ অন্যান্য আলামত তাদের হাতে আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতির মতো অপরাধ তদন্তের অভিজ্ঞতা ডিবির রয়েছে বলে জানান মনিরুল ইসলাম। বেসরকারি ইস্টার্ন, সিটি ও ইউসিবি ব্যাংকের এটিএমে সম্প্রতি কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এটিএম বুথে অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি শেওরাপাড়ায় ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় প্রত্যেক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।