পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : অবশেষে ট্রেন চলাচলের সময় নিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি থেকে যাত্রীদের খানিকটা মুক্তি দিচ্ছে রেলওয়ে। ট্রেনের গতিবেগ বাড়ছে। গন্তব্যের সময় কমছে। আপাতত এ সুসংবাদ শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সূবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রীদের জন্য। পর্যায়ক্রমে পূর্বাঞ্চলের (ঢাকা-চট্টগ্রাম) ১১টি ট্রেনের গন্তব্যে যাতায়াতের সময়ও কমবে। পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রুট ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো চলবে আগের মতোই। রেলসূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর ৮৫ শতাংশ আন্তঃনগর ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় ১০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়। ‘যথাসময়ে ট্রেনগুলো গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে’-এমনটা দেখাতেই এই শুভঙ্করের ফাঁকির ব্যবস্থা করা হয় বলে অনেকে মনে করেন। এমন কি আধা ঘন্টা দেরিতে চলাচলকারী ট্রেনকেও ‘সময় মেনে চলছে’ বলে রেলওয়ের নথিতে উল্লেখ করার নজিরও আছে। নতুন সময়সূচী অনুযায়ী ট্রেনভেদে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় কমবে। এর মধ্যে সবচে’ বেশি সময় কমবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী বিরতিহীন সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের। এখন থেকে ৫০ মিনিট আগেই চট্টগ্রাম পৌঁছাবে ট্রেনটি। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে নতুন এ সময়সূচী কার্যকর হবে। রেল সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিল খোদ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। বিশেষ করে আন্তঃনগর ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, পরিচালক (গার্ড), এটেনডেন্টসহ ট্রেনে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করতেন ইচ্ছা করেই আন্তঃনগর ট্রেনগুলোকে ধীরলয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। এই রুটের চালক (লোকোমাস্টার) ও সহকারী চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এতোদিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের সময় লাগতো ৬ ঘন্টা ১০ মিনিট। একইভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগতো ৬ ঘন্টা ২০মিনিট। এটা ছিল রেলওয়ের নির্ধারিত সময়। সূবর্ণ এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতিবেগ কাগজে কলমে ঘন্টায় ৭২ কিলোমিটার নির্ধারণ করা থাকলেও ওই গতিবেগে চলতে গিয়ে চালকরা পড়তেন বিপাকে। দেখা যেতো ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগেই ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। সেক্ষেত্রে ‘বিফোর টাইম’ হওয়ায় চালককে জবাবদিহি করতে হতো। অনাকাক্সিক্ষত এই জবাবদিহি এড়াতে চালকরা ঘন্টায় ৫৫ কিলোমিটারে বেশি গতিবেগে ট্রেন চালাতেন না। একজন চালক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আগে তিনটি স্থানে ডাবল লাইন ছিল। তখনই বিফোর টাইমের আতঙ্ক ছিল। এখন ৩২০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ৭২ কিলোমিটার বাদে পুরো দূরত্বে ডাবল লাইন হয়েছে। এখন ৭২ কিলোমিটার গতিবেগে চলা কোনো ব্যাপারই না। বিষয়টা আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। সময় কমলে যাত্রী বাড়বে, রাজস্ব বাড়বে। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুরোধ রেখেছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী রেলভবনের এসিওপিএস (পি, পূর্ব) মো: ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের নতুন সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন সময়সূচী অনুযায়ী ট্রেনটি ঢাকা থেকে বেলা তিনটায় ছেড়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে রাত সাড়ে ৮টায়। আবার চট্টগ্রাম থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে। আগে ছাড়ার সময় একই থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় ছিল যতাক্রমে রাত ৯টা ২০ মিনিট এবং বেলা ১টা ১০ মিনিট। আগে সময় লাগতো চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে ৬ ঘন্টা ১০ মিনিট এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ৬ ঘন্টা ২০মিনিট। এখন লাগবে যথাক্রমে ৫ ঘন্টা ৪০ মিনিট এবং ৫ ঘন্টা ৩০ মিনিট। তবে একাধিক ট্রেন চালক মনে করেন, এই সময় ৫ ঘন্টার মধ্যে কমিয়ে আনা আনা সম্ভব। ঘন্টায় ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিবেগেই ৫ ঘন্টায় গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন রেল কর্মচারী জানান, সড়ক পথের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে একটি স্বার্থান্বেষীমহল ইচ্ছা করেই ট্রেনের সময়কে কমাতে চাচ্ছে না। কারন হিসেবে তারা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বাস মালিকরা সবাই প্রভাবশালী ও ধনী। তারাই এটাকে হতে দিচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর রেলওয়ের উন্নয়নে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এর বেশির ভাগই রেললাইন সংস্কার, নতুন রেলপথ নির্মাণ ও অবকাঠামো তৈরীর কাজে ব্যয় করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সারাদেশে চলাচলকারী ৮৫ শতাংশ আন্ত:নগর ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় ১০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়। রেলওয়ের এই শুভঙ্করের ফাঁকির পরেও ২০ শতাংশ ট্রেন বরাবরই অস্বাভাবিক দেরি করে চলাচল করে। আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তো কথাই নেই। গত সপ্তাহে পশ্চিমাঞ্চলে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। এতে করে পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সবগুলো ট্রেন এমনকি ঢাকামুখী ট্রেনগুলোও অস্বাভাবিক দেরিতে চলাচল করেছে। এই দেরির সময়সীমা ছিল ৬ থেকে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত। এজন্য প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ট্রেনের যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। জানা গেছে, ২০১২ সালে ট্রেনের ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আন্তঃনগর ট্রেনের ক্ষেত্রে এই ভাড়া বুদ্ধির হার ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। তারপরেও গত বছর রেলওয়ের লোকসান হয়েছে ৬৩৩ কোটি টাকা। ভুক্তভোগীদের মতে, ভাড়া বাড়ানোর পরেও যাত্রীসেবার মান এতোটুকু বাড়েনি। বরং দিন দিন কমছে। এটাকে কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বলেন, রেল চলছে পেছন দিকে। জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ের বিভাগীয় একজন প্রকৌশলী বলেন, রেল পেছনের দিকে চলছে একথা ঠিক নয়। আমরা চেষ্টা করছি রেলওয়ের মানোন্নয়নসহ যাত্রীদের সেবার মান বাড়ানো। চলতি বছরের মধ্যে এই সেবার মান অনেকাংশে বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।