পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আফজাল বারী : ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে আজ প্রেসিডেন্টের সাথে সংলাপে বসছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ সংলাপের ইস্যু নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের হলেও প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি বক্তব্য রাখবেন খালেদা জিয়া। তাতে দেশের অভিভাবক হিসেবে প্রেসিডেন্টকে বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানানো হবে। বিশেষ করে ইসি পুনর্গঠনের মতো জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোা সাথে আরেকটি সংলাপের অনুরোধ জানাতে পারেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপি সূত্র মতে, ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নাম পাঠানো হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে দু’একজন নাও যেতে পারেন। বিকাল তিনটায় গুলশানের বাসা থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন খালেদা জিয়া। এদিকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছে দলটি। আলোচনার খসড়া নিয়ে কয়েকদিনে সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ শনিবার রাতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেখানে সংলাপের ব্যাপারে তাদের মতামত নেয়া হয়। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার দেয়া ১৩ দফা সুপারিশের ভিত্তিতেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপ করবে দলটি।
বিএনপির পর আগামী ২০ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও সাড়ে ৪টায় কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ এবং ২২ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে আলোচনায় বসবেন প্রেসিডেন্ট।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে যেভাবে ইসি গঠন করা হয়েছিল, এবারও একই পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
এদিকে গ্রহণযোগ্য এবং আস্থাভাজন এবং দক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে ইসি পুনর্গঠনে সার্চ কমিটি, প্রধান নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব করবে বিএনপি। প্রেসিডেন্ট চাইলে দলের পক্ষ থেকে সার্চ কমিটি ও ইসির জন্য সম্ভাব্য নামের তালিকাও দেয়া হতে পারে। এই ব্যাপারে তাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। সংলাপের সার্বিক বিষয় নিয়ে শনিবার রাতে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেন খালেদা জিয়া। এর আগে কয়েক নেতাকে সম্ভাব্য নামের তালিকা সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা দফায় দফায় বৈঠক করে নামের তালিকা তৈরি করেন। বৈঠকে সার্চ কমিটি ও ইসির জন্য একটি নামের তালিকা খালেদা জিয়ার কাছে তুলে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সেই সুযোগকে কাজে লাগাবেন বলে আমরা আশা করি। প্রেসিডেন্ট অভিভাবক হিসেবে দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে প্রেসিডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। দেশের মানুষও প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি বলেন, একটা স্বাধীন কমিশন গঠনে আমাদের নেত্রী একটা রূপরেখা দিয়েছেন। সেই রূপরেখার আলোকে একটি প্রস্তাবনা প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরা হবে। তাঁর সাথে সংলাপের ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতিই রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপকালে খালেদা জিয়া লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। ইতিমধ্যে তার বক্তব্যের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে দেশের সার্বিক চিত্র তুলে ধরবেন। বিশেষ করে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কারণসহ দেশের চলমান গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতি তুলে ধরবেন তিনি। দেশের এই চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার সংলাপের আহ্বান জানানোর বিষয়টিও প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা হবে। এজন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানাতে পারেন খালেদা জিয়া। কেন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ইসি প্রয়োজন সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। এ লক্ষ্যে খালেদা জিয়া তার দেয়া প্রস্তাবের পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিবেন। বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত পৌর, উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বর্তমান ইসির ভূমিকার বিষয়টি প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরবেন। বর্তমান কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাচ্ছে। গণতন্ত্র সুসংহত করতে ইসির মতো প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া উচিত। যেহেতু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে নিয়োগের এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের। তাই সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে সেই দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাবেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি সূত্র মতে, চেয়ারপার্সনের বক্তব্যের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপের জন্য অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি স্বাধীন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্টকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাবেন তিনি। সংলাপে স্বাধীন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের একটি কপি প্রেসিডেন্টের হাতে হস্তান্তর করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, দলের চেয়ারপার্সনের রূপরেখা নিয়েই মূলত আলোচনা হবে। এরপর প্রেসিডেন্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে যদি সার্চ কমিটি ও ইসির জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য নামের তালিকা চান তাহলে তা দেয়া হবে।
১৮ নভেম্বর স্বাধীন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে একটি পস্তাব তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। এরপর প্রস্তাবলীর কপি পৌঁছে দিতে প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতের চেষ্টা করেও পায়নি। পরে একটি প্রতিনিধি দল প্রস্তাবের কপিটি বঙ্গভবনে পৌঁছে দেন। গত ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভবন থেকে চিঠি পাঠিয়ে সংলাপের জন্য বিএনপির কাছে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নাম চাওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নামের তালিকা বঙ্গভবনে পাঠানো হয়। খালেদা জিয়া ছাড়াও তালিকায় আছেন, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এরপর শনিবার ১০ জনের সঙ্গে আরও ৩ জনকে প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত করতে মহাসচিব স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সচিবকে পাঠানো হয়। এরা হচ্ছেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।
এদিকে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৩ করায় অন্য দল চাইলে তাদেরও বাড়ানো হতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের জানান, চেয়ারপার্সন রোববার (আজ) বিকাল ৩টায় গুলশানের বাসা থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনে যাবেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।