Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষ যেভাবে আন্দোলনে নেমেছে তাতে সরকারের পতন হবেই

ফরিদপুরে বিত্রনপির গনসমাবেশ নিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া

আনোয়ার জাহিদ/ আবুল হাসান সোহেল, ফরিদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৪৩ এএম, ১৪ নভেম্বর, ২০২২

ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ১৪ বছর পর ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত হলো বিত্রনপির গনসমাবেশ। এই সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছিল। এত মানুষ দেখে ফরিদপুরের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অনেকটাই হতবাক হয়ে গেছেন। সমাবেশের পর গতকাল সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে তাদের এমনই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।

তারা বলছেন, এত বাধা-বিঘ্ন পার হয়ে ফরিদপুরে বিত্রনপির এত বড় সমাবেশ হবে এটা কেউ স্বপনেও ভাবেনি। বিশেষ করে ফরিদপুরে ৩৮ ঘন্টা পরিবহন ধর্মঘট থাকার পরও জনতার ঢল দেখে তারা অবাক। বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি লঞ্চ ট্রলারও বন্ধ ছিলো তারপরও একজন কর্মীকেও কেউ আটকে রাখতে পারেননি কেউ। ফরিদপুরে বিত্রনপির সমাবেশে জনতার ঢল এটি এখন মানুষের মুখে।

ফরিদপুর সদর থানার মোহনের বাজারের অটো চালক মুন্নার সাথে কথা বললে তিনি ইনকিবকে জানান, ভাই আমি প্রতিদিন অটো চালিয়ে সারাদিনে ৪ থেকে ৫ শ’ টাকা আয় করি। কিন্ত্র এ টাকা দিয়ে আমার ৭ জনের পরিবার চালাতে পারছি না। চাল, ডাল, তেল, লবনসহ এমন কোন জিনিস নাই যার দাম বাড়েনি। এ আয়ে কোন ভাবেই সংসার চালাতে পারছি না। মাস শেষে ধার করতে হয়। মহল্লার দোকানেও অনেক বাকি থাকে। অথচ এ সরকার বলে ছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। এখন মোটা চালের কেজিও ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। বিএনপি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কথা বলছে। তারা দেশের কথা, গরীব মানুষের কথা বলছেন শুনে ভাল লাগছে। তাইতো ১২ তারিখ বিত্রনপির সমাবেশে গেছিলাম। সরকার এত বাধা দেওয়ার পরও সমাবেশে এত লোক এসেছে দেখে আমি হতবাক। এই এলাকাতো প্রধানমন্ত্রীর এলাক বল্ েসবাই জানে। তার এলাকাতেই এত মানুষে তার বিরুদ্ধে। এটা দেখে আমার মনে হচ্ছে এবার জনগণ চিড়া-মুড়ি খেয়ে যে ভাবে আন্দোলনে নেমেছে তাতে সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এখন থেকে আমিও বিত্রনপির সব মিটিংয়ে যাবো কেউ ঠেকাতে পারবে না।

ফরিদপুর গোলাডাঙ্গীর আলম বলেন, মানুষ এখন আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই ফরিদপুরে আতি নেতা –পাতি নেতা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। বেয়াই-ভাই তাদের দাপটে মানুষ অস্থির। তারাও লুটপাট করেছে। এসব সবাই জানে তাই ক্ষোভে মানুষ এখন রাজপথে নেমে এসছে। মানুষ আর কিছুতেই দাবিয়ে রাখা যাবে না। এ সরকারের পতন ছাড়া মানুষ আর ঘরে ফিরবে না।

কামারখালির নাহার বেগম ৮ বছরের সন্তান নিয়ে সমাবেশে এসেছিলেন, রাজবাড়ি উজান চরের স্কুল ছাত্রী শেফালি, ফরিদপুর মুন্সিবাজের বেদে পল্লীর ৩০/৪০ বেদে সমাবেশে এসেছিলেন, মুন্সিগঞ্জ মিরাকাদিম থেকে আগত রহমান মাঝি, শিবচরের সাপুরে আজমত, ভাঙ্গার কাঠ মিস্ত্রী নিমাই এবং রাজবাড়ি কালুখালী থেকে আগত প্রায় শতাধিক হিন্দু বাদক দল তাদের মুখেই একটাই কথাই ছিল। দেশে চলছে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটাপাট, আর খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, একজন বয়স্ক মানুষ তাকে অল্প কয়টা টাকার মামলায় মিথ্যাভাবে জেল দিয়েছে। এটা বড়ই দুঃখের বিষয়।

বিত্রনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ বলেন, ফরিদপুর প্রাধানমন্ত্রীর এলাকা। এখানে মানুষ শত বাধা পেরিয়ে সমাবেশে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামীলীগ কে প্রত্যাখ্যান করছেন। সমাবেশে উপস্থিত জনস্রোত এটাই প্রমান। তাদেরকে দেশবাসী আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। মানুষ এখন বাজারে গেলে পাগল হয়ে যায়। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্বগতিতে মানুষের মনে নাভিশ্বাস জমেছে। খেটে খাওয়া মানুষ অনেক কষ্টে আছে। চাল কিনলে তেল কিনতে পারে না, তেল কিনলে চাল কিনতে পারে না। বিত্রনপি দেশের কথা বলে, দেশের মানুষের কথা বলে, মানুষের অধিকার নিয়ে কথা, আওয়ামীলীগ কে দেশবাসী এখন বিশ্বাস করে না, তারই প্রমান ফরিদপুরের এই জনতার ঢল।

ইনকিলাবের সাথে কথা বলে সমাবেশে সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইসুফের কন্যা, ঢাকা উওর মহিলাদলের আহবায়ক নায়াব ইউসুফ আহম্মেদ। তিনি বলেন এই অবৈধ ভোট চোর সরকারকে দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রত্যাখ্যান করছেন। ফরিদপুরে যে আওয়ামীলীগের খ্যাতি নাই, এ এলাকার মানুষ যে আওয়ামী লীগকে ভালবাসে না তা সমাবেশে বিপুল জনতার উপস্থিতি প্রমান করছে। আমি মনে করি, দেশ মাতার মুক্তি বাংলার জনগন চায়। ফরিদপুরের লক্ষাধিক মানুষের ঢল প্রমান করছেন, দেশবাসী বেগম জিয়ার মুক্তি চায় এবং আগামীদিনের প্রাধানমন্ত্রী তারেক রহমানেরও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চায়।
কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ আর না। এই দাবিতেই সাধারন মানুষের ঢল নামে। কোমরপুরের সভাবেশ মঞ্চের আশ পাশের প্রত্যকেটা অলিতে গলিতে ধানক্ষেতের পাশে কাচা পাকা রাস্তায়ও হাজার হাজার মা, বোন, কিশোর যুবক যুবতিরা আওয়ামীলীগ কে বিদায় জানাতে এসেছিল। এই জনস্রোত সরকার আর ঠেকাতে পারবে না।

ফরিদপুর মহানগর যুদলের সভাপতি বেনজির আহম্মেদ তাবরিজ ইনকিলাবকে বলেন, অনির্বাচিত সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। তাই বিত্রনপির সকল সমাবেশে তারা নিজেদের ইচ্ছায় সরকারের সকল কর্মকান্ডের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে লাখ লাখ মানুষ বিত্রনপির গনসমাবেশ যোগ দিচ্ছে। এটা সারা দেশব্যাপি এখন সাধারন মানুষের প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদের গণজোয়ার আর কেউ ঠেকাতে পারবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিত্রনপি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ