Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাসের সন্ধান মিলেছে

সিলেটে ৪১ বছরের পরিত্যক্ত ক‚প খনন

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

পাবনা মোবারকপুর ও জামালপুরের মাদারগঞ্জে গ্যাস অনুসন্ধান চলছে
উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে থাকায় সরকার এতদিন গ্যাসকূপ খনন নিয়ে ভাবেনি। গ্যাসের তীব্র সঙ্কটের মুখে বাধ্য হয়ে খনন প্রক্রিয়া শুরুর পর দেশে গ্যাস প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৪১ বছরের পরিত্যক্ত একটি গ্যাস ক‚পের ওয়ার্কওভার (পুনঃখনন) শেষে নতুন করে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ক‚প থেকে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও ১০০ ব্যারেল কনডেনসেট সরবরাহ সম্ভবনা রয়েছে। তার নাম দেয়া হয়েছে বিজয়-১১ কূপ। এ পিএসআই (চাপ) অনেক। এছাড়া ভোলায় বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভোলার বোরহানউদ্দিনের টবগী-১ নামের একটি ক‚প খননের পর সেখানে পরীক্ষা করে নতুন করে আরো গ্যাসের সন্ধান চলছে। এতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খনিজ সম্পদ বিভাগ শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ক‚প খনন প্রকল্প-১ গ্রহণ করে। প্রকল্পটির দেড় বছর সময়কালের জন্য ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। গত বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়া ক‚প খনন কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। খনন শেষে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা হবে। আগামীতে পাবনা মোবারকপুর ও জামালপুরের মাদারগঞ্জে এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরু হচ্ছে বাপেক্স সূত্রে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাস প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার ৪১ বছরের পরিত্যক্ত গ্যাস ক‚পের ওয়ার্কওভার (পুনঃখনন) শেষে নতুন করে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ক‚প থেকে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও ১০০ ব্যারেল কনডেনসেট সরবরাহ সম্ভব রয়েছে। আমরা তার নাম দিয়েছি বিজয়-১১ কূপ। এ পিএসআই (চাপ) অনেক আগামী দুই মাসের মধ্যে গ্যাসের উত্তোলন শুরু করবে। এ গুলো ছাড়া পাবনা জেলার মোবারকপুর এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জের কাজ শুরু করবো। তারপরে নতুন করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে অনুসন্ধান কাজ শুরু করা হবে। আগামীতে দেশীয় গ্যাসের সমস্যা হবে না। আমরা সেই চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্যাসের প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ১০ টিসিএফ বা ১০ লাখ কোটি ঘনফুট গ্যাস। দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৬৬ কোটি ঘনফুট। বার্ষিক গ্যাসের চাহিদা ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি ঘনফুট বা (১ দশমিক ৩৩ টিসিএফ) গ্যাস। এমন প্রেক্ষাপটে দেশজ গ্যাসের সঙ্গে আমদানিকৃত এলএনজির মিশিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে গ্যাসের প্রমাণিত মজুত যত দিন বেশি সম্ভব ধরে রাখতে চায় সরকার।
সিলেট ব্যুরো/ বিয়ানীবাজার উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সিলেট বিয়ানীবাজারের গ্যাসক্ষেত্রের পরিত্যক্ত ১ নম্বর ক‚প খনন করে তেল, গ্যাস ও কনডেসনেসট পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। গতকাল সকালে এই ক‚পে গ্যাসের মজুদ থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় বাপেক্স। শীঘ্রই এ ক‚প থেকে শুরু হবে উত্তোলন, এমন তথ্য জানা গেছে। প্রতিদিন এই ক‚প থেকে ১০ মিলিয়ন ঘন ফুট গ্যাস পাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরআগে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিয়ানীবাজারের এই ক‚পে খনন শুরু করে বাপেক্স।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড সূত্র মতে, সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীন বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে দুটি ক‚প রয়েছে। এর মধ্যে ১ নম্বর ক‚প থেকে উৎপাদন শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ২০১৪ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফের ২০১৬ সালের শুরুতে উৎপাদন শুরু হয়ে আবার ওই বছরের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। এরপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা এই ক‚পে ১০ সেপ্টম্বর থেকে আবার শুরু হয় খনন কাজ। খনন কাজ শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল এ ক‚প থেকে প্রতিদিন ৭ মিলিয়ন বা ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস মিলতে পারে। তবে খনন শেষে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ক‚প থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শাহিনুর ইসলাম বলেন, শিঘ্রই এ ক‚প থেকে উৎপাদন শুরু করতে পারব। খনন শুরুর আগে ডিপিপিতে ধরা হয়েছিল এখানে প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মিলতে পারে। তবে এখন মনে হচ্ছে আরও বেশিই পাওয়া যাবে। তিনি জানান, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) অধীন বিয়ানীবাজারের ক‚প ছাড়াও গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা-৮ ও গোয়াইনঘাট-১০ নম্বর ক‚প খনন এবং রশিদপুরে ১টি পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষে এসজিএফএলের গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া দুটি প্রকল্পের আওতায় বিয়ানীবাজার ফিল্ড এবং বøক-১৩ ও ১৪-এর আওতায় ডুপিটিলা, বাতচিয়া, হারারগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও সিলেট সাউথে ত্রিমাত্রিস সিসমিক জরিপ কাজ সম্পন্নের পথে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে আরও ক‚প খননের কাজ চলছে জানিয়ে এই প্রকৗশলী বলেন, এতে ২০২৩ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। সব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ২০২৫ সালের মধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড থেকে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পাওয়ার আশা রয়েছে।
ভোলার বোরহানউদ্দিনের টবগী-১ নামের একটি ক‚প খননের পর সেখানে পরীক্ষা করে নতুন করে আরো গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স।
গত ২৭ বছর আগে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া গ্রামে প্রথমবারের মতো শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। এরপর সেখানে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ক‚প খনন করে বাপেক্স। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালের দিকে এ জেলায় আরো গ্যাসের সন্ধান রয়েছে কিনা সেটি যাচাই করতে ভূ-তাত্তি¡ক জরিপ পরিচালনা করে টবগী-১, ভোলা নর্থ-১ ও ইলিশা-১ নামে আরো তিনটি স্থানে গ্যাসের সন্ধান পায় বাপেক্স। বাপেক্স কর্তৃক রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে এ বছরের ১৯ আগস্ট টবগী-১ নামের একটি ক‚প খনন শুরু করে। গত ১২ অক্টোবর খনন কাজ শেষ হওয়ার পর মাটির সাড়ে ৩ হাজার গভীরে সম্ভাব্য গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন গ্যাস রয়েছে বলে ধারণা করছেন বাপেক্স কর্মকর্তারা।
বাপেক্স থেকে বলা হয়, শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের পাঁচটি ক‚পে বর্তমানে ১.৩ টিসিএফ ঘনফুট গ্যাসের মজুদ হচ্ছে। যা থেকে প্রতিদিন ৬৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। আগামীতে আরো ৪০ থেকে ৫০ বিলিয়ন গ্যাস উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। সেখানে ৪টি ক‚প খনন হয়েছে। বর্তমানে ১, ২ ও ৩ নম্বর ক‚প থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। সেই গ্যাস থেকে জেলার ২২৫, ২২০, ৯৫ ও ৩৪.৬ ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাপেক্সের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসানুল আমিন বলেন, ভোলাতে যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে তা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে। দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বাপেক্স কর্তৃক রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে আরো দু’টি ক‚প খনন শুরু হবে। নতুন ক‚পে (টবগি-১) গ্যাস মজুদের পরিমাণ আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এদিকে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। গ্যাসের পরিমাণ অনুসন্ধান করতে একটি ক‚প খনন করা হচ্ছে। নড়িয়ার চামটা ইউনিয়নের দিনারা গ্রামে ক‚প খননের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লেøারেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। অনুসন্ধান সফল হলে সেই স্থানে গ্যাস উৎপাদন ক্ষেত্র (প্ল্যান্ট) স্থাপন করা হবে।
বাপেক্সের মহাপরিচালক ও শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ক‚প খনন প্রকল্প-১-এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. তোফায়েল উদ্দিন সিকদার ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যেই এখানে ক‚প খনন করা হচ্ছে। ক‚প থেকে পাওয়া গ্যাসের ডিএসটি টেস্ট করা হবে। ওই টেস্ট ও অনুসন্ধান সফল হলে গ্যাসের মজুতের অবস্থা বোঝা যাবে। যদি সবকিছু অনুক‚লে থাকে, তাহলে গ্যাস উৎপাদন ক্ষেত্র (প্ল্যান্ট) স্থাপন করা হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাসকূপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ