পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিনে ছিনতাই-টানা পার্টির আনাগোনা থাকলেও রাতে রাজধানীর পার্কগুলো চলে যায় অপরাধীদের দখলে। মাদক কারবার ও অসামাজিক কার্যকলাপে মেতে ওঠে অপরাধীরা। রাতে কেউই পার্কে প্রবেশ করতে পারছেন না অপরাধীদের কারণে। এসব পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা অপরাধীদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর ফুসফুসখ্যাত রমনা পার্ক, ওসমানী উদ্যান ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
অনেকে পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে যান পার্কে। এমনকি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সচিবসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সকাল-বিকাল নিয়ম করে শরীর চর্চা করেন রমনা পার্কসহ অন্যান্য পার্কে। এমন স্বস্তির মাঝে প্রায়ই মিলছে অস্বস্তির খবর। দিন-দুপুরে নির্জন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত শরীর চর্চা করতে যান এমন বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর তিনটি পার্কই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রমনা পার্কের পেছনে প্রধান বিচারপতির বাসভবন, অন্য দিকে মন্ত্রী পাড়া। আরেক পাশে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। সব মিলিয়ে এটি স্পর্শকাতর একটি জায়গা। ওসমানী উদ্যানের একদিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্থান সচিবালয় এবং অন্যদিকে পুলিশ সদর দফতর। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তিনটি বড় পার্ক সন্ধ্যার পরে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের জন্য। আর এই অপরাধীরা সহায়তা পায় ওই সব পার্কে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মী ও কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে। আগে যেসব এলাকায় ভাসমান পতিতা ও হিজড়াদের উৎপাত ছিল সেসব স্থানে এখন সমকামীরাও আস্তানা গেড়েছে। আর অসামাজিক কার্যকলাপের পাশাপাশি তারা মাদকের ব্যবসা এবং সুযোগ বুঝে ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। গত দু’দিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাত ৮টার পর এরা কাউকেই তোয়াক্কা করে না। পার্কে হাঁটতে অথবা ঘুরতে আসা লোকজন বেকায়দায় পড়েন। কখনো কখনো তাদের প্রকাশ্যে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এ কে এম হাফিজ আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, পার্কগুলোর নিরাপত্তায় রয়েছে আনসার সদস্যরা। থানা পুলিশ পার্কগুলোর নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতা করে। পার্কের ভেতরে অসামাজিক কার্যকলাপ কিংবা মাদক বিক্রির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। পার্কে সাধারণ মানুষ বিনোদন ও শরীর চর্চার জন্য যান। এখানে কোন চক্র সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, ক্যানপার্টি, হকারদের থেকে উৎকোচের টাকার ভাগ গণপূর্তের সংশ্লিষ্টদের পকেটেও যায়। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রমনা পার্কে দায়িত্ব পালন করা গণপূর্তের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয় দেখে আনসার সদস্যরা। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানালে তাদের এখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
রমনা পার্ক : রমনা পার্কের একটু নির্জন এলাকায় দিন-দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মাদক ব্যবসার। নিরাপত্তাকর্মী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরা কর্তব্যরত থাকলেও এরকম ঘটনায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। রমনা পার্কে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের অনেকে বলছেন, এসব নিরাপত্তাকর্মী ও আনসার সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করেই এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, রমনা পার্কের বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার পেছনে পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন।
রমনা পার্ক চাইনিজে নিরাপত্তায় কর্মরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, সন্ধ্যা হলেই রমনা পার্কে অপরাধীদের উৎপাত বাড়তে থাকে। রাত ৮টার পরে কাউকে তোয়াক্কা না করে তারা অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। সপ্তাহের একটি দিন বৃহস্পতিবার বেশি আনাগোনা থাকে তাদের। ভাসমান পতিতা ও সমকামীদের পার্কে ঢুকতে অনুমতি দেয় আনসার সদস্যরা। জনপ্রতি ১০০ টাকা নেয় আনসার সদস্যরা। বিভিন্ন সময়ে এদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। দেখেও না দেখার ভান করছেন রমনা পার্কে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মী আনসার সদস্যরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আনসার কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, ৬৮ একর জমির মধ্যে পার্কের জন্য খুবই সামান্য। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য আনসারের সদস্য বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে এত বড় পার্কের নিরাপত্তার দেখভাল করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, টহল আনসারদের জন্য সাইকেলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাহলে তারা দ্রুত পুরো পার্কটি ঘুরে দেখতে পারবেন।
রমনা পার্কে কর্মরত গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রমনা পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত। রাতে তো উম্মুক্ত হতে পরে না? রমনা পার্কের পূর্ব দিকের পেছনের সড়কটি সব ভিভিআইপিদের যাতায়াতে ব্যবহৃত হয়। সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় এই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী ও পতিতাদের আনাগোনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে।
তারা আরও বলেন, রমনা পার্কের অনেক স্থানেই ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। তবে সেগুলো ঠিকমতো মনিটরিং করা হয় না। ফলে এই সিসি ক্যামেরাগুলো সেভাবে কাজে লাগছে না। এ পরিস্থিতিতে তারা সিসি ক্যামেরা মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের টহল আরও বাড়ানোর দাবি জানান।
অভিযোগে প্রকাশ, প্রতিদিনই কয়েকজন যুবক পুরো পার্কের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দিনভর ঘুরে বেড়ান। বিশেষ করে দুপুরের দিকে ব্যায়াম করতে আসা লোকজন কম থাকায় তখন এদের উৎপাত বেড়ে যায়। এই গ্রুপের লোকজন প্যান্টের সবগুলো পকেটে সফট ড্রিংকসের একাধিক বোতল, শার্টের পকেটে কম দামি চকলেট নিয়ে ঘুরতে থাকেন। হঠাৎ করে লোকজন কম এমন জায়গায় কোনো ছেলে মেয়ে বসে থাকলে গিয়ে বোতলটা খুলে তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়। পরে এই গ্রুপের সদস্যরা রমনার প্যাকেজ ৩০০ টাকা, ৩৯০ টাকা এমন দাম ধরে দর্শনার্থীদের কাছ জোর করে টাকা রেখে দেয়। টাকা না দিলে খারাপ আচরণ করে এই চক্রের সদস্যরা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সন্ধ্যার পরপরই ঘুরতে আসা লোকজনকে বের করে দেন আনসার সদস্যরা। তাদের সাথে থাকে শাহবাগ থানার পুলিশ। বন্ধ করে দেয়া হয় সব গেটের সামনের দোকানগুলো। পার্কের ভেতরে থাকে না কোনো হকারও। তবে কালিমন্দির গেট দিয়ে পার্কে ঢুকে সমকামীরা। তাছাড়া টিএসসি মোড়ের পাশের গেট অন্ধকার থাকায় সেখান থেকে সমকামীদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের একাধিক ছাত্র জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন সমকামীদের দখলে। যারা অসামাজিক কার্যকলাপ করে তারা ঠিকই টাকার বিনিময়ে ভেতরে ঢুকছে।
ওসমানী উদ্যান : রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্থান জিরো পয়েন্টে সংলগ্ন ওসমানী উদ্যান। উদ্যানটির দক্ষিণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় (নগরভবন) এবং উত্তরে বাংলাদেশ সচিবালয়। দক্ষিণে রয়েছে পুলিশ সদর দফতর। ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম এই উদ্যানটি এখন হকার, মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের অভয়ারণ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্যানের প্রবেশ পথেই বসানো হয়েছে কয়েকটি চা-পান সিগারেটের দোকান। এছাড়া লাইন ধরে বসে আছে বিভিন্ন হকার। আর একটু ভেতরে যেতেই দেখা মিললো মাদকসেবীদের। দলবেধে খোলা জায়গায় বসেই তারা মাদক সেবন করছে। এছাড়া উদ্যানের বেশির ভাগ জায়গা জুড়েই ভাসমান লোকজন শুয়ে আছে বা ঘুমাচ্ছে। আবার কেউ কেউ সিরিঞ্জ দিয়ে শরীরে নেশা জাতীয় ইনজেকশন গ্রহণ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হকারদের চা-পান ও সিগারেটের আড়ালে চলে মাদক বিক্রিও। আর হাতের কাছে বিনা পরিশ্রমে নানা ধরনের মাদকদ্রব্য পেয়ে যায় মাদকসেবীরা। ওসমানী উদ্যানে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্ক বা উদ্যানের এমন পরিবেশ হওয়া উচিত যেটা আকর্ষণ করবে। একদিন গেলে দ্বিতীয় দিন আবার যেতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু এখানকার পরিবেশ খুব খারাপ। মাদকসেবীরা পুরো উদ্যান দখল করে রেখেছে।
উদ্যানের ভেতরে দর্শনার্থী কম থাকায় ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না জানিয়ে চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, নোংরা পরিবেশের পাশাপাশি মাদকসেবী ছিনতাইকারী থাকার কারণে উদ্যানে বেশি লোকের সমাগম হয় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পার্কে একটি ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এরা দিনের বেলায় পার্কে আশ্রয় নেয় এবং পার্কের মাঠে বিছানা পেতে ঘুমায়। আর রাতে নেমে পড়ে ছিনতাইয়ে। এখানে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা সবই পাওয়া যায়। ভেতরে কিছু মহিলা প্রতিদিন এগুলো বিক্রি করে। একটি পোটলা গাঁজা ৫০ টাকা হলেই পাওয়া যায়। আর ইয়াবা ৫০০ টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।