Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কীভাবে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালচাল

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

৪১টিতে ভিসি, ৭৪টিতে প্রো-ভিসি, ৫২টিতে ট্রেজারার নেই : তিনটি পদই ফাঁকা ২৮টিতে : আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে


ফারুক হোসাইন : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধান করে থাকেন ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, একাডেমিক কমিটি, অর্থ কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে হয়ে ভিসিকে। তার মাধ্যমেই এসব কমিটির সদস্য মনোনীত, ডীন, বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু যাদের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে সেই শীর্ষ পদগুলোই থাকছে দীর্ঘ সময় ধরে ফাঁকা। একটি দুটি নয়, তিনটি পদই ফাঁকা রয়েছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও কম নয়। ভিসি ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ৪১টিতে, প্রো-ভিসি নেই ৭৪টির। আর ট্রেজারার ছাড়া চলছে ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাঁকা রয়েছে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার এই তিনটি পদই। কোন কোনটিতে আবার শুধু ভিসি, প্রো-ভিসি বা ট্রেজারারের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুসারে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে পূর্ণকালীন নিয়োগ দেয়া বাধ্যতামূলক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই করুণ চিত্র দেখে অবাক হয়েছেন শিক্ষাবিদরাও। তাদের প্রশ্ন, শীর্ষ পদগুলো ফাঁকা রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে কিভাবে চলে শিক্ষা কার্যক্রম? আর শিক্ষার্থীরাও কিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে? শিক্ষাদান নয়, মুনাফার উদ্দেশ্য নিয়ে চলা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনা ব্যয় কমানোর জন্যই শীর্ষ পদগুলো ফাঁকা রেখে পরিচালিত হচ্ছে বলে তারা মনে করেন। বড় অঙ্কের বেতনের খরচ বাঁচাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিকপক্ষ শীর্ষ পদগুলো খালি রেখে জোড়াতালি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান তলানিতে নামছে। উচ্চশিক্ষা দানের পরিবর্তে এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সনদ বিক্রির ব্যবসায় নেমেছে বলে অনেকের অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ৮৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমতি নেই ১টিতে, বোর্ড অব ট্রাস্টির দ্বন্দ্ব রয়েছে ১টিতে। শিক্ষা কার্যক্রমে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কেবল ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার এই তিন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভিসি ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ৪১টিতে, প্রো-ভিসি নেই ৭৪টির। আর ট্রেজারার ছাড়া চলছে ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাঁকা রয়েছে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার এই তিনটি পদই। যদিও গত মাসেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির মূল সনদ ভিসি এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত হতে হবে। আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট চার বছর মেয়াদে প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেবেন। কাজেই উক্ত পদে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়া আইনের পরিপন্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সূত্রমতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার না থাকা আরেকটি বড় সমস্যা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের অনাগ্রহেই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব পদে কাউকে নিয়োগ না দেয়ায় থাকছে না জবাবদিহিতা, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমও। ট্রেজারার না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠছে প্রতিনিয়তই।
ইউজিসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আগ্রহ কম। তবে অবশ্যই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসিডেন্টের মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিসির স্বাক্ষর ছাড়া দেয়া সনদ অবৈধ।
ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই : ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি, চিটাগং, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি, মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, পু-্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজী, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজী এ্যান্ড সায়েন্সেস, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজী ইউনিভার্সিটি (আরএসটিইউ), কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রনদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজী সৈয়দপুর, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি কাদিরাবাদ, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কুমিল্লা, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
ভিসি ও প্রো-ভিসি নেই : আশা ইউনিভার্সিটি, হামদর্দ ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি খুলনা, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়।
শুধু ভিসি নেই : নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, আইন ভঙ্গ করে পরিচালিত হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আইনের মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রেসিডেন্ট অনুমোদিত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগের জন্য বাধ্য করা হবে।



 

Show all comments
  • সাগর ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৩৪ এএম says : 1
    প্রতিষ্ঠানের অবস্থা যদি এই হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা তা আল্লাহই ভালো জানেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Rayhan ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:২৬ পিএম says : 0
    উচ্চশিক্ষা দানের পরিবর্তে এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সনদ বিক্রির ব্যবসায় নেমেছে
    Total Reply(0) Reply
  • রনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:৩১ পিএম says : 0
    যাদের এগুলো তত্ত্বাবধায়ন করা তারা কি তাদের দ্বায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

২৭ জানুয়ারি, ২০২০
৮ এপ্রিল, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ