পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাবে দিনের বেশিরভাগ সময় শিল্প-কলকারখানার চাকা বন্ধ থাকে। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বেশি দামে গ্যাস-বিদ্যুৎ নেয়ার আগ্রহ দেখালেও তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে ঝড়, বৃষ্টি, রোদে পুড়ে যে কৃষক খাদ্যশস্য উৎপাদন করেন সেখানেও সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। ডিজেল-কেরোসিনের বৃদ্ধি, সারের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি, পর্যাপ্ত সার সঙ্কট নানাবিধ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কয়েকদিন আগে দেশের অর্থনীতির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আবহাওয়ার ভিন্নরূপ হিসেবে বন্যা, খরা বাড়ছে। এর মধ্যে জ্বালানি ও সারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকলেও চলতি বছরের শুরুতে হঠাৎ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশে^র পাশাপাশি পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র। নিত্যপণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। ডলারের অভাবে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে শিল্প-কারখানা দিনের লম্বা সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দেয়ায় বাড়তি চাপে পড়েছেন মিল মালিকরা। ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শিল্প-কারখানার সমস্যার কথা জানিয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ-গ্রাস ক্রয় করতে চেয়েছেন। সেখানেও সুখবর মেলেনি।
সঙ্কট সমাধানের প্রত্যাশায় এর আগে ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে বসেছেন। তিনিও সুখবর দিতে পারেননি। সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি কবে নাগাদ এলএনজি আমদানি করা যাবে। অথচ জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী বলেছেন, কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে দিনের বেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার শপথ নেয়ার কথা। এরইমধ্যে নতুন করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানায় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। সরকারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তথ্য মতে, ৩১ জেলায় বিভিন্ন ফসলের ১০ হাজার ২০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেড় হাজার কৃষকের ৩৪৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে আমন ৫৬০০ হেক্টর, সবজি ২৮০০ হেক্টর এবং পানবরজ ৮৮ হেক্টর। মাস কয়েক আগে সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা হয়েছে উত্তরাঞ্চলেও। এমনিতেই সার, ডিজেল এবং কেরোসিনসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষককে। এতে কৃষি উৎপাদন খরচ বাড়ছে, যার প্রভাব ইতোমধ্যে পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাজারে। বেড়েছে চালের দাম। শাকসবজি, মুরগি ও ডিমের দামও আকাশচুম্বী। অন্যান্য পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। শেষ পর্যন্ত চালসহ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় আগামীতে আরো কঠিন সময় আসছে কৃষক ও ভোক্তাদের। মানুষের মধ্যে হা-হুতাশ আরো বাড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই অবস্থায় কৃষক ও ভোক্তা কেউ ভালো নেই।
অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে না। দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে কোনো জমি ফেলে না রেখে উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে গত ১১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রধানমন্ত্রীর কাছে সার্বিক অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে প্রধান অর্থনৈতিক ইউনিটের পলিসি সাপোর্ট উইং। এতে কোনো সূচকেই দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত রেমিট্যান্সের বেহাল দশা। সেপ্টেম্বরের মতো চলতি অক্টোবর মাসেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার চলতি মাসের ২৭ দিনের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, অক্টোবর মাসের প্রথম ২৭ দিনে মাত্র ১৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এছাড়া আমদানিতে লাগাম টানার পরও রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার ছাড়তে হচ্ছে। ফলে রিজার্ভ ৩৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়নে নেমে গেছে। প্রতিদিনই যা কমছে। ডলার সঙ্কটের কারণে অব্যাহতভাবে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় আনো বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। একই সঙ্গে দেশের ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণও বেড়েছে। অপরদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ঋণের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে প্রতি বছরই অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। একই সঙ্গে আমদানি দায় মেটাতে ডলার কিনতে হওয়ায় ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এতেকরে ধারের চাহিদাও বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশসহ ৪৫টি দেশ খাদ্যসঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৭টি সঙ্কট বিরাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ ডলার সঙ্কট, জ্বালানির উচ্চমূল্য, অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি, খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ ও করোনা পরিস্থিতি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও জাতিসংঘের সংস্থা ‘ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (ফাও)’ বলছে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ আসছে। ক্রমেই পরিস্থিতি ওই দিকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটে দেশের শিল্পখাতের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কটে চরম উদ্বিগ্ন। যেখানে সরকারের নীতি নির্ধারকরা আগামীতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সুখবর নিতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করছেন। তারা সরকারকে নানান পরামর্শ দিয়ে বলছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবস্থা করা না গেলে হাজার হাজার শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্য ডুবে যাবে। এতে দেশের ৪৫ লাখ শ্রমিক বিপাকে পড়ে যাবেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, ৭/৮ ঘণ্টা কারখানা বন্ধ থাকায় অনেকে আমাকে ফোন করে জানতে চান শিল্প খাতে তো বিদ্যুৎ থাকার কথা ছিল। বিদ্যুতের জন্য সোলার, কেপটিভ ও জেনারেটর রেখেও সমাধান হচ্ছে না।
সূত্র মতে, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। তার ওপর গত ১ আগস্ট কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানো হয় ইউরিয়া সারের দাম। এর পরই গত ৫ আগস্ট বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের (ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রল) দাম। এর মধ্যে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে, পেট্রলের লিটার ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা করা হয়। অর্থাৎ পেট্রল ও অকটেনের মূল্যবৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে ডিজেল ও কেরোসিন সরাসরি কৃষির সাথে জড়িত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ মূলত দুটি। একটি হলো ডলার সঙ্কটের কারণে নিত্যপণ্য আমদানি কমিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত সার, ডিজেলসহ জ্বালানি মূল্য বাড়িয়ে দেয়া।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সার ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর ফলে কৃষি উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের নেতিবাচক প্রভাভ। ইতোমধ্যে ধাক্কা লেগেছে চলমান আমন চাষে। এরপর আসন্ন বোরো মৌসুমে আরো বড় ধাক্কা লাগবে। ইতোমধ্যে শাকসবজি চাষাবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাজারে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও আকাশচুম্বী। সবকিছু মিলে নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ বেড়েই চলেছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এখনই কৃষিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে না। তারপরও কৃষি পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু, আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত ডিজেলের বর্তমান মূল্য বহাল থাকলে তা ধানের উৎপাদন খরচ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। এতে কৃষি উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন বোরো ধানের চাল বাজারে আসবে। চালের বাজার তখন কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা আন্দাজ করতে পারছেন না কেউ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. আনোয়ার ফারুক বলেন, বর্তমান অবস্থায় ইরিগেশনসহ কৃষি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। পরিবহনসহ সব ধরনের ভাড়া বাড়বে। যার ফলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আরো বাড়বে। ভর্তুকি সাপোর্ট দিয়ে ডিজেলের দাম কমিয়ে রাখা গেলে ভালো হতো বলে মনে করেন সাবেক এই কর্মকর্তা।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, টেক্সটাইল মিল মালিকরা চতুর্মুখী সঙ্কটে আছে। একদিকে অর্ডার সঙ্কট। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে চাপ দিচ্ছে, গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ১০-১২ ঘণ্টা কারখানা চালু রেখে শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব কারণে অনেক শিল্প রুগ্ন হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে ১৬ বিলিয়ন ডলারের এ শিল্প টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।