Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১০ অক্টােবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রথম বছরেই বাজিমাত বেক্সিমকো সুকুকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কমপক্ষে ৯ শতাংশ মুনাফা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্রিন সুকুক বন্ডে প্রথম বছর কমপক্ষে ১১ শতাংশ নগদ মুনাফা দিতে হবে। এর পাশাপাশি আরও যে সুযোগ রাখা হয়েছে, তাতে ১৬ শতাংশের বেশি মুনাফা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীর। এই বন্ডে মুনাফা ঘোষণা করা হবে বছরে দুই বার। এরই মধ্যে ষান্মাসিকে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ মুনাফা বিতরণ করা হয়েছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুনাফা ঘোষণা এখনও বাকি।

তবে বেক্সিমকো লিমিটেডের লভ্যাংশ ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় এখন সুকুক বন্ডের মুনাফা সর্বনিম্ন কত হবে, সেটি নির্দিষ্ট হয়ে গেল। আগেই ঘোষণা ছিল, এই বন্ডের মুনাফা হবে কমপক্ষে ৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে বেক্সিমকো লিমিটেডের লভ্যাংশ ১০ শতাংশের বেশি যত হবে, তার ১০ শতাংশ যোগ হবে সুকুকের মুনাফায়।

বেক্সিমকো লিমিটেড গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে এবার লভ্যাংশ দিয়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি বাকি ২০ শতাংশের ১০ শতাংশ হিসেবে আরও ২ শতাংশ সুকুকের মুনাফায় যোগ হবে। অর্থাৎ মুনাফা হবে কমপক্ষে ১১ শতাংশ।

তবে এই বন্ডটিতে আরও একটি সুযোগ রাখা হয়েছে, যে কারণে বিনিয়োগকারীর মুনাফা এখান থেকেও অনেক বেশি হতে পারে। বলা হয়েছে, কোনো বিনিয়োগকারী এক বছর শেষে তার মোট বিনিয়োগের এক-পঞ্চমাংশ টাকা তুলে নিতে পারবেন অথবা এর বিপরীতে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার পাবেন তিনি। এই শেয়ার আবার তিনি পাবেন গত দুই মাসে বাজার মূল্যের ভরিত গড় থেকে ২৫ শতাংশ ছাড়ে। সেই শেয়ার যদি বাজার মূল্যে বিক্রি করা হয়, সেখানে বিনিয়োগকারীর সেই এক-পঞ্চমাংশ টাকার ওপর আরও ৩৩ শতাংশ মুনাফা হবে, যা তার সামগ্রিক বিনিয়োগের ওপর মুনাফা আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এভাবে নগদ ১১ শতাংশ এবং বিনিয়োগের এক-পঞ্চমাংশের বিপরীতে শেয়ার নিয়ে বাড়তি আরও ছয় শতাংশ মিলিয়ে মুনাফা ছাড়াতে পারে ১৬ শতাংশ। এই মুনাফার ক্ষেত্রে শেয়ারের দর যতই থাকুক, সেটি ধর্তব্যে আসবে না যদি না বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে শেয়ার দেয়ার পর সেটির দর কমে যায়।

বেক্সিমকো লিমিটেডের বর্তমান শেয়ার দর ১১৮ টাকা ২০ পয়সা। গত দুই মাসের গড় ধরলে যদি দাম ১২৫ টাকাও হয়, তাহলে বিনিয়োগকারী ২৫ শতাংশ ছাড়ে সেই শেয়ার পাবেন ৯৩ টাকা ৭৫ পয়সায়।
ধরা যাক একজন বিনিয়োগকারী সুকুকে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এখান থেকে এক লাখ টাকা তিনি তুলে নিতে পারবেন অথবা এই টাকায় শেয়ার নিতে পারবেন। ৯৩ টাকা ৭৫ পয়সা দরে তিনি শেয়ার পাবেন এক হাজার ৬৬টি। বাজার দরে তিনি বিক্রি করতে পারবেন ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

পাঁচ লাখ টাকায় তিনি ৫৫ হাজার টাকা মুনাফার সঙ্গে এই ২৬ হাজার টাকা যোগ হলে মোট মুনাফা দাঁড়ায় ৮১ হাজার টাকা বা ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ। সুকুকের এই মুনাফা করমুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীর প্রকৃত আয় আরও বেশি।

চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করা এই বন্ডটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সেভাবে জনপ্রিয় হয়নি। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের বন্ডের ইউনিট দর নেমে এসেছে ৮৮ টাকায়। এক পর্যায়ে সেটি ৮৪ টাকাতেও নেমে গিয়েছিল।

এই বন্ডটির লেনদেন করা একটি ঝামেলাও এ কারণে যে, প্রতিটি লেনদেনের জন্য হাওলা চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। কোনো বিনিয়োগকারী যদি একসঙ্গে অনেকগুলো ইউনিট পান, তাহলে এই হাওলা তার জন্য কোনো ব্যাপার না। কিন্তু তিনি যদি একবারে ১০টি পান, তাহলে বন্ডের প্রতি ইউনিটে বাড়বে ৫ টাকা, আর যদি ৫টি পান, তাহলে খরচ বাড়বে ১০ টাকা।

এই হাওলা পদ্ধতির মতো শেয়ার দরের শতকরা হার হিসেবে যেভাবে লেনদেনের চার্জ নির্ধারণ হয়, সেভাবে সুকুক লেনদেনের দাবিও আছে।
অবশ্য বন্ডের ইউনিট দর কমে যাওয়া নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য আরও বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে এ কারণে যে তিনি যদি এভাবে আগামী বছরও ১১ শতাংশ মুনাফা পান, তাহলে ৮৮ টাকাতেই সেটি পাবেন। অর্থাৎ মুনাফার হার হয় ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগামী বছরও তিনি এক-পঞ্চমাংশ টাকায় শেয়ার নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ওই বছর তার মুনাফা ১৮ শতাংশ হয়ে যেতে পারে।

চলতি বছরও লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে এ কারণে যে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের যে মুনাফা ঘোষিত হবে, সেটি আগামী জানুয়ারিতে আসবে। যদি ৫ দশমিক ২ শতাংশ নগদ মুনাফাও পাওয়া যায়, তাহলে তিনি ৮৮ টাকার ওপরেই সেটি পাবেন। তাহলে মুনাফার হার হয় ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর বন্ডের এক বছর পূর্তি হওয়ায় তিনি এক-পঞ্চমাংশের টাকায় শেয়ার নিয়ে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার সুযোগও পাবেন।

এই বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা তুলেছে বেক্সিমকো। এই অর্থের সিংহভাগ তারা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা ও লাঠশালার চরে ১ হাজার একর জমির উপর নির্মাণ হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াটের তিস্তা সোলার লিমিটেডের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াটের করতোয়া সোলার লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এই দুটি কোম্পানির ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সি পাওয়ার। এর ৭৫ শতাংশের মালিক আবার বেক্সিমকো লিমিটেড।



 

Show all comments
  • Md Parves Hossain ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:১৭ এএম says : 0
    মুসলমান হিসেবে আমরা চাই ইসলামি অর্থ নীতি ব্যবস্থা। সেটা এখনও সম্ভব না হলেও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ‘সুকুক’ বন্ড আমাদের সেই আশা অনেকটাই পুরণ করবে
    Total Reply(0) Reply
  • Shariful Islam ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:১৬ এএম says : 0
    মালয়েশিয়ার দৃষ্টান্ত ফলো করা উচিত। অধিক পরিমাণে সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়া হউক। ইসলামিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর হাসান তনু ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:১৮ এএম says : 0
    মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে সুদের বন্ডের চেয়ে ইসলামিক বন্ডের (সুকুক) চাহিদা অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড এই সুকুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:১৭ এএম says : 0
    হালাল ও নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সুকুক বেশ ভালো মনে হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:১৭ এএম says : 0
    প্রচলিত আর্থিক বাজারে মুসলিম বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার আগ্রহ থাকলেও, নানা সীমাবদ্ধতায় তারা তা করতে পারছেন না। কারণ, শরিয়াহ্ আইন অনুযায়ী সুদ, জুয়া, ও ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এ সমস্যাগুলোর বড় সমাধান হিসেবে সুকুক বা ইসলামিক বন্ড আবির্ভূত হয়েছে। ইসলামি আর্থিক নীতিমালার সম্মতিতে মুনাফার জন্য ট্রেজারি বন্ডের অনুরূপ হচ্ছে ইসলামি বন্ড সুকুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Aman Ullah ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:১৬ এএম says : 0
    সুদমুক্ত সমাজ গঠনে এ ধরণের বন্ড বাজারে আনায় বেক্সিমকোকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেক্সিমকো সুকুক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ