পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে সুখবর নেই। করোনাভাইরাস কমে গেলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু থাকছেই না। গত অক্টোবরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ৮৬ জন। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু যারা এডিস মশা নিধনের দায়িত্বে, সেই সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসন শুধুই ‘কথামালা’ প্রচার করছে; এসিড নিধনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। শুধু তাই নয়, একজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘ডেঙ্গু বিদেশ থেকে বিমানে বাংলাদেশে এসেছে।’ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজকে একটা বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছেÑ সেটা হলো ডেঙ্গু নিয়ে। ২০১৯ সালে ১ লাখ ডেঙ্গু রোগী ছিল। এবার এরই মধ্যে ৩৬ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকাতেই ২৩ হাজার, চট্টগ্রামে ৪ হাজার, খুলনায় ১৬শ’, সিলেটে সব থেকে কম ৫৩ জন। অলরেডি ১৪১ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। প্রধানমন্ত্রীও রিকুয়েস্ট করেছেন, সবার বাড়িঘর যেন ক্লিন রাখা হয় এবং বিশেষ করে পানি যেন না জমতে পারে এটার জন্য।
সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে প্রচারণা চালিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
রাজধানী ঢাকায় এডিস মশা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়েছে। একই সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে প্রায় তিনগুণ। অক্টোবরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২১ হাজার ৯৩২ জন। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৯১১ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরো ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবছর ডেঙ্গু জ্বরে এখন পর্যন্ত ১৪১ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮৭৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৮৪ জনে। চলতি বছরে ৩৮ হাজার ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী সারা দেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরই মধ্যে ২৬ হাজার ১৬ জন রাজধানী ঢাকায় এবং ১২ হাজার ৮ জন রোগী ঢাকার বাইরের রয়েছেন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৪৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩২৮ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৮৭৩ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৮৪ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৩০৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ২৭৫ জন। এতে আরো বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৮ হাজার ২৪ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন ৩৪ হাজার ২৯৯ জন। এই বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অথচ গত রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ও এডিস মশা ছিল না। ডেঙ্গু রোগও ছিল না। এটা বাইরে থেকে এসেছে দাবি করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, হয়তো প্লেনে করে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের দেশে এডিস মশা প্রবেশ করেছে। আর সে মশা দিনকে দিন প্রজনন করে চলেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। অক্টোবর মাসে দিনে গড়ে ৬০ জন করে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। চমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। ডেঙ্গুর ভয়ঙ্কর রূপ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এরপরও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৮৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন এবং বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। তবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৪ জন। সিভিল সার্জনের রেকর্ড বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। জানুয়ারিতে ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে চারজন, মার্চে একজন এবং এপ্রিলে তিনজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।
তবে জুন থেকে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। জুন মাসে ১৯ জন, জুলাইয়ে ৬৪ জন এবং আগস্টে ১১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হন। সেপ্টেম্বরে আগের মাসের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ অর্থাৎ ৬০১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। আর অক্টোবরে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৬১ জন। সে হিসাবে গেল মাসে গড়ে ৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৬ জন ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬ জন পুরুষ, ৭০২ জন মহিলা এবং ৬২৮ জন শিশু। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১৪ জনের মধ্যে মহিলা সাতজন, শিশু চারজন এবং পুরুষ তিনজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।