Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডিসেম্বরে শুরু হবে সুন্দরবনের বাঘ গণনা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ৮:৪৩ পিএম

সুন্দরবনে ডিসেম্বর থেকে “ক্যামেরা ট্র্যাপিং” পদ্ধতিতে বাঘ গণনার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
তিনি বলেন, “পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তিন কোটি ২১ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।”
এর আগে ২৩ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। “সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প” এর মোট ব্যয় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় আরও প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ের কয়েকটি কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু সেই বরাদ্দে এখনো অনুমোদন মেলেনি। গোটা প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।
প্রকল্পের শুধু বাঘশুমারি খাতে তিন কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সেই ব্যয় সামান্য কমিয়ে তিন কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মোহসিন বলেন, “প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য ১৭ অক্টোবর বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাঘ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। সভায় কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা, ক্যামেরা সংগ্রহ, ম্যাপ তৈরি, ক্যামেরা স্থাপনের স্থান নির্ধারণের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বনের গভীরে এমন সব জায়গায় ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, যেখান দিয়ে বাঘ চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে। খুঁটিতে বাঘের আনুমানিক উচ্চতায় ক্যামেরা বসানো হবে। এসব ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ বা কোনো প্রাণী চলাফেরা করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি উঠবে।”
এই পদ্ধতিতে ২০১৩-২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রথম বাঘ জরিপ করা হয়। তখন বাঘ পাওয়া গিয়েছিল ১০৬টি। দ্বিতীয়বার ২০১৭-২০১৮ জরিপ করে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১১৪টি। এ তথ্য জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল।
তিনি বলেন, “আশা করছি, এবার শুমারিতেও বাঘের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, “চোরাশিকারী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অতিরিক্ত লবণের কারণে সুন্দরবনে বাঘ হুমকির মুখে রয়েছে। যে কারণে বাঘের হালনাগাদ তথ্য ও বাঘ সংরক্ষণে বনবিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বনের যে এলাকায় বাঘ বেশি রয়েছে সেখান থেকে কয়েকটি বাঘ অন্য যে এলাকায় বাঘ কম রয়েছে, সেখানে স্থানান্তর করা হবে। বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্যান্য রোগব্যাধি এবং মাত্রা নির্ণয় করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সুন্দরবনের মধ্যে শিবসা, পশুর ও পাঙ্গাশিয়াসহ বড় নদীগুলোর কারণে বাঘ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে, বাঘের ইনব্রিডিং হচ্ছে। অন্তঃপ্রজননের কারণে, বাঘ নানাভাবে দুর্বল এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছে। সুন্দরবনের একস্থান থেকে নিয়ে, অন্য স্থানে বাঘ স্থানান্তর করা গেলে প্রজননের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে।”
গোটা প্রকল্পের বিষয়টি তুলে ধরে মিহির কুমার দো বলেন, “বাঘের আবাসস্থল প্রায় প্রতিবছর আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি থাকে, সেসব জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায়, সেজন্য আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ, পাইপ ও ড্রোন ক্রয় করা হবে।”
সুন্দরবনের গ্রামসংলগ্ন এলাকায় নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে থাকে। ওই ৬০ কিলোমিটার অংশে নাইলনের বেড়া নির্মাণ করে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রকল্পে।
এছাড়া সুন্দরবনে ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বনের সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকারপ্রাণী আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। এসব প্রাণীর ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে নানাভাবে অর্ধশত বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২২টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়।
এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ১১টি বাঘের চামড়া এবং বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ