পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এবং চলমান ডলার সঙ্কট সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকে ঋণ হিসেবে ডলার সংগ্রহের চেষ্টা করছে সরকার। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। এই ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য ১৪ দিনের সফরে আজ বুধবার ঢাকায় আসছেন আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার করার কথা রয়েছে তাদের। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইএমএফের ঋণ কতটা ভূমিকা পালন করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ আইএমএফের ঋণের কঠিন শর্তের কথা সবার জানা।
জানতে চাইলে আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আইএমএফ থেকে ঋণ আমাদের জন্য ভালো। এটা হলে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা এগিয়ে আসবে। কারণ আইএমএফ যেখানে ঋণ দেয় সেখানে অনেক শর্ত থাকে বা ওই দেশের সক্ষমতা যাচাই করা হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, তাৎক্ষণিকতার জন্য অর্থটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর টেকসই হওয়ার জন্য আইএমএফ যে সমস্ত সংস্কারের প্রস্তাব দিচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যদি এসব সংস্কার প্রস্তাবকে কার্যকর করতে পারে তবে ভবিষ্যতে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান সঙ্কট টাকা দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়, পলিসি দিয়ে সমাধান করতে হবে। আর আইএমএফের শর্ত পরিপালনের মাধ্যমেই তা সম্ভব। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা এবং বিশ্বব্যংকের ঋণ সহায়তা পাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, এসব ঋণের বিপরীতে কঠিন কোনো শর্ত থাকছে না। অনেকটা সহজ শর্তেই এসব ঋণ পাওয়া যাবে। তবে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনা ও রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে কিছু বিষয়ে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ঢাকায় আসা মিশন এ নিয়ে আলোচনা করবে।
বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ঋণ সুবিধা দিতে আইএমএফের একটি মিশন আজ বুধবার রাতে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তারা আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে। এর মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-সহ বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। এসব বৈঠকে ঋণ পাওয়ার জন্য আইএমএফের শর্তের বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা হবে। এবারের মিশনেও নেতৃত্ব দেবেন এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দ। মিশনটি এর আগে গত জুলাইয়ে ঢাকায় এসেছিল। ২২ জুলাই তারা বাংলাদেশ মিশন সম্পন্ন করে ঢাকা ত্যাগ করে। এবারের মিশনের বৈঠক শুরু হবে বৃহস্পতিবার থেকে। ওই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হবে। প্রতিদিন তারা একাধিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রায় দিন বিকেলেই বৈঠকে বসবে। এর আগে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের গ্রহণযোগ্য হিসাব পদ্ধতি প্রণয়নের ব্যাপারে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, সুদের হারে আরোপিত সীমা প্রত্যাহার, মন্দ ঋণ কমানো এবং সম্ভাব্য খেলাপি ঋণ ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও তারা জানতে চেয়েছে। এছাড়া রাজস্ব খাতে সংস্কার, কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, ভর্তুকি কমানো এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ চিত্র সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে। আইএমএফের প্রশ্নগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের পর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করছে। প্রতিবেদনটি তারা আইএমএফের মিশনকে দেবে। একই সঙ্গে এটি অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হবে। আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের সময় এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আলোচনা হবে। এই সফরে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি বা এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির আওতায় ঋণ চুক্তিতে পৌঁছানো নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সঙ্গে আইএমএফের নতুন উদ্যোগ রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় বাংলাদেশ ঋণসহায়তা পাবে কি না, সে বিষয়েও আলোচনা হবে। আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে এই ঝুঁকি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদে ঋণসহায়তা দেয়ার জন্য আরএসএফ গঠন করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আইএমএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রস্তাবিত ঋণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, চলতি অর্থবছরেই প্রাথমিকভাবে দেড় বিলিয়ন ডলার পেতে আলোচনা হয়েছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় এবার তিনি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। সাইডলাইনে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করেন গভর্নর। সেখানে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা নিয়ে কথা বলেন। সব মিলিয়ে দুই সংস্থার কাছে সাড়ে ৫০০ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরে জাপানের কাছ থেকেও বাজেট সহায়তার আওতায় ঋণ পেতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, আইএমএফের এ বিষয়গুলোকে শর্ত বলা ঠিক হবে না। পরামর্শ তো রাখতেই পারে। তারা এটা বলবে এ কারণে, আয়ের তুলনায় আমাদের রাজস্ব কম। ভবিষ্যতে আমদানির ক্ষেত্রে যাতে বাধা না হয়, সেজন্য এ তহবিল আমাদের প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সরকার আইএমএফের ঋণ পেতে বড় একটি শর্ত বাস্তবায়ন করেছে। সেটি হচ্ছেÑ জ্বালানি তেল ও সারের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কিছুটা কমিয়েছে। এর বাইরে অন্য যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলোর একটি অংশও বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আংশিকভাবে হলেও বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। আইএমএফ চাচ্ছে এটি পুরোপুরিভাবে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভিন্নমত রয়েছে। তারা বলেছে, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশও তাই করছে। একেবারে বাজারের হাতে তা ছেড়ে দিলে বাজার অস্থির হয়ে যাবে। ডলারের সরবরাহ বাড়লে দাম বেশি কমে যাবে। আবার ডলারের সরবরাহ কমে গেলে দাম বেশি বেড়ে যাবে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখছে। বিনিময় হারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই ধরনের দর নির্ধারণ করে। একটি সাধারণ বা নমিনাল বিনিময় হার। এটি হচ্ছে বর্তমান বাজার দর। অন্যটি হচ্ছে রিয়েল বা প্রকৃত বিনিময় হার। এটি মুদ্রার মান সম্পর্কে ধারণা পেতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য আছেÑ এমন সব দেশের মুদ্রার মান, মূল্যস্ফীতি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়। নমিনাল বিনিময় হারে বর্তমানে ডলারের দরও বিভিন্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করছে ৯৭ টাকা দরে। রফতানি বিল কেনা হচ্ছে ৯৯ টাকা দরে। রেমিট্যান্স কেনা হচ্ছে ১০৭ টাকা দরে। ফলে ডলারের কোনো একক দর নেই। আইএমএফ এ খাতে সমন্বয় আনার কথা বলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে ক্রমেই বাজারভিত্তিক দরের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যে কারণে এখন বিনিময় হারে কিছুটা হেরফের হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা ঠিক হয়ে যাবে। প্রকৃত বিনিময় হার এখন ১১১ টাকার বেশি। আইএমএফ বাজার ও প্রকৃত বিনিময় হারের মধ্যে সমন্বয় করার কথা বলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এ বিষয়ে ব্যবধান অনেক কমে এসেছে। আগামী দিনে আরো কমে যাবে।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ঋণের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণ পাচ্ছে। এর মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। যদিও কোটা অনুযায়ী আইএমএফের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে পারত বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। বাজেট সহায়তা তহবিলের সুবিধা হলো এটি পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।