পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীতে ঠাসা রাজধানীর হাসপাতালগুলো। সুস্থ হওয়ার তুলনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতি মুহূর্তেই চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। অনেক হাসপাতালে শয্যার কয়েকগুণ রোগী। যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তবে সাধ্যমতো রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ঘণ্টায় নতুন রোগী আসছেন ৪ থেকে ৫ জন। ওয়ার্ডে সিট না থাকায় মেঝেতে রেখেই সেবা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলোতে নির্ধারিত শয্যার চেয়েও দ্বিগুণ রোগী ভর্তি আছেন।
পরিসংখ্যান দেখলে এই চিত্র আরো ষ্পষ্ট হয়। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২২ জন, যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৯০০ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওইদিন তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল একই সময় পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫২০ ও ঢাকার বাইরে ৪০২ জন। নতুন আক্রান্তসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪০৪ জনে।
অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সর্বমোট ৩০ হাজার ২৯ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৬ হাজার ৫১৩ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ১১২ জন। চলতি বছরের ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন সুমাইয়া আকতার, যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন আব্দুর রাজ্জাক, গুলশান এলাকার ৫ বছরের শিশু আলামিন হোসেনকে নিয়ে মিটফোর্ট হাসপাতালে রয়েছেন ভাই হাসান আহমেদ। তাদের মতো আরো কয়েকশ রোগী এখানে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা গেছে, রোগীদের অধিকাংশই কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও জুরাইনের বাসিন্দা। হাসপাতালের নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ ও ৭তম তলায় ডেঙ্গু ইউনিট।
জুরাইন এলাকা থেকে পাঁচ বছরের শিশু রাফিউল ইসলামকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মা রাহেলা খাতুন। শয্যা না পাওয়ায় শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা চলছে রাফিউলের। সন্তানের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে মা রাহেলা খাতুন বলেন, স্যালাইন চলছে, এর মধ্যেই কিছুক্ষণ পরপর সে বমি করছে। কোনো কিছুই খাচ্ছে না। রাফিউলের এমন অবস্থা দেখে ভাই ইমরান হোসেনেরও চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। ইমরান জানান, গত তিন দিন ধরে মেঝেতে ছোট ভাইকে নিয়ে পড়ে আছি। মেঝেতে ঠাণ্ডা বেশি তাই জ্বরও কমছে না।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে কান্না করছে কেরানীগঞ্জ থেকে আসা আরাফাত নামের দুই বছর বয়সী আরেক শিশু। শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি ব্যথায় কাতরাচ্ছিল শিশু আরাফাত। শিশুটির মা সুরভি বেগম জানান, দুই দিন ধরে এখানে ভর্তি আছি। শয্যা নেই তাই মাটিতে বাচ্চাকে নিয়ে শুয়ে আছি। জ্বর ১০০-এর নিচে নামছেই না। বাচ্চা কিছুই খায় না। শুধু কান্নাকাটি আর বমি করে। দুশ্চিন্তায় আছি, কিছু ভালো লাগছে না।
ডেঙ্গু কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তার উত্তর, আমাদের এলাকায় এখন অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না, যে কারণে গরম আর অন্ধকারে মশা বেশি কামড়াচ্ছে। হয়তো এজন্যই ডেঙ্গু হয়েছে।
শুধু রাফিউল আরাফাতের নয়, শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে অসংখ্য শিশুই শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। একই অবস্থা পুরুষ ওর্য়াডেও। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। আবার অনেক রোগী শয্যা না পেয়ে অন্য হাসপাতালে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশু ওর্য়াডে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে এখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসছে, তারা শুরুতে আসছে না। শুরুতে ডেঙ্গু হয়েছে কি না বুঝতে না পেরে, জ্বরের নানা চিকিৎসা নিয়ে থাকে। ফলে অবস্থা সিরিয়াস হয়ে যায়, এরপর তারা হাসপাতালে আসে। যে কারণে শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ থাকে।
অথচ চলতি বছরের শুরু থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলেও বছরের মাঝামাঝি এসে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে রোগটি। বছরের প্রথম পাঁচ মাস সংক্রমণের হার অত্যন্ত কম থাকলেও গত তিন মাসে তা আকাশ ছুঁয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে প্রাণহানির ঘটনাও। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও পরের তিন মাসে ঘুরে গেছে দৃশ্যপট। জুনে এক জনের মৃত্যু হলেও জুলাইয়ে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় নয়ে। আগস্টে আরও বেড়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ জনে। সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪ জনে। আর চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১২৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২০ জনে। এপ্রিলেও নিয়ন্ত্রণে থাকা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন ভর্তি হয়েছিলেন। মে মাসে সেই সংখ্যা এক লাফে প্রায় আটগুণ বেড়ে হয় ১৬৩ জন। তবে এতে তেমন দুঃশ্চিতার কারণ ছিল না। কারণ এ সময়ের ব্যবধানে কোন মৃত্যু নেই।
তবে এর পরের মাসে (জুনে) ৭৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয় একজনের। জুলাইয়ে এই আরও ভয়াবহ হয় পরিস্থিতি। সে সময়ে ১ হাজার ৫৭১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে মৃত্যু হয় ৯ জনের। আগস্ট মাসে রোগী ভর্তির সংখ্যা আগের মাসের তুলণায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৩ হাজার ৫২১ জন হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয় ১১ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার ৯১১ জন হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনের পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ। এসময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের। ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ৯৩৭ জন রোগী।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের। তবে ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা যায়নি। এর আগে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।