পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রংপুর সার্কিট হাউসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম খুব একটা বাড়েনি।’ কয়েকদিন আগে দেয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাণিজ্যমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। দেশের একশ্রেণির মানুষের কাছে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি কোনো সমস্যাই নয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে জিএম কাদের বলেছিলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কোটি কোটি মানুষ নিদারুণ কষ্টে আছেন। খেটে খাওয়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না থাকলেও সরকারি দলের লোকজনের কাছে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি সমস্যা মনে হচ্ছে না। তারা যেভাবে লুটপাট করেছেন তাতে চালের কেজি ৫০০ টাকা হলেও সেটা তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে।’ গতকাল শুক্রবার পণ্যমূল্য নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী যখন এ দাবি করেন, তখন তিনি স্ববিরোধী এবং অসয়াত্বের কথা জানিয়ে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের একটু কষ্ট হচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে। দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমানো হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রি করছে। ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি করা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বক্তব্যে বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য এবং ভোক্তাদের দিনলিপির পুরো চিত্র উঠে এসেছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি দেশের একশ্রেণির মানুষের জন্য সমস্যা নয়। আবার নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত কোটি কোটি মানুষের জন্য জীবনমরণ সমস্যা। সংসাসে খাদ্যপণ্য কিনে চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণায় উঠে এসেছে দেশের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং সীমিত আয়ের মানুষ টিকে থাকার চেষ্টায় মাছ, গোশত খাওয়া ছেড়েই দিতে বাধ্য হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় তিন বেলার বদলে দু’বেলা খাচ্ছেন, তারপরও সংসার চালাতে পারছেন না। যে পরিবারকে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এক মাসের খাদ্যের জন্য ৬ হাজার ৫৪১ টাকা খরচ করতে হতো; ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবরের খাদ্যপণ্যের মূল্য বিবেচনায় সে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করে তা মোকাবিলার জন্য প্রধানমন্ত্রী এখন থেকে কিছু কিছু খাদ্য সঞ্চয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতে মানুষকে যখন ঋণ করে, জমানো পুঁজি ভেঙে, ধারদেনা করে খাবার ক্রয় করতে হচ্ছে; তখন খাদ্য সঞ্চয় করবে কীভাবে?
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত কয়েক বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও সেভাবে আয় বাড়েনি। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পর্যায়ের পরিবারগুলো জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিকৃত পণ্যের শুল্ক ও কর ছাড় পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। তবু বাজারে এর প্রভাব নেই। বরং ক্রমেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বাজারে গিয়ে হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন দেশের ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারের আগুনে মানুষের অবস্থা খারাপ, শুধু খারাপ বললে ভুল হবে; খুবই খারাপ। উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া সব মানুষই কষ্টে আছেন। আর এই কষ্ট থেকে ক্ষোভ-হতাশা বাড়ছে। বিশেষ করে যারা নির্দিষ্ট আয়ের (ফিক্সড ইনকাম গ্রুপ) তারা খুব সঙ্কটে রয়েছেন। সংসারের ব্যয় কাটছাঁট করতে করতে অবস্থা অনেকটা এমন যে, জামা কাটতে কাটতে দেখা যাবে আর কিছুই নেই।
জানতে চাইলে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ৫৫ টাকার কমে কোনো চাল পাওয়া যায় না বাজারে। ভোজ্যতেল, চিনি, ডালসহ সব জিনিসের দামই চড়া। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে পণ্যমূল্যে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের এক দিন পর দ্রব্যমূল্য নিয়ে উল্লিখিত এ দাকি করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সিপিডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন, যা থেকে শিগগিরই উত্তরণের লক্ষণ নেই। এমন বাস্তবতায় অনেকেই খাদ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মাছ, গোশতসহ বিভিন্ন আমিষ।
নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতাসহ সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে গতকাল রাজধানীর খিলগাঁও, বাসাবো, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম লাগামছাড়া। চড়া মূল্যের কারণে কাঁচাবাজার অনেকটাই অস্থিতিশীল।
সরজমিনে প্রতিবেদনটি করার সময় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুর রউফের সঙ্গে। তিনি ২ হাজার টাকা নিয়ে সাপ্তাহিক বাজার করতে খিলগাঁও রেলগেট বাজারে এসেছেন। মাছ, গোশত ও তেল কিনে বাজারে দাঁড়িয়ে আছেন মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ নিয়ে। কেনার বাকি রয়েছে অনেক কিছু। অথচ টাকা প্রায় শেষ। তিনি জানান, বাকি টাকায় কীভাবে মুদি আর কাঁচ বাজার শেষ করবেন সে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত তিনি।
আবদুর রউফের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত এমন অনেকেই লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বাজারের হিসাব মেলাতে পারছেন না। এক মাসের ব্যবধানে দুবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে চিনির দাম। তবু চিনির দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। এক সপ্তাহ আগে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম সমান (প্রতি কেজি ৯৫ টাকা) হয়ে গিয়েছিল। এখন খোলা চিনি আরও ৫ টাকা বেশি, কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে খোলা চিনির সরবরাহ কম। আর প্যাকেটজাত চিনি সবখানে মেলেও না।
সরকার নির্ধারিত নতুন দাম অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে বাজার পরিস্থিতি ভিন্ন। এর আগে আরও একবার চিনির দাম বেঁধে দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। অথচ পাম অয়েল প্রতি লিটার ৮ টাকা কমে ১২৫ টাকা পুনঃনিরধারণ করেছে সরকার। বিক্রেতারা চিনির মূল্য বাড়ালেও সরকার নির্ধারিত কম দামে তেল বিক্রি করছেন না।
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে বসবাসরত সীমিত আয়ের মানুষ। বস্তুত বাড়ি ভাড়া ও সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে বর্তমানে অনেক সীমিত আয়ের মানুষের অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে তারা জরুরি প্রয়োজনেও সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছেন না। ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যাদের আয় বাড়েনি তাদের জীবনযাত্রার মান কমেছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছেন। যাদের সঞ্চয় নেই তারা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে দিশেহারা হচ্ছেন। বতর্মানে নিত্যপণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কী করে পরিবারের খরচ মেটানো হবে, এটাই সীমিত আয়ের মানুষের প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি হিসাবেই গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ওই মাসে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তার আগের মাস আগস্টের তথ্য ছিল আরও ভয়াবহ। মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ; মজুরি বেড়েছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও মূল্যস্ফীতির এই হিসাব নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
এর অর্থ হচ্ছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই পণ্য বা সেবা পেতে এখন ১০৯ টাকা ১০ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। আর যে দিনমজুর-শ্রমিক বা অন্য পেশার মানুষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে তার শ্রমের বিনিময়ে ১০০ টাকা পেয়েছেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তারা পেয়েছেন ১০৬ টাকা ৮৬ পয়সা। তবে এক বছরে আয় বাড়লেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। কেননা, এখন ১০৬ টাকা ৮৬ পয়সা আয়ের বিপরীতে মানুষকে খরচ করতে হচ্ছে- ১০৯ টাকা ১০ পয়সা।
হিসাব বলছে, দেশের দিনমজুর-শ্রমিকসহ বেসরকারি পেশাজীবীরা যে বাড়তি আয় করছেন, তা দিয়ে সামাল দেয়া যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির চাপ। উল্টো আরও বেশি খরচের বোঝা চাপছে তাদের মাথায়। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি আর মজুরি সূচকের মধ্যে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২৪ শতাংশ পয়েন্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটি আর কখনই দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে মানুষের সঞ্চয় বা জীবনযাত্রার বাড়তি চাহিদা মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। উচ্চবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া সবাই কষ্টে আছে।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষের দূরবস্থার নিয়ে করা এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মানুষ খুবই কষ্টে রয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় সব খাদ্যপণ্যসহ সার্বিক খরচ ছিল ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবরের খাদ্যপণ্যের মূল্য বিবেচনায় এ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসিক ২২ হাজার ৪২১ টাকা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বেতন বাড়াতে হবে। ওএমএস কার্যক্রম আরো বাড়ানো উচিত। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। সরকার ওএমএসসহ যেসব পণ্য দিচ্ছে, তা সারাদেশে সহজলভ্য করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত জুনেও মূল্যস্ফীতির হার জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল। আগের চার মাসেও একই চিত্র ছিল দেশে। সাধারণ সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির কিছুটা বেশি থাকে। তবে অর্থনীতির এই পরিচিত প্রবণতায় ছেদ ঘটেছে ফেব্রুয়ারি থেকে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ, মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ১৫। পরের মাস এপ্রিলে মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছিল ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, মজুরি বেড়েছিল ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জুন মাসে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে ওঠে, যা ছিল ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিপরীতে ওই মাসে মজুরি সূচক বেড়েছিল ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে আসে; ওই মাসে মজুরি সূচক ছিল ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগস্টে মজুরি সূচক বেড়ে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশে ওঠে। মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। সবশেষ সেপ্টেম্বর মাসে মজুরি সূচক বেড়ে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে অবস্থান করছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি এই তথ্যই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশের মানুষ কষ্টে আছেন। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তারা। উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া সব মানুষই কষ্টে আছেন।
সাধারণত মূল্যস্ফীতি ও মজুরি হার বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য ১ শতাংশের মতো হয়। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি সূচক কমপক্ষে ১ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। যখন মূল্যস্ফীতি মজুরি বৃদ্ধিকে টপকে যায়, অর্থনীতির পরিভাষায় সেটিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলা হয়ে থাকে। আট মাস ধরে দেশে সেটিই হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। এর জেরে বেড়ে চলা খাদ্যসঙ্কট বিশ্বকে একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে বলে বারবার সতর্ক করছে, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা। ছোট-বড় সব দেশেই এখন মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
অর্থনীতির আরেক গবেষক সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, গত মার্চ মাসে আমরা এক গবেষণা চালিয়ে দেখেছি, বিবিএসের তথ্যের চেয়ে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ। তার পরও বিবিএসের বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও মজুরি সূচকের তথ্য নিয়েই যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলেও কিন্তু আমরা উদ্বেগজনক একটি তথ্য দেখতে পাচ্ছি। আর সেটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ আয় বাড়লেও মানুষের তা দিয়ে চলছে না। হয় ধারদেনা করে চলছে; না হয় কম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি মানুষের বাড়তি আয় খেয়ে ফেলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।