Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দিলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে যাবে :

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সরকার নিজের অগণতান্ত্রিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। সেই সাথে আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করা সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার ক্ষুণ্ন করা মানে সংবিধানের লঙ্ঘন। গণতান্ত্রিক দেশে এটি কোন ভাবেই কাম্য নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, রাজনৈতিক সমাবেশ করা যে কোনো দলের সাংবিধানিক অধিকার। এতে বাধা দেওয়া সংবিধানের লঙ্ঘন করা। এটা খুবই দুঃখজনক। গণতান্ত্রিক দেশে সব রাজনৈতিক দলের সমাবেশ করার অধিকার থাকবে। কিন্তু তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নানান কূটকৌশলে বাধা সৃষ্টি করাটা অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদি আচরণ। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এটা গঠনতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠতে পারে। এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। রাজনীতিতে এই বাধা দেওয়া সংস্কৃতির অবসান হোক এটাই আমরা চাই।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল গুলশানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকার জনগণকে ভয় পায় বলেই বিএনপির সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা দিয়ে সরকার পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি অনেকদিন থেকে আন্দোলন করছে। এবার সেই দাবির সাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কট নিরসনের দাবি নিয়ে এ দলটি বেশ জোরেসোরে মাঠে নেমেছে। রাজধানী ঢাকার ১৬টি জোনে সমাবেশের পর সারাদেশে ৯টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করছে দলটি। ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় শহরের সমাবেশ। কিন্তু এই সমাবেশ তারা নির্বিঘ্নে করতে পারছে না। সমাবেশে যাতে লোক সমাগম বেশি না হয় সে জন্য সরকার কূটকৌশলে নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। পরিবহন বন্ধ করে অঘোষিত হরতাল সরকার নিজেই পালন করছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। তাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশিসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। চট্টগ্রামের সমাবেশে উপস্থিতি যাতে বেশি না হয় সেজন্য কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর এলাকায় সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। তারপরও চট্টগ্রাম মহানগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠের সমাবেশে বিপুল নেতা-কর্মী সমর্থকের সমাগম ঘটে।
এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশকে ঘিরেও ময়মনসিংহ জেলা শহরকে সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেয় সরকার। নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর এসব এলাকার যানবাহন চলাচল আগের দিন থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, সমাবেশে আসা নোকর্মীরা যাতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য শহরের প্রবেশদ্বারে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা পাহরা বসে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরাও বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করে সমাবেশে আসা লোকজনদের আটকে দেয়। কিন্তু এত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেও নেতা-কর্মীরা সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়ে যায়। অনেকে রিকশা ভ্যানে চড়ে, পায়ে হেঁটে আগের দিন রাতেই সমাবেশ স্থলে পৌঁছে যায়।
এত বাধার পরও সমাবেশে বিপুল সংখ্যক উপস্থিতি সরকারকে আরো বেশি ভাবনায় ফেলে দেয়। তাইতো এবার খুলনার সমাবেশকে (২২ অক্টোবর) ঘিরে সরকার আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সমাবেশের দুইদিন আগে থেকে জেলার সব বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে মাইক্রোবাস, পিকভাপভ্যান সব ভাড়া করেছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। সরকারের চাপে তারাও ভাড়ার অগ্রিম ফেরত দিচ্ছে। শহরের যত হোটেল, বোর্ডিং আছে সবগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা যাতে নদীপথে আসতে না পারে সে জন্য লঞ্চ, ট্রলার এসব যানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। অনেকে পুরানো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরও বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ-আন্দোলনে বাধা দিয়ে সরকার আন্দোলনকে সহিংসতার পথে ঠেলে দিচ্ছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ক্রমাগত সরকার ও সরকারি দল উসকানি দিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের আন্দোলন দমন করতে যেয়ে তারা এক ধরনের পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করে আসছে। বিরোধীদের সমাবেশ-মহাসমাবেশের আগে বাসসহ গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে অঘোষিত হরতাল পরিস্থিতি তৈরি করছে এবং জনভোগান্তি বাড়িয়ে তুলছে। ভোগান্তির কারণে সরকারের প্রতি জনরোষ আরো বাড়ছে। সরকার বুঝতে পারছে না। এভাবে বাধা দিয়ে আন্দোলন ঠেকানো যায় না। বরং বাধা দিলে গণআন্দোলন আরও তীব্র হয়।
তবে বিএনপির সমাবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছে সরকার। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার বিএনপির সমাবেশে কোনো বাধা দিচ্ছে না। বরং তাদের সমাবেশ যাতে শান্তিপূর্ণ হয় সে জন্য প্রশাসনিক সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শান্তিপূর্ণ আন্দোলন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ