Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়ায় লাখ লাখ অবৈধ কর্মীর ভাগ্য অনিশ্চিত

সাগরপথের কর্মীরা প্রতারণার শিকার : কনস্যুলেটের সেবা থেকে বঞ্চিত

প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২১ এএম, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬

মালয়েশিয়া পেনাং থেকে শামসুল ইসলাম : মালয়েশিয়ায় সাগরপথে যাওয়া লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীর ভাগ্য অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে প্রায় ৫০ হাজার সাগরপথের অবৈধ প্রবাসী কর্মীর পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। পেনাংয়ে স্থাপিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট-এর সেবা থেকে প্রবাসী কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছে। কনস্যুলেটের দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ইসমাইল প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের সমস্যা সমাধান ও সেবার মান বাড়াতে চরম উদাসীন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দালাল চক্রের মাধ্যমে সাগরপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়া এসব কর্মী বৈধতা লাভে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। দালাল চক্র মালয়েশিয়ার পেনাংসহ বিভিন্ন ডিষ্ট্রিক্টে সাগরপথের অবৈধ কর্মীদের বৈধ ওয়ার্ক পারমিট করে দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে  ফিংগার নিয়ে জনপ্রতি ৪ থেকে ৬ হাজার রিংগিট হাতিয়ে নিচ্ছে। গতকাল মালয়েশিয়ার পেনাংয়ের জর্জ টাউনে একাধিক সাগরপথের কর্মী এ তথ্য জানিয়েছে। পেনাং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সাগরপথের অবৈধ কর্মীদের ফিংগার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফেরত দিচ্ছে। এতে তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হচ্ছে। অবৈধ প্রবাসী কর্মীরা বৈধ ওয়ার্ক পারমিট যোগাতে না পেরে প্রতিদিন কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে আউট পাশ সংগ্রহ করে খালি হাতে দেশে ফিরে যাচ্ছে। হাই কমিশনের লেবার উইং-এর ক্লার্ক মোকসেদ আউট পাশ দেয়ার সময় ১শ’ রিংগিট করে ঘুষ নিচ্ছে। ভুক্ত ভোগী কর্মীরা এ তথ্য জানিয়েছে। প্রত্যেক সোর্স কান্ট্রির অবৈধ কর্মীরা মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মাত্র ৪শ’ রিংগিট জমা দিয়েই ১৫ দিনের আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছে। অথচ এক মাত্র একটি এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশী অবৈধ কর্মীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৯শ’ ৬৫ রিংগিট নিয়ে আউট পাশ দিচ্ছে। এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি , সহ-সভাপতি ও মহাসচিব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন জানান। পরে এ নিয়ে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অন্যান্য দেশের ন্যায় ৪ শ’ রিংগিট দিয়েই সপ্তাহে দু’দিন আউট পাস দিতে সম্মত হন। হাই কমিশনে পাসপোর্ট ও আউট পাস নিতে গিয়ে প্রবাসী কর্মীরা কতিপয় দালালের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তিন চার বছর আগে সাগরপথের কর্মীরা জনপ্রতি ২ লাখ ২০ হাজার এবং আড়াই লাখ টাকা করে নিয়ে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছে। দালাল চক্র সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। সাগরপথের অবৈধ কর্মীরা বর্তমানে জনপ্রতি ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার রিংগিট দালালকে দিয়ে বেসরকারী কোম্পানী মাইজীর মাধ্যমে ফিংগার দিয়ে চরম হতাশায় ভুগছে। এরা আদৌ বৈধতার ওয়ার্ক পারমিট পাবে কি না তা’ কেউ কিছু বলতে পারছে না। মালয়েশিয়া সরকার গত এপ্রিল মাস থেকে অবৈধ কর্মীদের মাইজীর মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার রিংগিটের বিনিময়ে বৈধতা দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। সাগরপথে বাংলাদেশ থেকে আসা কর্মীদের এসুযোগ পাবে না। যেসব ব্যক্তি ভিজিট ভিসায়, স্টুডেন্ট ভিসা ও বৈধ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে শুধুমাত্র তারাই রি-হেয়ারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিংগার দিয়ে বৈধতা দিচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রি-হেয়ারিং প্রক্রিয়ায় অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি মো: নাজমুল ইসলাম বাবুল ও সহ-সভাপতি শাহ আলম হাওলাদার গতকাল রোববার ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে রি-হেয়ারিং প্রক্রিয়ায় অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়া শুরু করায় মালয়েশিয়া সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে রি-হেয়ারিং-এর চড়া ফি অর্ধেক কমিয়ে অসহায় কর্মীদের বৈধতা লাভের সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। নেতৃদ্বয় সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়া অবৈধ কর্মীদের বৈধতা লাভের জন্য উভয় দেশের সরকারের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সাগরপথে ট্রলারে মালয়েশিয়ায় যাওয়া সিরাজগঞ্জের প্রবাসী কর্মী লাল মিয়া , হাবিব, যশোর মনিরামপুর থানার কাঠালতলা গ্রামের মাজেদ, টেকনাফের মো: ইসহাক, কক্সবাজার জেলার নূরুল আলম, সিরাজগঞ্জের উজ্জ্বল, ঠান্ডু মিয়া (নুরুল ইসলাম) ও চট্রগ্রামের মোহাম্মদ নূর ইনকিলাবকে জানান, তারা দালালের মাধ্যমে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে পালিয়ে থেকে দৈনিক ৪৫ রিংগিট থেকে ৫০ রিংগিট করে মজুরি পাচ্ছে। ট্রলারে মালয়েশিয়ায় গিয়ে গত তিন বছরে মেয়ে সাদিয়া ইসলাম মৌসুমীকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়াচ্ছেন। গতকাল বিকেলে পেনাং জর্জটাউনস্থ ঐতিহাসিক বাংলাদেশি মসজিদের সামনে মাগুরার শালিখা থানার  দিঘী গ্রামের প্রবাসী বৈধ কর্মী মো: ফারুক বিশ্বাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দালালের খপ্পরে পড়ে গত ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তার ছেলে মো: আল-আমিন (১৭) সাগরপথে মালয়েশিয়ায় আসার সময় নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজ ছেলের জন্য তার মা জরিনা কান্নাকাটি করে পাগলের মতো হয়ে গেছে। একই বছর মাগুরার মিতুল বিশ্বাস, ইশরাম ও শুক্কুর দালালের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় আসার পথে নিখোঁজ হয়েছে। পেনাংস্থ জুরু সেন্ট্রাল জেল ও পার্শ্ববর্তী আলস্তা জেলে বেশ কিছু অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এসব কর্মীদের আত্মীয়-স্বজনরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
পেনাংয়ে রোহিঙ্গা হত্যার প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পেনাংস্থ নূর হিদায়া মসজিদে পেনাং বাংলাদেশ মুসলিম কউিনিটির উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  সংগঠনের সভাপতি মোশাররফ হোসেন রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মো: আব্দুল নকীব, উপদেষ্টা মো: মনির হোসেন, ডেপুটি সেক্রেটারি আলহাজ মোহাম্মদ ইউনুস আলী, মো: নুরুল ইসলাম,  মো: বাদেলুর রহমান, দেলাওয়ার হোসেন ও মো: শাহ আলম। নিহত রোহিঙ্গাদের রূহের মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থ্যতার জন্য মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি মো: নুরুল ইসলাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়ায়

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ