Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাইসেন্স নিতে ঘুষ দেয় ৬১ ভাগ এসএমই

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ’র গবেষণা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০৪ এএম

শতকরা ৫১ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের (এসএমই) ট্রেডলাইসেন্স তৈরি এবং লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ঘুষ দিচ্ছে। ৯০ ভাগ প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করে দুর্নীতি একটি সংক্রামক ব্যাধি। দুর্নীতির কারণে বাজারে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়Ñ এমনটি বিশ্বাস করে ৭১ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রতিষ্ঠান। সরকারি নিয়ম-কানুন এড়াতে ৬১ শতাংশ এসএমই ঘুষ দেয়।

বেশি ঘুষ লেনদেন হয় নতুন লাইসেন্স সংগ্রহ এবং বছর বছর নবায়নের ক্ষেত্রে। চলমান দুর্নীতি দমনে ৭৮ ভাগ এসএমই প্রতিষ্ঠান বেসরকারি উদ্যোগে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনে আগ্রহী। সম্প্রতি ‘সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ’র এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএমই সংশ্লিষ্ট ৮শ’ জন প্রতিনিধির মধ্যে এ জারিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ৪ জন প্রতিনিধি এসএমই’র উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ৪শ’ জন সেবা খাত সংশ্লিষ্ট। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, অর্ধেকের বেশি (৫২.০৬%) অংশগ্রহণকারি জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা গ্রহণের সময় ঘুষ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন লাইসেন্স গ্রহণ, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স নবায়ন, সরকারি সেবা ব্যবহার, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) সংগ্রহ এবং ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) সনদ সংগ্রহ। এ ক্ষেত্রে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন মনে করেন যে, দুর্নীতি একটি সংক্রামক ব্যাধি। ৬২.৪ ভাগ ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা বিশ্বাস করেন, প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যেই দুর্নীতির শেকড় অন্তর্নিহিত এবং আরও অধিক সংখ্যক (৭১.৩%) মনে করেন যে, দুর্নীতির অত্যধিক উপস্থিতি বাজারকে আরও অসম প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। অর্ধেকের বেশি মনে করেন, বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে কঠোর সরকারি নিয়ম-কানুন দুর্নীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এ ধারণার কারণে ৬১ ভাগ উদ্যেঠক্ত অনৈতিক পথ বেছে নিচ্ছেন।

নতুন লাইসেন্স তৈরি ও নবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিশেষ উপস্থিতি (যথাক্রমে ৩৬.৪% এবং ৩১.৮%) পরিলক্ষিত হয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ উদ্যোক্তা ঘুষ দিয়েছেন। তারা এ ধারণা পোষণ করেন যে, সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ঘুষ দেয়া প্রয়োজন। ঘুষ সময় বাঁচায়। দুর্নীতির সবচেয়ে বড় জায়গার মধ্যে রয়েছে লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত অফিস, ট্যাক্স অফিস, স্থানীয় সরকার/সিটি করপোরেশন/ পৌরসভা, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ। এসব তথ্য এটিই নির্দেশ করছে যে, সেখান থেকে উদ্যোক্তাদের জনসেবা পাওয়ার কথা, সেখানেই তারা বেশি দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন।

গবেষণার তথ্য মতে, অর্থ-সম্পদের প্রতি লোভ এবং সেই সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের স্বচ্ছতার অভাবই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করে। দুর্নীতিবিরোধী আইনের অনিয়মিত প্রয়োগ এবং দুর্নীতিবিরোধী আইনের একদমই প্রয়োগ না করাও দুর্নীতি উদ্বুদ্ধ করে।

গবেষণায় দুর্নীতির সর্বাধিক পরিচিত মাধ্যম উঠে এসেছে ‘উৎকোচ’ এবং ‘রাজনৈতিক প্রভাব’র ব্যবহার। এছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি এবং মাত্রাহীন পৃষ্ঠপোষকতা। একই ধরনের দুর্নীতি আমাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরস্থিতির প্রতিবিম্ব স্বরূপ। যেটা আমাদের অর্থনৈতিক খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জাতীয় সরকারের দুর্নীতি (২৭.৬%) চেয়ে স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি মাধ্যমে এসএমই খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎকোচ, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্কই হচ্ছে সহজে সেবা গ্রহণ এবং অবৈধভাবে টিকে থাকার তরিকা।

ব্যাপক বিস্তৃত দুর্নীতির তুলনায়, অভিযোগ প্রদানের হার অত্যন্ত কম। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ২.৩ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো এক পর্যায়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন, যার মধ্যে ৭০ ভাগ বলেছেন যে, তারা অভিযোগ প্রদান করে নেতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন। যদিও সরকার বারবার বলছেন যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু অর্ধেকেরও কম (৪৬%) অংশগ্রহণকারী মনে করেন যে, জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি রোধে সত্যিই কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এদের বেশিরভাগই মনে করেন না যে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর গবেষণায় দেখা যায়, এখানে অন্যতম একটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগের পদ্ধতি। এখানে দু’টি বিষয় বিবেচনার দাবি রাখে। (এক) অভিযোগ ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং (দুই) সহজে অভিযোগ করা যাচ্ছে কি না। দু’টি ক্ষেত্রেই উত্তরদাতাদের সমানসংখ্যক ইতিবাচক ও নেতিবাচক উত্তর উঠে এসেছে। এতে গবেষণার ফলাফলে বলা যায় যে, অভিযোগ ব্যবস্থা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অনুকূলে নয়। হুইসেল ব্লোয়ারদের অনিরাপত্তাও আরেকটি চিন্তার বিষয়, যেখানে অধিকাংশ উত্তরদাতা (৭২.৮%) তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

অধিকাংশ উদ্যোক্তা (৫৫.১%) দুর্নীতি প্রতিরোধে তাদের ব্যবসায়িক সংগঠনগুলার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। ৭৮ %’র বেশি এসএমই উদ্যোক্তারা স্বাধীনভাবে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি প্ল্যাটফর্মে যোগ দিতে আগ্রহী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেডলাইসেন্স
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ