পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কৃষি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠা ‘শ্রমিক সংকট’ মোকাবেলায় জোর দেয়া হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর। জমি চাষ থেকে ফসল মাড়াই- সমগ্র প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি
হাসান সোহেল : ‘কৃষি বিপ্লব’ বেগবান করতে সরকারের নজর এখন প্রযুক্তির দিকে। বর্তমানে কৃষি প্রযুক্তিতে বিপ্লব আনতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। কৃষি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠা ‘শ্রমিক সংকট’ মোকাবেলায় জোর দেয়া হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর। জমি চাষ থেকে ফসল মাড়াই- সমগ্র প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি সহজলভ্য ও জনপ্রিয় করতে ৩০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এই হার ৫০ ভাগে উন্নীত করার চেষ্টা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এটা বাস্তবায়িত হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। এখন কম জমিতে চাষাবাদ করে অনেক বেশি ফসল পাওয়া যাচ্ছে। আর এসব প্রযুক্তির বড় অংশই দেশে উদ্ভাবিত।
এ প্রসঙ্গে সাবেক কৃষি সচিব মো. আনোয়ার ফারুক বলেন, কিছু যন্ত্রপাতি দেশীয় আমদানিকারকদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হলেও বেশিরভাগই কৃষি গবেষণা কাউন্সিল থেকে উদ্ভাবন করা হয়েছে। সেগুলোর বাজারজাত ও সহজলভ্য করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি- ‘২য় পর্যায়’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫১ জেলায় কৃষক পর্যায়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেগুলো জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে। একই সঙ্গে এ প্রকল্পের মাধ্যমে যন্ত্র ক্রয়ে আগ্রহী কৃষক কিংবা কৃষক গ্রুপকে ৩০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১১ হাজার ৯১৮টি কৃষি যন্ত্রপাতির বিপরীতে এ সহায়তা দেয়া হয়েছে। যদিও বর্তমানে সরকার যা বাড়িয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ করেছে। এমন কি অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও সরবরাহ করছে। আনোয়ার ফারুক বলেন, সার্বিকভাবে কৃষিতে শ্রমিকসংকট ও উৎপাদন বাড়াতে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারি উদ্যোগে কৃষিতে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহারে সুফলও মিলছে। উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। ১৯৭০-৭১ সালে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ছিল ৭৮৮ কেজি। ১৯৯০-৯১ সালে এসে তা ১ হাজার ৭১১ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। ২০০০-০১ সালে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২৩ কেজিতে। ২০১৪-১৫ সালে এই উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪১ কেজিতে। ধানের মতো গমের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। আলু, ভুট্টারও হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে। পেঁয়াজ, রসুন উৎপাদনেও এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২-১৩ সালে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ১৩ লাখ ৫৮ হাজার টন। ২০১৩-১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লাখ এক হাজার টনে। ২০১৪-১৫ সালে এসে তা দাঁড়ায় ১৯ লাখ ৩০ হাজার টনে। পরের বছর তা আরো ২০ হাজার টন বাড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সংযোজনের একটি হচ্ছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল কাটা, খোসা থেকে দানা আলাদা করা যায়। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ছোট আকৃতির ধানি জমি চাষেও রয়েছে এর ব্যবহার। এছাড়া বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্যও রয়েছে ব্রডকাস্ট সিডার। নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য আছে সিডড্রিল। জমির শক্ত মাটি কর্ষণের জন্য সাব সয়লার, ধান কিংবা অন্যান্য ফসলী বীজ শুকানোর জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রায়ার যন্ত্র। ধান, গম, ভুট্টা শুকাতেও ব্যাচ ড্রায়ার নামক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া শস্য কাটার জন্য রয়েছে পাওয়ার রিপার মেশিন। বীজ ঝেড়ে পরিষ্কারের জন্য আছে ইউনার যন্ত্র। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩ কোটি মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। তবে উৎপাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত এর প্রায় ১৪ শতাংশই নষ্ট হয়। এর পরিমাণ প্রায় ৪২ লাখ টনের মতো। যদি চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি শতভাগ ব্যবহার সম্ভব হয়, তাহলে এ ক্ষতি দূর করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জহির উদ্দিন আহমেদ এনডিসি ইনকিলাবকে বলেন, আশির দশক থেকে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। যা ধারাবাহিকভাবে চলছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রযুক্তির পাশপাশি নতুন নতুন উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। প্রযুক্তির পাশপাশি চাষাবাদ পদ্ধতিতে পরিবর্তন, পোকা-মাকড় দমনে পেস্টিসাইডের ব্যবহার অগ্রণী ভূমিকা কৃষিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। তবে সবকিছুর মূলে এ যান্ত্রিক, উদ্ভাবনী ও তথ্যপ্রযুক্তি ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জানা গেছে, বেসরকারি পর্যায়ে দেশেও কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, যশোর, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, ইউনার, ইউডার (নিড়ানির যন্ত্র), ধান, গম ও ভুট্টা মাড়াই কল প্রভৃতি যন্ত্রাংশ তৈরি হয়ে থাকে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে কৃষি উৎপাদনে খরচ বহুগুণ বেড়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে এক একর জমির ধান কাটতে কৃষকের খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে কাটলে খরচ হবে মাত্র দেড় হাজার টাকা। তাই শ্রম মজুরি বাঁচাতে হলে ধান ও রবিশস্য রোপণ, কাটা ও মাড়াই সবকিছু আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর করা গেলে শিক্ষিত মানুষও কৃষি কাজে এগিয়ে আসবেন। বর্তমানে কৃষি কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আধুনিক উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধেরও ব্যবহার বেড়েছে। প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পর্যাপ্ত পানি সেচের ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হচ্ছে। আধুনিক কৃষি শিক্ষার ব্যবস্থা, ভূমি সংরক্ষণ, ভূমি সম্পদ উন্নয়ন, বিজ্ঞানসম্মত ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন হচ্ছে। শস্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) তথ্যানুযায়ী, ট্রাক্টর ব্যবহার করে ধান আবাদ করলে ৬৯ আর গম আবাদে ৮৪ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হয় কৃষকের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা জানান, চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদন খরচ কমানো ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া ট্রাক্টর ও কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার উৎপাদন সময় বাঁচাতেও কার্যকর। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে ধান কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করা যায়। এর সঠিক ব্যবহারে প্রতি একরে উৎপাদন খরচ ৫ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় নামিয়ে আনাও সম্ভব।
বরিশালের উজিরপুর থানার কৃষক মিজান সরদার জানান, আধুনিক চাষাবাদে অতীব প্রয়েজনীয় ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার এবং কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের দাম অধিক হওয়ায় অনেক কৃষক এগুলো ক্রয় করতে পারেন না। তাই কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ সহায়তা বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।
জানা গেছে, আধুনিক বিশ্বে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্তমানে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। সে দেশে এসব প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে অসংখ্য আধুনিক কৃষি খামার গড়ে উঠেছে। যেখানে প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি কৃষক কাজ করছে। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য মতে, কৃষি হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বড় শিল্প। জিডিপি’র প্রায় ২৩ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। দেশে কৃষি পরিবার রয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি। দেশের ১ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরের মধ্যে বন এলাকা হচ্ছে প্রায় ২৬ লাখ হেক্টর, আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ হেক্টর, অ-আবাদযোগ্য জমি প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর, আবাদযোগ্য পতিত জমি হচ্ছে প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর, এক ফসলি জমির পরিমাণ ২২ লাখ হেক্টর, দুই ফসলি জমির পরিমাণ ৪১ লাখ হেক্টর, তিন ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর, নিট ফসলি জমি ৭৮ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর ও মোট ফসলি জমি হচ্ছে প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর। কৃষিতে নিয়োজিত জনশক্তি হচ্ছে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস ইনকিলাবকে বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার কেবল শুরু করেছি মাত্র। অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে। তারপরও অনেক দূরে যাওয়ার ইচ্ছা। তিনি বলেন, উৎপাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত প্রায় ১৪ শতাংশ ফসলই নষ্ট হয়ে যায়। সঠিকভাবে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা কাজে লাগাতে পারলে এ ক্ষতি দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। চৈতন্য কুমার দাস বলেন, বর্তমান সরকার কৃষক এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পৃথকভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে মাটির গুণাগুণ ও কৃষি পরিবেশ রক্ষায় জৈব কৃষিনীতি তৈরিতে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ‘জাতীয় জৈব কৃষি নীতি’-২০১৬ খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। যা কৃষকদের অধিক ফসল উৎপাদনে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, ২০৩০ সালে দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদা হবে প্রায় সাড়ে চার কোটি টন। বিপুল এ খাদ্যশস্যের চাহিদা মেটাতে স্বল্প জমিতে অধিক ফলন জরুরি। তবে ধান, গম ও ভুট্টাজাতীয় খাদ্যশস্যে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে এরই মধ্যে অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বে প্রতি হেক্টর জমিতে গড় উৎপাদন প্রায় তিন টন আর বাংলাদেশে তা ৪ দশমিক ১৫ টন। এক্ষেত্রে বাড়তি খাদ্যশস্য উৎপাদনে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে কৃষিকাজ যান্ত্রিকীকরণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।