পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
* সরকার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত
আবু হেনা মুক্তি : এবারও গরান নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা। তবে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে সুন্দরবনে অবশেষে গোলপাতা সংগ্রহ করার অনুমতি মিলেছে। ২৫ ডিসেম্বর বাওয়ালীদের গোলপাতার বিএলসি চেকিং করবে বনবিভাগ। চলতি মাসের শেষের দিকে নীতিমালা অনুযায়ী পাস প্রদান করবে। বিগত ৫ বছর রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গরানের পাস-পারমিট বন্ধ রয়েছে। তবে এ বছরেও গরান আহরণে কোন গ্রিন সিগন্যাল পায়নি বন বিভাগ। কি কারণে কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বন বিভাগ নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছে তার কোন ব্যাখ্যা নেই তাদের কাছে। অথচ গরান আহরণ বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গরানে গরানে এঁটে যাওয়ায় বনের অভ্যন্তরে হরিণ, বানর, শূকরসহ রয়েল বেঙ্গল টাইগার পর্যন্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বনবিভাগ গরান আহরণের পক্ষে মতামত দিলেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বনজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছে। এই কর্মকা-ের সাথে জড়িত হাজার হাজার পরিবার এবারও তাকিয়ে আছে গরান আহরণের দিকে। সূত্রমতে, অন্যান্য বছর এ সময় গোলপাতা আহরণের জন্য বন অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুন্দরবন পাশ্চিম বনবিভাগ খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের অধীনে বাওয়ালীদের নৌকার বিএলসিসহ আনুষঙ্গিক দাপ্তরিক কর্মকা- শেষ করতো। ৩০ নভেম্বর থেকে সাধারণত গোলপাতার পাস-পারমিট দেয়া শুরু হয়ে থাকে। এবার অবশ্য বন বিভাগ অনেক দেরীতে গোলপাতার পাস-পারমিট দিচ্ছে। অন্যান্য বছর এ সময় সুন্দরবনে কয়েক হাজার নৌকা গোলপাতা আহরণের জন্য বনে প্রবেশ করে। গোলপাতা আহরণ করেই এরা গরান আহরণ করে থাকে। কিন্তু গত ৫ বছর আশায় আশায় থেকে বনজীবীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এবার গত বছরের তুলনায় গোলপাতা আহরণ করতে বাওয়ালীরা বনে কম যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এবারও তাদের ভাগ্যে কি আছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছে না বন বিভাগ। তবুও আশা ছাড়েনি কেউই। বন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, এ বছরের মত গোলপাতা আহরণ করা গেলেও গরান আহরণ করা যাবে না। এসব পেশায় জড়িতদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে কিভাবে গরান আহরণ বন্ধ করা হল তা অভিজ্ঞ মহলের বোধগম্য নয়। এদিকে হাজার হাজার বাওয়ালী ও ব্যবসায়ী গোলপাতা গরান আহরণের জন্য আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শেষ পর্যন্ত গরানের পাস-পারমিট না হলে বাওয়ালী ও ব্যবসায়ীরা পথে বসবে। গরান আহরণ করতে না পারলে মহাজনদের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারবে না। গতবার অনেকে নৌকা বিক্রি করে ঋণ মুক্ত হয়। আবার কেউ কেউ ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চাতক পাখির মত চেয়ে আছে।
সূত্রমতে, সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগ এলাকায় প্রতিবছর কয়েকটি কম্পার্টমেন্টে বিপুল পরিমাণ গোলপাতা ও গরান হয়। সময় মত গোলপাতা না কাটলে তা বছরে বছরে নষ্ট হয়ে যায়। আবার গোলপাতা কাটলে নতুন গোলপাতা জন্ম নেয়। বন বিভাগের জরিপে পাশ্চিম বনবিভাগের আওতায় খুলনা রেঞ্জের ১৭নং কম্পার্টমেন্টের ২৩ শ’ ৩৪ হেক্টর বনভূমি থেকে ম্যানেজমেন্ট প্লান অনুযায়ী ৪৭ হাজার ১৩ মণ ও রেঞ্জ অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী ৫৮ হাজার ৬শ’ ৯০ মণ গরান আহরণ করা সম্ভব। সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪২ নং কম্পার্টমেন্টের ৬শ’ ৯৪ হেক্টর বনভূমি থেকে ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী ৬৭ হাজার ৩শ’ ৪৩ মণ ও রেঞ্জ অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী ১ লাখ ৩৬ হাজার ১শ’ ৫ মণ, ৫০/১ নং কম্পার্টমেন্টের ১৮শ’ ৫৬ হেক্টর বনভূমি থেকে ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭শ’ ৪৮ মণ ও রেঞ্জ অফিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮শ’ ৯৫ মণ গরান আহরণ করা যেতে পারে। এছাড়া পূর্ব বনবিভাগের আওতায় চাঁদপাই রেঞ্জের ৯ কম্পার্টমেন্টের ১ হাজার ৩শ’ ৪১ হেক্টর বনভূমি থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তার রিপোর্ট অনুযায়ী ৬ লাখ ৯ হাজার ৪শ’ ৫০ মণ গরান আহরণ করা সম্ভব। শরণখোলা রেঞ্জের ৮/১২ বি ও ৪৫ থেকে ২ হাজার ৭শ’ ৭ হেক্টর বনভূমি থেকে রেঞ্জ অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী ৯২,২০৭ মণ গরান সংগ্রহ করা যেতে পারে।
সূত্রটি জানায়, খুলনার বনজীবী ফেডারেশন গত বছর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গরান আহরণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করলেও অনুমতি মেলেনি। সূত্রটি আরো জানায়, একটি মহল এবারও গরান আহরণ বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে। আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক জটিলতায় গরান আরহণ বন্ধ থাকলে এ বছরও সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। বাওয়ালীরা ইনকিলাবকে জানায়, প্রতিবছর গরান জন্মায়। গরান প্রতিবছর না কাটলে এর বংশ বিস্তার হয় না। এবং বনভূমি এঁটে যায়। অনেক গরান প্রাকৃতিক নিয়মেই নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া বনের প্রাণীরা গরান বনে গিয়ে আটকে মারা যায়। গত বছর গোলপাতা আহরণ মৌসুমে বহু বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ গরান বনে দেখা গেছে। উল্লেখ্য, বাড়িঘর নির্মাণ ও বাড়ির বেড়া নির্মাণে গরান অত্যন্ত কার্যকরি ভূমিকা রাখে। গরান হার্ডবোর্ড মিলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হার্ডবোর্ড মিল কর্তৃপক্ষ তাদের কাঁচামালের দু®প্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করে সরকারি রাজস্ব প্রদানপূর্বক সুন্দরবন থেকে গরান আহরণের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ পত্র দিয়েছেন।
এদিকে বনজীবী ফেডারেশনের আহ্বায়ক বাচ্চু মীর ইনকিলাবকে বলেন, কেন এবং কি কারণে গরান আহরণ করার অনুমতি বনবিভাগ দিচ্ছে না তা আমাদের বোধ্যগম্য নয়। সরকারের রাজস্ব আদায়ের কথা বিবেচনা করে এবং বনজীবীদের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় রেখে এবার গরান আহরণ সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।