Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চিনির দাম বাড়লেও কমেনি তেলের

আগের মতোই চড়া মাছ-ডিম-সবজি’র দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চিনিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে ও পাম তেলে ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এর ফলে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা, সুপার পাম অয়েল প্রতি লিটার ১২৫ টাকা নির্ধারণ হয়েছে। এর আগেই প্রতি লিটার সয়াবিনে ১৪ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দাম পুননিরধারণের এ ঘোষণার পর বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। তবে সয়াবিন তেল আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকায় এবং খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকা দরেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ বোতলজাত যে সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকা লিটারে কেনার কথা ক্রেতাদের, তা এখনও কিনতে হচ্ছে ১৯২ টাকা করে। দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তি দামের তেলের বোতল বাজারে চলে এলেও দাম কমানোর ঘোষণা দেয়ার ৪ দিন পরও নতুন বোতলের দেখা নেই বাজারে। কাঁচাবাজারের সাধারণ মুদির দোকান তো বটেই, এমনকি চেইন সুপার শপগুলোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও সয়াবিন তেল বিক্রি করছে আগের দরে ১৯২ টাকা লিটার হিসাবে। যুক্তি হিসেবে সবাই বলছে, হ্রাসকৃত দামের বোতল এখনও পৌঁছেনি তাদের হাতে।
গত সোমবার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে কোম্পানি মালিকদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা আর খোলা তেলের দাম লিটারে কমবে ১৭ টাকা। বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয়, নতুন দাম কার্যকর হবে পরদিন থেকে। তবে এই ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে আরও তিনটি দিন। এখনও আগের বর্ধিত দরেই তেল কিনতে হচ্ছে দেশবাসীকে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের এই ধরণের আচরণের বিষয়টি এর আগেও বারবার দেখা গেছে। সবশেষ গত ২৩ আগস্ট যখন লিটার প্রতি দাম ৭ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা আসে, তখন পরের দিন সকাল থেকেই বাড়তি দরে তেল কিনতে হয় মানুষকে। আর নতুন দাম উল্লেখ করে তেলের বোতল ছেয়ে যায় বাজারে।
গতকাল ক্রেতাদেরকে পুরনো তেলের বোতল কিনতে বাধ্য করতে একজোট একটি প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে খোলাবাজার, সুপারশপ-সব জায়গায়। আগের বোতল স্টকে থেকে যাওয়ায় হ্রাসকৃত দামের তেল বিক্রিতে আগ্রহী নন খুচরা বিক্রেতা এমনকি সুপারশপগুলো। তারা বলছেন, পুরাতনগুলো শেষ হলে পরে নতুন তেল আনা হবে। এ ক্ষেত্রে দুর্গাপূজার ছুটিকে অজুহাত হিসেবেও দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা, যদিও এই পূজায় বাজারের কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকেনি। রাজধানীর অধিকাংশ সুপারসপগুলোতে দেখা গেছে, পুরাতন দামের বোতল দিয়েই তেলের কর্নার ভরা। এক লিটার, দুই লিটার এবং পাঁচ লিটারের সবগুলো বোতলই আগের দামের সিলযুক্ত। নতুন দামের কোনো বোতল পাওয়া যায়নি একটি সুপার শপেও।
কর্মকর্তারা বলছেন, খুচরা বাজারে চেয়ে সুপার শপে তাড়াতাড়ি নতুন দামের তেল পাওয়া যাবে। ভোক্তারা নতুন দামের পণ্যটা যেন খোলাবাজারের চেয়ে অন্তত একদিন আগে হলেও পান, সে চেষ্টা চলছে বলেও উল্লেখ করেন একজন।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই মাছ, ডিম ও সবজির দাম চড়া। সেগুলো আগের মতোই রয়েছে। গতকাল রাজধানীর কাপ্তান বাজার, মিরপুরের মুসলিম বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাজারে প্রতি কেজি করলা ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, পটল, ঢেড়স ও শসা ৬০ টাকা করে, টমেটো ১৪০, গাজর ১২০-১৩০, পেঁপে, কাচকলা ও আলু ৩০ টাকা করে এবং বরবটি ৬০-৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন সবজি ব্যবসায়ীরা। বাজারে শীতের সবজি হিসেবে পরিচিত শিমের দাম কমেছে ২০ টাকা। গত সপ্তাহে ১ কেজিতে শিম বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়, যা এ সপ্তাহে নেমেছে ১৪০ টাকায়। এছাড়া ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির মতো শাকের দামও চড়া। প্রতি আঁটি লালশাক ২৫ টাকা, ডাঁটাশাক ২৫ টাকা আর পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৫০-৭০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিমের দাম ১৪৫ টাকায় অপরিবর্তিত থাকলে ৫ দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকা বেড়েছে হাঁসের ডিমের দাম। কাপ্তান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আবু সাঈদ বলেন, ৫ দিন আগেও হাঁসের ডিম ১৭০ টাকা ছিল, সেটা এখন ২১০ টাকা। আমরা প্রতিদিনের মাল প্রতিদিন আনি। আড়ত থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। স্কুলশিক্ষক শামসুল আমিন বলেন, যুদ্ধের কথা বলে সবকিছুর দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববাজারে সব কিছুর দাম কমেছে এখন। কিন্তু বাংলাদেশে একবার যে জিনিসের দাম বাড়ে, সেটা আর কমে না।
প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙাস ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, কৈ ২২০-২৫০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা কেজি এবং চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা কেজিতে।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা। এছাড়া লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা কেজি এবং সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আটাশ চালের কেজি ৬০ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭৫ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫৫ টাকা, স্বর্ণা ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি। মশুর ডাল (মোটা) প্রতি কেজি ১১০ টাকা, চিকন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া পেঁয়াজের কেজি জাত ও মানভেদে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, আদা ১৯০-২০০ টাকা হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও স্টোরের ম্যানেজার আব্দুল হক বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে আদার দাম বাড়ছিল। গত সপ্তাহেও খুচরা বাজারে আদার দাম ছিল ১৭০ টাকা, সেটা এক লাফে ২০ টাকা বেড়েছে এ সপ্তাহে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে গোশতের দাম। গরুর গোশত ৭০০ টাকা আর খাসির গোশত ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিনির দাম বাড়লেও কমেনি তেলের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ